পিতৃভিটা বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায়, বিষাদের বাঁশি বাজছে বাংলাদেশেও
আরশি কথানভেম্বর ১৬, ২০২০
0
প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর,আরশিকথাঃ বাংলাদেশ নিয়ে তার বিশেষ দুর্বলতা ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের । তার কারণ এখানেই তার পিতৃভিটা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সেখানকার ‘কয়া’ নামের একটি গ্রামে বাস করতো সৌমিত্রের পরিবার। তার পিতামহের আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে চলে যান। এ যাত্রার উদ্দেশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য।
সৌমিত্রের বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের উকিল। প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন। এ আসা যাওয়া অনেক ভোগান্তির ছিলো। তাই তিনি পরিবার নিয়ে কলকাতায় পাড়ি দেন। তারপর থেকে কলকাতারই বাসিন্দা সৌমিত্র।
রোববার (১৫ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
৬ অক্টোবর থেকে কলকাতার বেলভিও হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিন দিন পর থেকেই অবস্থার অবনতি হতে থাকে।
বাংলা সিনেমার এই কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে ভারতীয় সিনেমার আঙিনায়। শোক প্রকাশ করছেন ভারতের নানা অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বরা। প্রিয় অভিনেতাকে হারিয়ে ব্যথার সাগরে ভাসছেন সৌমিত্রের ভক্তরা।
এই অভিনেতার মৃত্যুর বেদনার সুর বিষাদের বাঁশি হয়ে বেজেছে এই বাংলাদেশেও। এ বাংলাতেও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন সৌমিত্র। বেশ কয়েকবার এখানে এসেছেনও। কখনো অভিনেতা হয়ে, কখনো কবি-আবৃত্তিকার হয়ে। এখানকার শিল্প-সংস্কৃতিকে আজীবন ভালোবেসেছেন সৌমিত্র। এই দেশ ও দেশের মানুষকে ভেবেছেন সজ্জন।
বড়পর্দায় তার সর্বপ্রথম কাজ বিশ্ব বিখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে নাম ভূমিকায়, যা ১৯৫৯ সালে নির্মিত হয়। এর আগে রেডিওর ঘোষক ছিলেন সৌমিত্র এবং মঞ্চে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেন।
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন শক্তিমান এই অভিনেতা। পরবর্তীকালে মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও নাটক, যাত্রা ও টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। লিখেছেন নাটক-কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনাও করেছেন। আবৃত্তিকার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল।
ছয় দশকের বেশি সময় বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল সৌমিত্র। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে- অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, স্বরলিপি, তিনকন্যা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, বর্ণালী, প্রতিনিধি, চারুলতা, আকাশকুসুম, মনিহার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, দত্তা, জয় বাবা ফেলুনাথ, দেবদাস, গণদেবতা ও হীরক রাজার দেশে।
তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, মাধবী মুখার্জি, তনুজাসহ অনেক কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে।
ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই বছরে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।