স্নিগ্ধ শরৎ। শান্ত-ধীর হাওয়ায় ভেসে যাওয়া সাদা মেঘের মন কেড়ে নেওয়া চলাচল। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মতো আমেরিকাবাসী বাঙালিদের মনেও উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনা -- মা আসছেন! মা'কে আবাহন জানাতে অধীর আগ্রহে তৈরী হচ্ছে আমার শহর আটলান্টাও!
উত্তর আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্য জর্জিয়ার রাজধানী হলো এই আটলান্টা শহর।বছরের এই সময়টায় এখানকার আবহাওয়া অনেকটাই দেশের শরৎকালের মতো।বর্ষাকাল বলে এখানে কোনো ঋতু নেই। বর্ষাকাল বলে এখানে কোনো ঋতু নেই। শুরু হতে থাকে Autumn বা শরতের মাধুর্য। এই ঋতুটির বিদেশী নাম Fall . সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ অফিসিয়ালি গ্রীষ্মের শেষ দিন। তারপরই মৃদু-মন্দ আবহাওয়া, আর গাছের পাতার রঙ পাল্টানোর যুগলবন্দী। রাতারাতি প্রকৃতির নিপুন হাতের তুলিতে সেজে ওঠে চারদিক। লাল, হলুদ, কমলা, আর সবুজের সম্ভারে সেজে ওঠে চারপাশ। স্বর্গ যেন নেমে আসে ধরায়।আবহাওয়া ভেদে এই রঙের মেয়াদের বাড়া-কমা চলতে থাকে। তবে সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত Fall এর মন-ভরানো রঙের বাহার চলতে থাকে এখানকার বিভিন্ন রাজ্যে। প্রকৃতির আপন খেলার এমনি আড়ম্বরের সময়ে মা দুর্গার আসাটা যেন খুব মনে হয়। এই স্বর্গীয় সভায় মা'কেই মানায় --- তা সে আমাদের জীবনদাত্রী মা-ই হোক অথবা জগদ্ধাত্রী, মা দুর্গাই হোক। 'সাজো সাজো' রবের হাওয়ায় ভেসে যাওয়া লহরী বাজতে থাকে তখন আমাদের প্রাণেও।
বিদেশের বুকে গড়া আমাদের অনেক চেষ্টার 'স্বদেশে', নিয়ম-কানুন, দিন-ক্ষণ, ক্যালেন্ডার কিংবা পঞ্জিকার হিসেবে চলে না। সকলের সুবিধার কথা ভেবে উইকেন্ড বা সপ্তাহ শেষের দিনগুলোতে আমাদের করতে হয় সব রকমের পূজো এবং অন্যান্য দেশীয় উদযাপন।
আমাদেরও দুর্গাপূজো তিন দিন ধরেই চলে, যা শুরু হয় কোনো এক শুক্রবারে, আর তা চলে রবিবার রাত পর্যন্ত।প্যান্ডেল সাজানো থেকে শুরু করে পূজোর সমস্ত আয়োজন ---পূজোর ভোগ থেকে শুরু করে কয়েক শ' লোকের দুপুর এবং রাতের খাবারের ব্যবস্থা, সাথে চলে তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ইন্ডিয়া থেকে প্রতি বছর শিল্পীরা আসেন। আমাদের স্থানীয় শিল্পীদেরও অনেক অনুষ্ঠান হয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির দেশে থেকেও, শত ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের চেষ্টা থাকে নিজেদের সংস্কৃতির ছোঁয়ায় পূজোর দিনগুলো কাটানোর। তাই পূজোর নির্ধারিত দিনগুলোর মাস দু'এক আগে থেকেই রিহার্সাল শুরু হয়ে যায় উইকেন্ডগুলোতে। নাচ, গান, নাটকের প্রস্তুতি চলতে থাকে বিভিন্ন দলের মধ্যে।
এই যে আমাদের সঠিকভাবে পূজো পালনের আপ্রাণ চেষ্টা, এর কারণ কিন্তু একটাই -- ওই বিশেষ সময়ে দেশের কথা আমাদের খুব মনে পড়ে। দেশের এই মহোৎসবে সামিল হতে চায় আমাদের মনও। কিন্তু অধিকাংশের পক্ষেই বছরের এই সময়টাতে দেশে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই সেই কোন কালের নিঃশ্বাসে ভরা শিউলি ফুলের গন্ধ বুকে সযত্নে ধরে রেখে আমরা থাকি শরতের অপেক্ষায়, মাদুর্গাকে বিদেশের মাটিতে আবাহনের অপেক্ষায়।
প্রবাসী মনে শরৎ মানেই হাওয়ার দোলায় কাশফুলের নাচন, শরৎ মানে সুদূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের বাদ্যি আর ধূপের গন্ধ, শরৎ মানেই মায়ের আসার অধীর অপেক্ষায় দিন গোনার অবসান।
মা আসছেন, মা !!
জবা চৌধুরী, কলাম লেখিকা
আমেরিকা
১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং
উত্তর আমেরিকার দক্ষিণের রাজ্য জর্জিয়ার রাজধানী হলো এই আটলান্টা শহর।বছরের এই সময়টায় এখানকার আবহাওয়া অনেকটাই দেশের শরৎকালের মতো।বর্ষাকাল বলে এখানে কোনো ঋতু নেই। বর্ষাকাল বলে এখানে কোনো ঋতু নেই। শুরু হতে থাকে Autumn বা শরতের মাধুর্য। এই ঋতুটির বিদেশী নাম Fall . সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ অফিসিয়ালি গ্রীষ্মের শেষ দিন। তারপরই মৃদু-মন্দ আবহাওয়া, আর গাছের পাতার রঙ পাল্টানোর যুগলবন্দী। রাতারাতি প্রকৃতির নিপুন হাতের তুলিতে সেজে ওঠে চারদিক। লাল, হলুদ, কমলা, আর সবুজের সম্ভারে সেজে ওঠে চারপাশ। স্বর্গ যেন নেমে আসে ধরায়।আবহাওয়া ভেদে এই রঙের মেয়াদের বাড়া-কমা চলতে থাকে। তবে সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত Fall এর মন-ভরানো রঙের বাহার চলতে থাকে এখানকার বিভিন্ন রাজ্যে। প্রকৃতির আপন খেলার এমনি আড়ম্বরের সময়ে মা দুর্গার আসাটা যেন খুব মনে হয়। এই স্বর্গীয় সভায় মা'কেই মানায় --- তা সে আমাদের জীবনদাত্রী মা-ই হোক অথবা জগদ্ধাত্রী, মা দুর্গাই হোক। 'সাজো সাজো' রবের হাওয়ায় ভেসে যাওয়া লহরী বাজতে থাকে তখন আমাদের প্রাণেও।
বিদেশের বুকে গড়া আমাদের অনেক চেষ্টার 'স্বদেশে', নিয়ম-কানুন, দিন-ক্ষণ, ক্যালেন্ডার কিংবা পঞ্জিকার হিসেবে চলে না। সকলের সুবিধার কথা ভেবে উইকেন্ড বা সপ্তাহ শেষের দিনগুলোতে আমাদের করতে হয় সব রকমের পূজো এবং অন্যান্য দেশীয় উদযাপন।
আমাদেরও দুর্গাপূজো তিন দিন ধরেই চলে, যা শুরু হয় কোনো এক শুক্রবারে, আর তা চলে রবিবার রাত পর্যন্ত।প্যান্ডেল সাজানো থেকে শুরু করে পূজোর সমস্ত আয়োজন ---পূজোর ভোগ থেকে শুরু করে কয়েক শ' লোকের দুপুর এবং রাতের খাবারের ব্যবস্থা, সাথে চলে তিনদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ইন্ডিয়া থেকে প্রতি বছর শিল্পীরা আসেন। আমাদের স্থানীয় শিল্পীদেরও অনেক অনুষ্ঠান হয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির দেশে থেকেও, শত ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের চেষ্টা থাকে নিজেদের সংস্কৃতির ছোঁয়ায় পূজোর দিনগুলো কাটানোর। তাই পূজোর নির্ধারিত দিনগুলোর মাস দু'এক আগে থেকেই রিহার্সাল শুরু হয়ে যায় উইকেন্ডগুলোতে। নাচ, গান, নাটকের প্রস্তুতি চলতে থাকে বিভিন্ন দলের মধ্যে।
এই যে আমাদের সঠিকভাবে পূজো পালনের আপ্রাণ চেষ্টা, এর কারণ কিন্তু একটাই -- ওই বিশেষ সময়ে দেশের কথা আমাদের খুব মনে পড়ে। দেশের এই মহোৎসবে সামিল হতে চায় আমাদের মনও। কিন্তু অধিকাংশের পক্ষেই বছরের এই সময়টাতে দেশে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই সেই কোন কালের নিঃশ্বাসে ভরা শিউলি ফুলের গন্ধ বুকে সযত্নে ধরে রেখে আমরা থাকি শরতের অপেক্ষায়, মাদুর্গাকে বিদেশের মাটিতে আবাহনের অপেক্ষায়।
প্রবাসী মনে শরৎ মানেই হাওয়ার দোলায় কাশফুলের নাচন, শরৎ মানে সুদূর থেকে ভেসে আসা ঢাকের বাদ্যি আর ধূপের গন্ধ, শরৎ মানেই মায়ের আসার অধীর অপেক্ষায় দিন গোনার অবসান।
মা আসছেন, মা !!
জবা চৌধুরী, কলাম লেখিকা
আমেরিকা
১৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ইং