আরশি কথা, ঢাকা থেকেঃ
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্য জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের কী লাভ হয়েছে। আমাদের শিশুদের যে ক্ষতি হচ্ছিল, তা আলোচনাই হচ্ছিল না। বহু মানুষের স্বপ্ন পূরণ হল। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
মোদি বলেন, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখের ভাই-বোনেদের প্রতি আমার আহ্বান, আসুন, আমরা সবাই মিলে নতুন জম্মু-কাশ্মীর ও নতুন লাদাখ তৈরি করি।
তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে সেই স্বপ্ন পূরণ করব। তাঁদের সবার স্বপ্ন ছিল সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত কাশ্মীর তৈরির। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য অনেকে শহিদ হয়েছেন, অনেকে প্রাণ দিয়েছে। কার্গিলেও অনেকে বলিদান দিয়েছেন, তাঁদেরও সম্মান জানানো হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুঞ্চ জেলার সাধারণ মানুষই ১৯৬৫ সালে অনুপ্রবেশের বিষয়ে খবর দিয়েছিলেন। একে রক্ষা করতে অনেক বীর তাঁদের জীবন দিয়েছে, জীবন বাজি রেখেছে। জম্মু-কাশ্মীর আমাদের দেশের মুকুট। যাঁরা ঈদে ঘরে ফিরতে চান, তাঁদের সব রকম সাহায্য করবে সরকার।
তিনি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের ঈদ পালন করতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা করা হবে। ঈদের প্রাক্কালে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। মুষ্টিমেয় কিছু লোক অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ তোলার সিদ্ধান্তকে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন।
মোদি বলেন, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষকে এটা বোঝাতে চাই যে তাঁদের সুখ-দুঃখ থেকে আমরা আলাদা নই। সংসদে কে ভোট দিয়েছে, কে দেয়নি— এই ঊর্ধ্বে উঠে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। বিরোধীরা যে বক্তব্য রাখছে, তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যাঁরা, তাঁদের ভাবনাকেও আমরা সম্মান করি। গণতন্ত্রে এটাই নিয়ম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাদাখের মানষের ভাল শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা মিলবে। সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে লাদাখ হতে পারে সারা দেশের দিশা। লাদাখ হতে চলেছে সবচেয়ে বড় পর্যটনস্থল। কেন্দ্র সরকার লাদাখের মানুষের কাছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুবিধা পৌঁছে দেবে। এই মহৌষধী কি সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এই গাছ উচ্চ অক্ষাংশে থাকা মানুষের জন্য সঞ্জীবনী সুধার মতো।
মোদি আরো বলেন, লাদাখে এক ধরনের গাছ আবিষ্কার হয়েছে। লাদাখের ভেষজ ঔষধি ও সবজি সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। খেলার দুনিয়ায় কাশ্মীরের যুবকরা দেশের মান আরও বাড়াবে। খেলাধুলোর প্রভূত উন্নতি হবে, সারা বিশ্বে তাঁদের প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের যুব সম্প্রদায় অনেক এগিয়ে যাবে। বলিউড, তেলুগু, তামিল সিনেমার লোকজনকে আর্জি জানাব, ফের উপত্যকায় শুটিংয়ে আসতে। এবার নতুন ব্যবস্থাপনায় সেই অবস্থা আবার ফিরে আসবে। কিন্তু অশান্তির জন্য সেটা বন্ধ ছিল।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, একটা সময় ছিল, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য জম্মু-কাশ্মীরই ছিল অন্যতম গন্তব্য। জম্মু-কাশ্মীরকে সেরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে কাজ করতে হবে। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে আমি আশ্বস্ত করছি, আপনাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার আপনাদের খুব শিগশিরই প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে লাদাখে চালু রাখতে হবে। আমি মানি না, দীর্ঘদিন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে চালু রাখার প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, আমার পুরো বিশ্বাস, এই নতুন ব্যবস্থায় আমরা সবাই মিলে জম্মু-কাশ্মীরকে সন্ত্রাসমুক্ত করব। জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে একটা কথা বলতে চাই, আপনাদের দ্বারাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। এটা কি চলতে পারে? কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে তাঁরা কোনও অধিকার, কোনও সুবিধা পেতেন না।
মোদি আরো বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে ভারতে যাঁরা এসেছিলেন, ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তাঁদের সব অধিকার রয়েছে। সড়ক বা রেললাইনের কাজ হোক— সব কাজে গতি আসবে। এছাড়া দুর্নীতি দমন বিভাগ তৈরি হবে। আইআইটি, আইআইএম, এইমস— এই সব প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে। যেসব পরিকল্পনা শুধুমাত্র খাতায় কলমে ছিল, সেটাই এখন মাটিতে নেমে কাজ হবে। এই সময়েই রাজ্যে উন্নয়নের কাজকর্মে গতি আসতে শুরু করে।
তিনি বলেন, যখনই রাজ্যপালের শাসন জারি হয়, তখনই তা কেন্দ্রের অধীনে আসে। ৩৭০ ধারা উঠিয়ে জম্মু-কাশ্মীরকে সরাসরি কেন্দ্রের অধীনে নেওয়া হল। স্থানীয় যুবকদের চাকরির জন্য সরকার উদ্যোগ নেবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকেও এখানকার যুবকদের চাকরির বন্দোবস্ত করার জন্য বলা হবে। শূন্য পদগুলিতে খুব শীঘ্রই নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশকর্মীরা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, সেগুলি পূরণ করা হবে। অন্যান্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মতো বহু সুবিধা এখানকার মানুষ পাবেন। নতুন ব্যবস্থাপনায় জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ বহু সুবিধা পাবেন।
নরেন্দ্র মোদি আরো বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারায় জম্মু-কাশ্মীর এই অবস্থা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসবেই। সংরক্ষণের নিয়ম জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকরী হত না, সেখানকার মানুষ এর সুবিধা পেতেন না। দেড় কোটির মতো মানুষ সেই কল্যাণ, সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থেকে যেত। কিন্তু এই আইন দেশের একটি অংশে কার্যকরীই হতো না। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে আইন তৈরি হয়, তা দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই তৈরি হয়। আইন তৈরির সময় সংসদে অনেক আলোচনা, বিতর্ক হয়।
জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোনও সরকার, কোনও দলের সরকার বা জোটের সরকার এই কাজ করেনি। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষকে অভিনন্দন। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের উন্নয়ন হয়নি। ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ ধারা জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ, পরিবারবাদ ছাড়া আর কিছু হয়নি। ৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্য জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের কী লাভ হয়েছে। আমাদের শিশুদের যে ক্ষতি হচ্ছিল, তা আলোচনাই হচ্ছিল না। বহু মানুষের স্বপ্ন পূরণ হল। জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষ দীর্ঘদিন যে সমস্যার মধ্যে ছিলেন, তা শেষ হয়েছে।
৮ই আগস্ট ২০১৯