Type Here to Get Search Results !

"আগরতলা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব হলে তা হবে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত"ঃ ড. মসিউর রহমান

আরশিকথা'র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড.মসিউর রহমান জানালেন - "আগরতলা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিকঅংশীদারিত্ব হলে তা হবে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত"

আগরতলা এয়ারপোর্ট সম্প্রসারণ করতে হলে বাংলাদেশের জায়গা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে তা হতে হবে আর্ন্তজাতিক মালিকানায়। যদিও বিষয়টি এখনও আমাদের আলোচনায় আসেনি। আলোচনায় আসলে ইতিবাচকভাবে নেওয়া হবে।  কেননা, ইতিমধ্যে তারা বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। এখন হয়তো আমরা ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে ৪০ শতাংশ আয় দাবি করব। তবে এক্ষেত্রে দুই দেশের অনুমোদন নিয়েই করা হবে। পাশাপাশি তা আন্তর্জাতিকভাবেই হ্যান্ডেলিং করা হবে। শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাধ্যমে।  এটি উভয় দেশের সম্মতিতে হলে তা হবে অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। 


গত ২৩ অক্টোবর ভারতের আসাম রাজ্যের রাজধানী গৌহাটির হোটেল রেডিসন ব্লু-তে বাংলাদেদেশর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান আরশি কথার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার আবু আলী,আরশিকথা,বাংলাদেশ:

 আরশি কথা: ভারতের সঙ্গে আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এটি কিভাবে কমিয়ে আনা যায়?
ড. মসিউর রহমান: গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮.৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ১.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারত সাফটার আওতায় বাংলাদেশকে বেশির ভাগ পণ্যে ডিউটি ফ্রি মার্কেট সুবিধা প্রদান করছে। কিন্তু ভারত কর্তৃক আরোপিত টেরিফ ও নন-টেরিফ রেয়িার, খাদ্য পণ্যের টেষ্টিং প্রক্রিয়া, ন্যুনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ, এসকল কারনে বাংলাদেশ প্রত্যাশা মোতাবেক পণ্য ভারতে রপ্তানি করতে পাচ্ছে না। তবে  সমস্যাগুলো ইতোমধ্যে চিহ্যিত করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরপূর্ব ভারতের জন্য এ সকল আইন, নিয়ম-কানুন শিথিল করা একান্ত প্রয়োজন। এছাড়া ভারতের সঙ্গে যদি নৌরুট চালু হয় তাতে পণ্য পরিবহণে খরচ কমে আসবে। 

 আরশি কথা: সেভেন সিস্টারে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুসারে রপ্তানি বাড়ছে না। এ ব্যাপারে কি ধরণের উদ্যোগ প্রয়োজন।
ড. মসিউর রহমান: সেভেন সিস্টারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে একটি সমস্যা রয়েছে। তাহলো উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বন্দরে টেস্টিং ল্যাব নেই। ফলে এসব অঞ্চলে ভোগ্য পণ্য রপ্তানি করতে কলকতা হয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হয়। ফলে পরিবহণ খরচ বহুগুণে বেড়ে যায়। আশা করছি এ অঞ্চলের বন্দরে টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করলে বিদ্যমান সমস্যা কেটে যাবে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য উভয় দেশকে এগিয়ে আসতে হবে। 
বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অপরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা সাউথ এশিয়ায় বাণিজ্য বৃদ্ধির বাধা। সাসেক পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে বিবিআইএন মটর ভেইকেল এগ্রিমেন্ট, ইনল্যোন্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড প্রটোকলমত চুক্তি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের চট্রগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে এসওপি স্বাক্ষরিত হয়েছে।  কিন্তু এখনো সন্তোষ জনক সুফল অর্জিত হয়নি। এখন সময় এসেছে বর্ণিত উদ্যোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে সুফল অর্জন করার। এটি করতে পারলে আসাম হতে পারে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাণিজ্যিক হাব। ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বাংলাদেশের রপ্তানির বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে।  এ অঞ্চল রয়েছে ৮ কোটি মানুষের বাস। ভারতের সেভেন সিস্টারে বাংলাদেশি খাদ্যপণ্য, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, ওষুধ, প্লাস্টিকপণ্য, মাছ, ব্যাটারি, টিস্যুপেপার, সাবান, পিভিসি পাইপ ইত্যাদিরর  ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে খাদ্য পণ্য রপ্তানি হয় কলকাতা ঘুরে। এতে পরিবহন খরচ অনেক বেশি হয়। ফলে এ অঞ্চলে পুরোপুরি নৌরুট চালু এবং স্থলবন্দরগুলোয় টেস্টিং ল্যাব স্থাপন করতে পারলে উভয় দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় আসীন হবে। পাশাপাশি সরাসরি বাংলাদেশি পণ্য আসাম যাবে। সেখান থেকে সেভেন সিস্টারের বাকি রাজ্যে পৌঁছে যাবে। এতে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজিক্য সম্পর্ক বাড়বে। বিশেষ করে আসাম থেকে কয়লা, পাথর, ক্লিংকার সরাসরি চলে আসবে বাংলাদেশে। অন্যদিকে খাদ্যপণ্য, তৈরি পোশাক, সিমেন্ট, ওষুধ, প্লাস্টিকপণ্য, মাছ, ব্যাটারি, টিস্যুপেপার, সাবান, পিভিসি পাইপ ইত্যাদি চলে যাবে আসামে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়বে বাকি রাজ্যগুলোতে। 


 আরশি কথা: বর্ডার হাটে সীমান্ত এলাকারবাসীরা লেনদেন করতে পারে। আরও ৬টি হাট নতুন করে স্থাপনের কথা। 
ড. মসিউর রহমান: মিজোরাম ও ত্রিপুরায় বর্ডার হাটের চাহিদা রয়েছে।  বর্ডার হাট বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের তরফ থেকে কোনও বাধা নেই। কিন্তু হাট স্থাপনে অবকাঠামো নির্মাণ, হাটের জায়গা অধিগ্রহণে সময় এবং অর্থ ব্যয় হয়। এজন্য হাটের সংখ্যা বাড়াতে একটু সময় লাগছে। বর্ডার হাটের ব্যাপারে আপত্তি নেই। 

 আরশি কথা: বাংলাদেশের কঠোর  অবস্থানের কারণে সেভেন সিস্টারে বর্তশানে শান্তি বিরাজ করছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে কী?
ড. মসিউর রহমান: বাংলাদেশের প্রধানমন্তী বলেছেন ‘বাংলাদেশের ভূখন্ড ব্যবহার করে অন্য দেশে কোন ধরণের অরাজকতা তৈরি কবতে দেব না’। এটি প্রধানমন্ত্রীর নিজে থেকেই করেছেন। এটি চুক্তির অংশ নয়। অন্যদেশে অরাজকতা তৈরি করতে না দেওয়ার ফলে দেশও উপকৃত হয়েছে। দেশে বর্তমানে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এখন আর দেশব্যাপী একযোগে বোম হামলার  ঘটনা ঘটে না।

 ২৬শে অক্টোবর ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.