Type Here to Get Search Results !

ছোট গল্প " নম্বর " ......সুস্মিতা ধর ,ত্রিপুরা

# সাহিত্য-সংস্কৃতি বিভাগ,আরশিথা #

রাতে ভাত খাওয়ার পর সিগারেটে সুখটান দেয়া তমালের বহুদিনের  অভ্যেস। এই সময়টাতে  ও খুব ফুরফুরে  থাকে। বিরোধী দলের দুলালকে কিভাবে আর কতরকম ভাবে টাইট দেয়া যায় তার ভালো ভালো ফন্দিগুলো তখনই ওর মাথায়  খেলে। গত পঁচিশটা বছর ধরে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছে তমাল। এবার তাই সুযোগ পেয়েই দুলালকে বাড়ি ছাড়া করেছে। এখন তক্কে তক্কে আছে দুলালের পাঁচ কানির জমিটা হাতানোর।সোজাভাবে এলে ভালো, নইলে কি করতে হবে তার প্ল্যানও রেডি। গত দুই বছরে কোথা থেকে কোথায় পৌঁচেছে ভাবতে গিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যায় তমাল। আরও তো দুই - আড়াই বছর বাকি আছে। এরমধ্যেই সব গুছিয়ে নিতে হবে। ভাবতে ভাবতে সুখের আমেজে ঝিমুনি  এসে গিয়েছিল। ফোনের রিংটোনে  ঝিমুনিটা কেটে গেল। অচেনা নম্বর দেখে ধরবে কি ধরবে না করতে করতে ধরেই ফেলল। 

একটা আতংকিত মহিলা কন্ঠ আছড়ে পড়ল ফোনে --- " দাদা আমাকে বাঁচান, প্লিজ "

----- "কে আপনি?  আমার নম্বর কোথা থেকে  পেলেন? "

---- "আপনি  আমাকে চিনবেন না।  আপনার নম্বর আমি পাইনি। বিপদে পড়ে এমনিতেই টিপতে টিপতে লেগে গেছে।  প্লিজ দাদা তাড়াতাড়ি আসুন। 

--- "কি হয়েছে আপনার? "

---- " কয়েকটা ছেলে পিছু নিয়েছে -- বিদ্যাসাগর সেতুর কাছে -- প্লিজ প্লিজ দাদা তাড়াতাড়ি আসুন ---"

বলতে বলতেই  ফোনটা কেটে গেল।

তমাল আবার ফোন করল। সুইচ অফ। 

----"বিদ্যাসাগর সেতু  -- তার মানে  তো আমার বাড়ির কাছেই -- ভালই হলো একটা ভালো কাজ করে হিরো হওয়া যাবে -- বিপুল, বিকাশ ওদের ডেকে নেই -- এখন তো আমার একটা ফোন পেলেই হল-- ছেলেগুলো  সব ঝাঁপিয়ে পড়ে  -- আর পড়বে নাই বা কেন?  আমি হলাম উঠতি নেতা -- আজ হোক বা কাল এম.এল. আর তারপর মন্ত্রী হওয়াটা তো শুধু  সময়ের ব্যাপার ----" মনে মনে কথাগুলো  ভাবতে ভাবতেই তমাল শার্টটা গায়ে দিয়ে বের হওয়ার জন্য তৈরি  হল । বিপুল, বিকাশদের ফোন করতে গিয়েই হঠাৎ কেমন খটকা লাগে তমালের। 

    -----" দুলালের কোনো কারসাজি নয় তো এটা?  মেয়েঘটিত কেসে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারটা ধ্বংস করার মতলব নয় তো?  ঠিক  ঠিক  তাই - ই হবে।  তা না হলে  অপরিচিত  কোনো মেয়ে ফোন করে আমার কাছেই বা সাহায্য চাইবে কেন?  দুলালই নিশ্চয় মেয়েটিকে আমার ফোন নম্বর দিয়েছে। তাই হবে --- এটা দুলালেরই কারসাজি। আর তাছাড়া আগ বাড়িয়ে উটকো ঝামেলায় জড়ানোর দরকারই বা কি ? ---"  শার্ট খুলে ঘরে গিয়ে দামী বোতলটা নিয়ে বসে তমাল। ঘুম এখন আসবে না। মেয়েটার ফোনটায় নেশা টেশা সব কেটে গেছে। এখন আরও কয়েক পেগ ঢালতে হবে।  গত পরশুই বিলেতি  দামী বোতলটা প্রেজেন্ট  পেল। এই হল ক্ষমতার গুণ। বাড়ি বয়ে নিজে নিজেই চলে আসে সব উপঢৌকন।  

                       ঘুম ভাঙতে আজ বেশ দেরীই হয়ে গেল তমালের। দেওয়াল ঘড়িটায় চোখ রাখতেই চোখ কপালে। বেলা সাড়ে বারটা বাজে। মাথাটা ভার হয়ে আছে। কাল রাতে  একটু একটু করে খেতে খেতে বোতলটা শেষ  করে প্রায় চারটের সময় বিছানায়  গিয়েছিল। সারাদিনের কাজগুলো মনে মনে ঝালিয়ে নিতে নিতে বাথরুমে ঢুকল তমাল। গত পঁচিশ  বছর  যারা কথায় কথায়  মিছিল নিয়ে বের হত -- এটা চাই -- ওটা চাই করে স্লোগান দিত  তাদের তালিকাটা রেডিই আছে। এর মাঝে বেশ কয়েকজন  বেপাত্তা।  বাকী  যারা আছে তাদের মধ্যে  বেশিরভাগই ঘরে ঢুকে  গেছে। তবে এখনও কিছু কিছু আছে যারা  মাঝে মাঝেই নাড়াচাড়া দিতে চায়। ওদের এবার ধরতে হবে। আজ এই নিয়েই স্থানীয় অফিসে প্ল্যান ঠিক হবে। দ্রুত স্নান সেরে তৈরি  হয়ে নিচ্ছিল তমাল। এমন সময়ই ওর বাড়ির সামবে এসে দাঁড়াল একটি পুলিশ ভ্যান। 

              আউটপোস্টের ইনচার্জ  মনোতোষ দাস।তমালের নির্দেশ  অনুযায়ী  কাজ করতে একপায়ে খাঁড়া।  কাকে ধোলাই দিতে হবে, কার নামে কেস সাজাতে হবে, একটু বলে দিলেই হল --  এমনভাবে কাজগুলো করে যে মাঝে মাঝে তমাল নিজেই অবাক হয়ে যায়  --- বেটা সরকারের চাকরি করে না ওর চাকরি করে? অবশ্য করবে না ই বা কেন?  মাসে মাসে তমালের নির্দেশে ভালো প্রসাদই তো যায়।  তবে এটা ঠিক উটকো কেস সাজিয়ে এমন সব জায়গায় আড়ং ধোলাই দেয় যে  -- ছেলেগুলোর বাবা হওয়ার স্বপ্ন চিরদিনের জন্য ভেঙে যায়। খুব কাজের লোক।

---- "বলুন মনোতোষ বাবু ,  কোনো সমস্যা ? "

-----" না স্যার তেমন কিছু নয় --  বিদ্যাসাগর সেতুর  নীচে একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে।গণধর্ষণের পর নৃশংস  ভাবে খুন করা হয়েছে তাকে। "

-----" দেখুন মনেতোষবাবু, আপনি তো ভালোভাবেই  জানেন আমার ছেলেরা অন্য সব অপরাধ  করতে পারে, কিন্তু  নারীঘটিত অপরাধে তারা কোনোদিন জড়াবে না। তাদের বারবার নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। "

----" না স্যার, কারা এ ব্যাপারে জড়িত তা  এখনও বোঝা যায়নি। তবে মনে হচ্ছে ----

-----" মনে হওয়ার কোনো কিছু নেই মনোতোষবাবু। ধরুন ওই শয়তানগুলোকে। প্রয়োজনে আমি সাহায্য  করব। আর হ্যাঁ, দেখবেন ওই ধর্ষকদের যেন কড়া শাস্তি হয় --- ঠিক আছে আপনি এখন আসুন মনোতোষবাবু, আমাকে একটা জরুরী মিটিং এ যেতে হবে।"

----- " একটু দাঁড়ান তমালবাবু। আসল কথাটাই তো বলা হয়নি  --- যার জন্য আসা। মেয়েটির মেবাইল থেকে লাস্ট যে ফোনটি করা হয়েছিল সেটি স্যার আপনার নম্বর ---"


সুস্মিতা ধর ,ত্রিপুরা


১২ই নভেম্বর ২০২০