Type Here to Get Search Results !

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকতে পেরে গর্বিত ভারত, বললেন নরেন্দ্র মোদি

প্রভাষ চৌধুরী, ব্যুরো এডিটর, ঢাকা, আরশিকথাঃ বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন দুই দেশের সম্পর্কের নতুন মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো মৈত্রী পাইপলাইন। শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে ঢাকা ও দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ পাইপলাইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। একই মত প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকতে পেরে গর্বিত ভারত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ উদ্বোধনকে দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার একটি মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ পাইপলাইন। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা হলো। মানুষের উন্নয়নে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে একসঙ্গে কাজ করবে প্রতিবেশী দেশ দুটি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন।’ পাইপলাইনটি উদ্বোধনের পর উভয় প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি, পারস্পরিক সুবিধার জন্য দেশ দুটির মধ্যে কানেকটিভিটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও তারা জোর দেন। শেখ হাসিনা বলেন, এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাদের দুই দেশের এ বন্ধুত্ব অটুট থাকুক সেটাই আমি চাই। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই, যাতে ভারতের সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আমরা একসাথে কাজ করে যেতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই আমাদের দেশের এ উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক। সেই সঙ্গে আমাদের মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর এবং সিলেট, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করেছি। এগুলো ভারতের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিচ্ছি যাতে এই বন্দরগুলো ব্যবহারে ভারতের কোনো অসুবিধা না হয়। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজ হবে এবং দুই দেশের মানুষই লাভবান হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরা সেখানে এসে বিনিয়োগ করুক। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হবে। আগামী দিনেও ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মতো আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে উদযাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে একইসঙ্গে কাজ করবে। পাইপলাইনটি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি উভয় দেশের প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিশেষ করে ভারতের যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে এই পাইলাইন নির্মাণ করে দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, এ ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালুর ফলে বাংলাদেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি তখন এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় এবং সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করবে। প্রধানমন্ত্রী পাইপলাইন নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য ভারত সরকার এবং আসামের মুখ্যমন্ত্রীসহ আসামের জনগণের প্রতিও ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে ভারত থেকে বছরে ৬০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হতো। পাইপলাইন নির্মাণের ফলে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি করা সম্ভব হবে। এরমাধ্যমে আসামের একটি ভালো বাজার বাংলাদেশে সৃষ্টি হল, যেখানে এই ডিজেল মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে এবং সেখানে আসামবাসীও লাভবান হবে। তিনি বলেন, পাবর্তীপুরে বর্তমানে আমাদের স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে, আমরা এ স্টোরেজ ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনী হিসেবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আত্মত্যাগের কথাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকে ভারতে আশ্রয় প্রদান এবং ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানাকে ভারত সরকারের আশ্রয় প্রদানের কথাও উল্লেখ করেন। বলেন তিনি ‘আমরা কৃতজ্ঞ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার এবং জনগণ অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানেই ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।’ তিনি বলেন, ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু ভাতৃপ্রতীম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ এবং ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক সেতুবন্ধন আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে। উভয় দেশের সরকার বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রের অনেক সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দান করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যে সমস্ত সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করা হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে-গঙ্গার পানি চুক্তি, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক ও রেল যোগাযোগগুলো একে একে উন্মুক্ত করা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, উন্নয়নে একযোগে কাজ করে যাওয়া এবং ভারতের কাছ থেকে উন্নয়নে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রাপ্তি, সাংস্কৃতি সহযোগিতার জোরদারকরণ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রভৃতি। দুই দেশের মানুষের পরস্পরিক কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ইতোমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভারতের থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি আর বিদ্যুৎ খাতে উপআঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপাক্ষিক আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। আর এই সহযোগিতার ফলে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গভীর হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সমুদ্র সীমানার পাশাপাশি স্থল সীমানা নিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করতে পারায় ভারতের সকল রাজনৈতিক নেতা এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি ভার্চুয়ালি এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে ভারত-বাংলাদেশ এ মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন। ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩১ দশমিক ৫ কি.মি ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রফতানি করবে ভারত। ভারতের শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারী থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর ডিপোতে ডিজেল আমদানি করা হবে। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে প্রায় ১২৫ এবং ভারতের অংশে প্রায় ৫ কিলোমিটার। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি)-এর বার্ষিক পরিবহনের ক্ষমতা ১ (এক) মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমএমটিপিএ)।


আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ

১৯ মার্চ ২০২৩
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.