বিগত বছরের মতো এ বারও যথাযোগ্য মর্যাদায় আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন অফিসে বিজয় দিবস পালন করা হয়। এদিন বিজয় দিবস উপলক্ষে আগরতলা স্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই উপলক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রথম সচিব মোঃ আল আমিন সহ অন্যান্য সহকারী হাইকমিশনে কর্মরত আধিকারিকরাও । প্রথম সচিব মোঃ আল আমিন এদিন ভারতবাসী এবং ত্রিপুরা বাসিকেও শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। পাশাপাশি বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় একটি আলোচনা চক্রও। যেখানে বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে মহান মুক্তি যুদ্ধের গৌরবময় প্রসঙ্গও।
প্রসঙ্গত ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায় যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। যার লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জনগণের মুক্তি আন্দোলন দমন করা। বিশেষ করে বাঙ্গালীদের উপর উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস ছিল তাদের। সেই সময় পাকিস্তানি বাহিনী লাখ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে। তাদের উপর সে সময় অকথ্য নির্যাতন করেছিল পাকিস্তানি হানাদাররা। প্রাণ বাঁচাতে সেই সময় অনেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং বিশেষ করে ত্রিপুরায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশের জনগণের ও সেনাদের সহায়তায় তিন ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। নয় মাস ধরে চলা সেই যুদ্ধ সমাপ্ত হয় ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের মাধ্যমে। এই নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। বিশ্লেষকদের মতে এত বিশাল সংখ্যক সেনা বাহিনীর আত্মসমর্পণ সাড়া বিশ্বে নজির বিহীন ঘটনা। এর ফলে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এই গৌরবময় ইতিহাস আজও সে দেশের জনগণ এবং সাড়া বিশ্ববাসী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবিস্মরণীয় অবদানকেও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। যার সুযোগ্য নেতৃত্বে এবং ভারতের সহায়তায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান চিরতরে অস্তাচলে গিয়ে নবরূপে উদ্ভাসিত হয়েছিল বর্তমান স্বাধিন বাংলাদেশের। উর্দু ভাষার জায়গায় সেদিন সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রত্যেক বাঙালীর মাতৃ ভাষা বাংলা ভাষার। এই সোনালী দিনগুলি আজও প্রত্যেকটি বাঙ্গালি জাতির হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। আর এই গৌরব গাঁথার সাথে রয়েছে হাজার হাজার নর নারি বীর সেনানীদের আত্ম বলিদান। তাদের এই আত্ম বলিদানকেও এদিন কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করা হয় উভয় দেশে। এদিন যেমনটা করা হয়েছে আগরতলার এলবার্ট এক্কা পার্কেও। বিজয় দিবস উপলক্ষে ত্রিপুরার রাজ্যপাল এবং শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রী শান্তনা চাকমা ও সেনা আধিকারিকরা এদিন বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন।
পাশাপাশি এই বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে এদিন আগরতলার সহকারী বাংলাদেশ হাই কমিশনে অনারম্ভর ভাবে হয় একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা চক্র। এতে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবী মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুণী জনরা। তাদের আলোচনায় এদিন উঠে আসে মহান মুক্তি যুদ্ধের সে দিনগুলির গৌরব গাঁথা। আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তথা বিশিষ্ট সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্যের আলোচনায় এদিন উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে ত্রিপুরার গুরুত্ব।এই আলোচনায় ডাঃ অনুপ সাহার কণ্ঠে উঠে আসে সেই তাজা স্মৃতি । মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যান্যদের সাথে মিলে সে দিন তিনিও চাঁদা তুলেছিলেন। তাঁর সুপ্ত মনের সেই অভিপ্রায়ও উঠে আসে এই আলোচনায়। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অমিত ভৌমিক মনে করেন মুক্তি যুদ্ধের চেতনাকে ছাড়া উভয় দেশের আত্মিক সম্পর্ক ভাবাই কঠিন। এদিন বিশিষ্ট শিক্ষবিদ ডঃ মুস্তফা কামাল মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকায় উভয় দেশের মুল ভিত্তি গনতন্ত্রের পরাকাষ্ঠায় জনগণের মতবাদের গুরুত্বকে তাঁর বক্তব্যে এদিন তুলে ধরেন।
এভাবেই এদিন বক্তাদের আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে বিজয় দিবসের তাৎপর্য যে কতটা গভীরে নিহিত রয়েছে , আর তা এপার হউক কিংবা ওপার ই হউক না কেন তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে !
আরশিকথা সংবাদ
১৬ই ডিসেম্বর ২০১৬