Utensils বলতে তেমন কিছু না, মূলতঃ একটা আইটেম ই কেনার ছিল। সেটা হল জল খাওয়ার জন্য কাঁচের গ্লাস। দু তিন রকমের কাচের গ্লাস ভাঙতে ভাঙতে এখন হরেক মালের মত অবস্থা। চারজন লোক আসলে তিনরকম গ্লাসে জল দিতে হয় এমন অবস্থা হয়ে এসেছে প্রায়। শপিংমল গুলো তে ভ্যারাইটি পাওয়া যায় ভালো। বিশেষ করে বিশালে। কিন্তু বিশাল এ গিয়ে দেখি এন্ট্রি ক্লোজড্ লেখা। আবার ফিরে এসেছি সেই জায়গায় যে জায়গাটা এভয়েড করি কারণ হল ভীরের ধাক্কাধাক্কি। এই জায়গাটা ছাড়া সমস্ত অন্য দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। এই জায়গাটার বিশেষ গুণ তো রয়েছেই কিন্তু ভিড়ভাট্টায় ধাক্কাধাক্কিতে চৈত্র সেলে আমাদের যাওয়াটা অপছন্দ। জায়গাটা হল শকুন্তলা রোড আর হকার্স কর্নার। পোস্ট অফিস চৌমুনী ক্রস করে হকার্স এর কাছাকাছি জায়গায় তো ভেহিকেল নিয়ে যাওয়ার কোন উপায়ই নেই। শর্টকাট চিন্তা করে ঢুকে গেলাম মধ্যপাড়া চলমান সংঘের গলি দিয়ে। যাক এই জায়গাটা ফাঁকা ছিল বেরিয়ে গেছি পেছনে ওইদিকে ওরিয়েন্টের কাছাকাছি সাইকেলের দোকানের ওখানে বাইক পার্কিং করলাম। উপলক্ষে অনেকগুলো অস্থায়ী দোকান দিয়েছে রাস্তার পাশে ঠিক বইয়ের দোকান গুলোর নীচটাতে, যেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। একটা দোকান বেশ বড় প্রথমেই নজরে পড়ল সেখানে ফ্লাওয়ার পট জাতীয় কিছু। এগুলো আমার বরাবরই অ্যাট্রাকশন। ইদানিং একটা লো হাইট বা ফ্ল্যাট ভেস টাইপ পট দরকার যেটাতে আমি ব্রাজিলিয়ান ট্রি রাখবো। সেটা আপাতত কাঁচের যে ট্রেতে আছে সেখানে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। গিন্নি কাল ভালো করে দেখে আমাকে বলল যে এটার পটটা চেঞ্জ করে দাও, কারণ গাছটা বড় হচ্ছে ডালপালা মেলছে পুষ্টির অভাবে না মরে যায়। গাছের সম্পর্কে ওর এতটা আগ্রহ আগে ছিল না, গাছ লাগানো জল দাও ব্যাস এতটুকুই। ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ছে ভালই লাগলো সকাল সকাল। তো দোকানটার দিকে তাকাতে তাকাতে যাচ্ছি হঠাৎ একটা পোর্সেলিনের দারুন প্রিন্ট আমাকে টেনে নিয়ে গেল। চাইনিজ প্রিন্ট হলেও অনেকটা আরাবিয়ান লুক আছে। খুব সুন্দর একটা ফ্ল্যাট পট। ছয় ইঞ্চির সাইজ, গাছটার যা গ্রোথ হয়েছে তাতে একদম মানানসই হয়ে যাবে। আর টবের প্রতি বরাবরই আমার আকর্ষণ। জায়গা কম তবুও ভ্যারাইটি টব এনে জড়ো করেছি আমার ছোট্ট ব্যালকনিতে। খস করে একটা পলিথিনের ব্যাগে করে আমাকে দিয়ে দিল প্যাকেট ট্যাকেটের কোন বালাই নেই। আমি বললাম আরে এটাকে একটু কাগজ দিয়ে অন্ততঃ মুড়ে দাও, কোথাও ধাক্কা টাক্কা লাগলে ভেঙে যাবে তো। বলল কাগজই তো নাই দাদা। আমি বললাম পেপার হবে, পেপারে মুড়ে দাও তাহলে। বলল না অখন তো পত্রিকা পাওয়া যায় না। আমি বললাম দাদা দেখুন না এভাবে খোলা নিয়ে যাব কোথাও ধাক্কা লাগলে চল্টা উঠে যাবে। যাক্ শেষ পর্যন্ত দু টুকরো পত্রিকা পাওয়া গেল। পটটার আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকানো বোধহয় বন্ধ হল। পত্রিকা দু টুকরো দিয়ে মুড়ে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার করে উনি আমার হাতে ঝুলতে ঝুলতে চললেন গ্লাসের বাজারে। এক দোকান,দু দোকান, তিন দোকান,চার দোকান, নেই গ্লাস নেই, বাজারের গ্লাস আনার মত নয়। তবে চায়ের কাপ নজরে পড়ে গেছে। মাঝে মাঝে বেশি চা খাওয়ার বাতিক আছে কারো কারো তাই লার্জ কাপ চাই। অনেকটা কফি মগের মতো। নিয়ে নিলাম। হঠাৎ নজরে পড়লো Bonecell ceramic matte brown কাপের দিকে। এই কাপগুলো সাধারণতঃ বাইরে পাওয়া যায় না খুব সিলেক্টেড দোকান ছাড়া। এটা হল সেই কাপপ্লেট গুলো যেগুলোতে করে সাধারণত হোটেলে বা রেস্টুরেন্টের সার্ভ করা হয় চা বা কফি। অনেকটা হালকা ব্রাউন বডির মধ্যে বার্নিশ করার মত কিছুটা আঁশ টানা থাকে। কয়েকটা নিয়ে নিলাম। এবার আসি গ্লাসের কথায়। শেষ পর্যন্ত গ্লাস খুঁজে পেলাম V2 তে। আগেরবারের গ্লাসগুলো ছিল বেশ লম্বা। হাফ পোর্শনের নিচে লম্বা লম্বা খাঁজ কাটা, যদিও সেটা বিশাল থেকেই নিয়েছিলাম। ইদানিং তো মোটা মোটা গ্লাসের চল হয়েছে দেখলাম। আসলে ওগুলো হুইস্কি গ্লাস। জল দিতে শরম লাগে। হিঃ হিঃ হিঃ। কিন্তু একটা প্রবাদ আছে অমুকে না বোঝে অমুকের মূল্য। সব জায়গাতে এখন সেই হুইস্কি গ্লাসের প্রচলন। এমনকি ভক্তির জায়গাতে মন্দিরেও। আশ্চর্য দিনকাল। সেই সুন্দর মার্জিত জলের গ্লাস পেলাম না। বাধ্য হয়ে হুইস্কির গ্লাস কিনে এনেছি। এবার পান করো পৃথিবী তোমার প্রাণপ্রিয় উদক।
সরু গ্লাস পাওয়া যায় কিন্তু ওটা আমার পছন্দ নয়। এর পেছনে রয়েছে একটা পরিষ্কারের ব্যাখ্যা। সরু গ্লাসের ভেতরটা হাত ঢুকিয়ে পরিষ্কার করা যায় না তাই আমার একেবারেই অপছন্দ। অনেক বাড়িতেই দেখেছি গ্লাসের বাইরেটা পরিষ্কার অথচ ভেতরটা যতটুকু হাত পৌঁছেছে ততটুকু পরিষ্কার একদম নিচে ময়লা। বহুদিন ধরে দেখতে দেখতে অভিজ্ঞতায় ছাপ বসে গেছে। ওরকম গ্লাস দেখলে আমি জলও খাই না কাউকে পরিবেশন করতেও মানা করি। অনেক বছর আগের কথা, একবার এক রোগীর বাড়িতে রোগী দেখার পর চা খাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করেছে। আমি খাব না কিন্তু ওরাও ছাড়বে না। যাহোক চা খেলাম, গ্রামের বাড়ি, সামর্থ্য চেক করে দেখিনি তবে আতিথেয়তায় উনারা খুবই আন্তরিক। তাই অনুরোধ উপেক্ষা করতে না পেরে চা খেলাম। হায়রে ভগবান চা শেষ করে নিচে দেখি কালো কালো কালোজিরার মত কিছু। নিচে অল্প কিছু চা থেকে যায় তো। ডানে বামে ঘুরিয়ে দেখি ওগুলো তেলাপোকার পটি। আমার তখন অন্নপ্রাশনের ভাত বেরিয়ে যাবার অবস্থা। আমি বললাম এগুলো কি আপনারা কাপ ধুয়ে দেন না। ওরা বলল "না এইমাত্র তো মিটকেস থাইক্যা বাইর করসি"। বোঝো অবস্থা মিটকেস থেকে বের করলে কাপ ধোয়া যায় না। মানুষের ব্যবহারে কোন কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করছি বুঝতে পারি না মাঝে মাঝে।
ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস
অতিথি কলাম
১৩ই এপ্রিল ২০২৫