আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    আমার কথা" .........সুদূর আরব্য রজনীর দেশ থেকে আরশিকথায় লিখলেন মৌসুমী ভট্টাচার্য

    আরশি কথা
    ষাটের দশকে এক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম আগরতলার তৎকালীন ভি.এম হাসপাতালে। লেম্বুছড়ার প্রাকৃতিক পরিবেশে ,কমলপুরে একান্নবর্তী পরিবারে শৈশব কাটে ।নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতনে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পঠন-পাঠন। এম.বি.বি কলেজে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করার পরপরই বিয়ে হয়ে যায়। তখনো ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হয়নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শাখা ছিল আগরতলায় ছিল,তাতে পদার্থবিদ্যার স্নাতকোত্তর ছিল না। মনে এক চাপা কষ্ট নিয়ে ত্রিপুরা শিক্ষা বিভাগে শিক্ষিকা হয়ে যোগ দেই। শিক্ষকতা ভালবাসেন বলেই জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করি। স্বপ্ন ছিল অধ্যাপনা করার। তেলিয়ামুড়ার এক গ্রামীণ স্কুলে পড়ানো,চাকমাঘাটের মত পান্ডববর্জিত জায়গায় নববিবাহিত জীবন কাটানো,সবই এক হতাশার সৃষ্টি করে। ত্রিপুরার রাজনৈতিক পটপরিবর্তন,রাজনৈতিক নোংরামো, কিছুই মন থেকে মেনে নিতে পারে না। পড়াশোনা,গান নিয়েই কেটেছে শৈশব। সেই পরিবেশ আর না পাওয়াতে এক অবসাদে ডুবে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়াই। স্বামী স্ত্রী দুজনেই স্থির করি এ প্রদেশ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে,সুযোগের অপেক্ষায় রইলাম। তখন ত্রিপুরাতে বি.এড বাধ্যতামূলক ছিলনা। নিজেকে তৈরী করতে লাগি। এরপর একদিন বি.এড,ইংরেজী সাহিত্যে এম.এ.,এম.ফিল,ঝুলিতে রাখলাম। 

     সাহিত্যানুরাগী বরাবরই ছিলাম। কিন্তু নিজে লিখবো ভাবিনি কখনো।  ২০০৫ সালে ইউরোপ ভ্রমনের পর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ‘দৈনিক সংবাদ’ রবিবাসরীয়তে প্রকাশিত হয়। এই লেখার হাতে খড়ি। ‘বিকেলের রোদ্দুর’ নামে ছোটগল্প দিয়ে সাহিত্যজীবন শুরু। আবার সঙ্গীতচর্চা শুরু করি। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ছোটবেলায়ই শিখেছিলাম। মাঝে এক দীর্ঘ ছেদ পরেছিল ।রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা,সাহিত্যচর্চায় নিজেকে আবার ফিরে পাই। এর মধ্যে স্বামী ওমানে এক চাকরীর অফার পেয়ে মাস্কটে যান। মধ্য চল্লিশে সরকারী চাকরীর নিরাপত্তা ছেড়ে অনিশ্চয়তাকে গ্রহণ করা খুব সহজ ছিল না। সিদ্ধান্ত নেই স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে ত্রিপুরা ছাড়ার। একমাত্র পুত্র দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত থাকাতে অপেক্ষা করতে হয় কিছুদিন ।
    একমাত্র পুত্র উচ্চ মাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট করে ভারতবর্ষের এক অভিজাত ,পুরোনো [সরকারী] ইন্জিনীয়ারিং কলেজে ভর্তি হলে ভলান্টিয়ার রিটায়ারমেণ্ট নিয়ে মাস্কেট পাড়ি দেই । শুরু হয় এক নূতন অধ্যায়। 
    আরব জগত সম্বন্ধে যে প্রথাগত ধারণা আছে,তার থেকে ‘ওমান’ একদম আলাদা। 
    ওমান সুলতান অত্যন্ত সুশাসক,উদার,পরধর্ম সহিষ্ণু,কিন্তু প্রচারবিমুখ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে সমৃদ্ধ ওমান বিদেশীদের স্বর্গ বললেও কম বলা হয়। 


     স্বামী এক  কন্সট্রাকসন কনসালটেন্সী ফার্মে আছেন। আমিও চাকরি পেয়ে যাই, অবশ্যই শিক্ষকতাতে। মাঝে কয়েক বছর সাহিত্য চর্চা ব্যাহত থাকলেও ২০১৬ সালে ছোট গল্পের সংকলন ‘বিহাইণ্ড দি ডার্কনেস’ প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপে,ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। যদিও মূলতঃ ইংরেজীতেই লিখি,,তবু মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসাতে বাংলাতেও রচনা করে যাচ্ছি।  এ বছরের শারদীয়া দৈনিক সংবাদে গল্প প্রকাশিত হয়েছে।


    সর্বোপরি আমাকে আমার কথাভাবনা শেয়ার করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই আরশিকথা পরিবারকে। 
    মৌসুমী ভট্টাচার্য, ওমান

    ৭ই অক্টোবর ২০১৮ইং
    3/related/default