Type Here to Get Search Results !

" বিজেপি ছাড়া কেউ উন্নয়নমুখী ও মজবুত সরকার গড়তে পারবেনা "- পৃষ্ঠাপ্রমুখ সম্মেলনে বললেন অমিত শাহ

তন্ময় বনিক,আগরতলাঃ
 কেন দ্বিতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করা প্রয়োজন তা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন বিজেপি'র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। আক্রমণ করলেন সিপিএম এবং কংগ্রেসকে। তবে সিপিএমকে খুব একটা গুরুত্ব দিলেন না। সংক্ষেপে বিগত ন'মাসে বিপ্লব দেব সরকারের সাফল্য এবং কেন্দ্রের  নরেন্দ্র মোদি সরকারের জনমুখী প্রকল্পের দ্বারা মানুষের উপকৃত হবার তথ্য তুলে ধরেন। 
স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে পৃষ্ঠা প্রমুখদের সম্মেলনে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, ত্রিপুরায় তিনটি পার্টির মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। কোথাও নেই। আর কংগ্রেস সারা দেশে সমাপ্ত হবার পথে। ইউপিএ সরকারের আমলে সব মিলিয়ে প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বিজেপি ছাড়া কেউ উন্নয়নমুখী ও মজবুত সরকার গড়তে পারবেনা বলে দাবি করেন তিনি। বিরোধীদের নেই কোনও নীতি, নেই কোনও নেতা। রাজ্যের প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন, বিপ্লব দেবের নেতৃত্বে সরকার একে একে সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে। 


আগরতলা বিমানবন্দরের নামকরণ হয় মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দর। কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা হচ্ছে। কর্মচারীদের জন্য বেতন কমিশন দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বলা যোজনায় দেওয়া হচ্ছে গ্যাসের সংযোজন। রাজ্যের দুইটি আসন থেকে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে পদ্ম ফুটবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
' নেডা ' এর চেয়ারম্যান তথা আসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা তার বক্তব্যে দরাজ প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের। তিনি বলেন, মোদিজির আশীর্বাদে বিপ্লব দেব সপ্তম বেতন কমিশন দেন। মদ,ফেন্সিডিল, গাঁজা বন্ধ করেছেন। দেশের জনগণের জন্য বিপ্লব দেব আদর্শ বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে বলেন, ভারতবাসী আগামী ২০ বছর মোদিকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাখার জন্য মনস্থির করেছেন। নেডার চেয়ারম্যান জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চলের ২৫টি আসনের মধ্যে অন্তত ২১টি জয়ের লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। 
এর মধ্যে ত্রিপুরার দুইটিও রয়েছে। সম্মেলনে পৃষ্ঠা প্রমুখদের উপস্থিতি দেখে আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ত্রিপুরায় পৃষ্ঠা প্রমুখরা দেশের মধ্যে নজির গড়েছেন। লক্ষ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে ত্রিপুরার দুইটি আসন থেকে বিজেপি জয়ী হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। 
এদিকে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব তার বক্তব্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান। বলেন, সারা উত্তর পূর্ব এখন কংগ্রেস মুক্ত। সারা দেশে একটি রাজনৈতিক দলই বিদ্যমান রয়েছে। তা হলো বিজেপি। রামমাধব আরও বলেন, দেশে এখন একটা মিথ্যার বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে। রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে বলেন, ওর কাজ হচ্ছে সংসদের ভেতর আঁখ মারো আর বাইরে ঝুট মারো। রাফাল নিয়ে মিথ্যা বলে মুখ পুড়েছে। তারপরও মিথ্যাই বলে চলেছে। তিনি আহবান জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম ও কাজ সবার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বলেন, লোকসভার নির্বাচনে তিনশো এর উপর আসন লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এও বলেন, এখনও অনেক কাজ বাকি রয়েছে। দেশের মধ্যে ভালো আইন তৈরি করতে হবে। 
রাজ্যে বিজেপি'র প্রভারী সুনীল দেওধরতো একেবারে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন কংগ্রেসকে। বলেন, শিখ দাঙ্গায় অভিযুক্ত কমলনাথকে মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী করেছে কংগ্রেস। তিনি ক্ষমতা পেয়েই বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম গান নিষিদ্ধ করে দেন। 
তারপরই জনতার উদ্দেশ্যে সুনীলজি বল্বন, চোর পরিবার দেশদ্রোহী পরিবারের রাহুল গান্ধীর কানে যেন পৌঁছায় জোরে বলুন 'বন্দেমাতরম'। মাঠের চারদিক থেকে পৃষ্ঠা প্রমুখরা সমস্বরে বলেন, " বন্দে মাতরম "। সুনীল দেওধর তার বক্তব্যে বামফ্রন্টের বিগত ২৫ বছরের শাসনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, সেসময় রাজনৈতিক অত্যাচার, নিপীড়ন, পার্টিবাজি ছাড়া কিছুই ছিলোনা। ভেঙ্গে পড়েছিলো আইনশৃঙ্খলা জনিত ব্যবস্থা। বিপ্লব দেব মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সবার আগে আইনশৃঙ্খলা জনিত ব্যবস্থা ঠিক করেন। নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি একের পর এক পালন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। সুনীল দেওধরও বলেছেন, নির্বাচনে বিজেপি'র লক্ষ্য তিনশো আসন জয় করা। মোদি তিনশো পদ্ম নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। 
পৃষ্ঠা প্রমুখদের সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের বক্তব্য বেকারদের জন্য অনেকটাই হতাশাজনক। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিজেপি করে কারোর চাকরি হয়ে গেছে একথা আগামীদিনে কেউ কখনও বলতে পারবেনা। রাজ্যের যুবকরা এখন চাকরির জন্য অপেক্ষায় না থেকে স্বনির্ভর হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগামী তিন বছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে মডেল স্টেট হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোদির ' হীরা ' ত্রিপুরায় গড়ে উঠছে বলেও দাবি করেন। ত্রিপুরাকে আইটি হাব হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও বলেন। পৃষ্ঠা প্রমুখদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত করাতে গিয়ে বলেন, সংগঠন ও সরকারের মধ্যে সেতু হচ্ছেন পৃষ্ঠা প্রমুখরা। তিনি আরও বলেন, বিজেপি সবসময় একতা, সমতা ও মমত্ববোধের কথা বলে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতির সামনে এদিন পৃষ্ঠা প্রমুখদের হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে শপথবাক্য পাঠ করান মুখ্যমন্ত্রী। দলের প্রতি তাদের আনুগত্য এবং দায়িত্ব কর্তব্য বজায় রাখার জন্যই এই শপথবাক্য। পৃষ্ঠা প্রমুখরা এদিন মঞ্চে উপবিষ্ট দলীয় নেতৃত্বদের ভোটার তালিকার কে কোন পৃষ্ঠার দায়িত্বে সেই পৃষ্ঠা ও পরিচয়পত্রও দেখান। 
এদিনের সমাবেশে এছাড়া উপস্থিত নেতৃত্বদের মধ্যে ছিলেন দলের উত্তর পূর্বাঞ্চলের পর্যবেক্ষক অজয় জাম্বোয়াল, উপমুখ্যমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, রাজ্য বিজেপি'র সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক, আর এক সহ সভাপতি রামপ্রসাদ পাল, সাধারণ সম্পাদিকা প্রতিমা ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক রাজীব ভট্টাচার্য, যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি টিঙ্কু রায়, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী পাপিয়া দত্ত সহ অন্যান্য নেতৃত্বরা।

ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ

৫ই জানুয়ারি ২০১৯ইং             

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.