আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    তেষ্টা" ......... শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর ছোট গল্প

    আরশি কথা

    দিদিমনি,দিদিমনি, একটু জল দাওনাগো জল! তেষ্টায় গলা ফেটে গোলো গো--
    বারবার কাতর ভাবে বলছিলো অভাগী। 
    সুমনা জলের বোতল এগিয়ে দিলো।
    --- এতো জলতেষ্টা পেয়েছে কেনো তোর!!
    কোন জবাব না দিয়ে অভাগী বোতল খুলে ঢক ঢক করে জল গিলতে লাগলো।
    কিন্তু কি আশ্চর্য!! সব জল গলা দিয়ে বেরিয়ে এসে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে।
    -- ওকি ! ওকি! সব জল গলা দিয়ে বেরিয়ে এসে মাটিতে  গড়িয়ে পড়লো!ও অভাগী!!

    ওমা সেকি ! অভাগী হাসছে। জল সব ফেলে দিচ্ছে।
    আরে!! অভাগী হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে ।মিলিয়ে যাচ্ছে।
    সুমনা চিৎকার করে উঠলো
    --- অভাগীঈঈঈঈঈঈঈঈ

    ধরমর করে বিছানায় উঠে বসলো সুমনা। কি সব স্বপ্ন!! তেষ্টায় বুক ফেটে যাচ্ছে। জিভ তালু সব শুকিয়ে যাচ্ছে। সুগার টা আজকালকের মধ্যেই টেষ্ট করাতে হবে। এতো জল তেষ্টা পায় কেনো! পরক্ষণেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
    --' সর্বনাশ! আটটা বেজে গেছে।
    কখন রান্না সারবে চান টান সেরে অফিসের জন্য ট্রেন ধরবে। লোকালটা মিস করবে মনে হয়। ট্যাক্সি নিয়ে নেবে কি!

    অভাগীটা আজকেও কামাই করলো । দুদিনের ছুটি নিয়ে গেছিলো সেই কোন গ্রামে মাসতুতো বোন না কার বিয়ে যেনো। আজ চারদিন হয়ে গেলো এখোনো ফেরার নাম নেই। 

    সুমনা তাড়াতাড়ি করে নেমে একটা হাউস কোট জড়িয়ে দরজা খুললো।ইসস কাগজ ,দুধের প্যাকেট ,সব পড়ে আছে নিচে। 

    কাগজটা পড়ার এখন সময় নেই হাতে । অফিস যেতে যেতে পড়ে নেবে ক্ষন। হাত ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো আপাতত। তারপর বাথরুমে ঢুকে গেলো।

    বেশ অনেকটাই দেরি করে ফেলেছে। ঘড়ির বেল্ট লাগাতে লাগাতে দরজা তালা দিয়ে সুমনা রাস্তায় নেমে এলো।  

    আজ ট্যাক্সিই নিতে হবে। 
    --এই ট্যাক্সি---!!

    উফফ এই সিগনাল! কতক্ষণে যে ছাড়বে!
    এই আর একটু। এক্ষুনি সবুজ বাতিটা জ্বলে উঠলো বলে।

    হঠাত একটা কালিঝুলি মাখা মেয়ে হাত বাড়িয়ে বলছে-' জল দাও নাগো একটু , জল দাও--
    সেকি টাকা নয় পয়সা নয় খাবার নয় জল চাইছিস কেনো!! তাও আবার আমার থেকে!
    ঠিক আছে এই নে জল।
    বলে সুমনা বোতল বের করে জল ঢেলে দিতে লাগলো মেয়েটার আঁজলা করা হাতে। 
    ওমা  ও সব জল ফেলে দিচ্ছে কেনো!!
    --- ওকি মেয়ে সব জল ফেলে দিচ্ছিস কেনো!
    মেয়েটা কোন জবাব দিচ্ছেনা কেবল হাসছে।

    সিগন্যাল হয়ে গেলো । গাড়িও সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলো। সেকি মেয়েটা হাসছে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। 
    --- সরে যাও সরে যাও। চাপা পড়বে এক্ষুনি।
    ড্রাইভার তার সিট থেকে বলে উঠলো -- কৌন হ্যায় ম্যাডাম।
    ওধার তো কই নহি। কিসকো বোল রহে হ্যায় আপ!

    আরে এটা আবার কি  কথা!! ধুর আজ সকাল থেকে যে কি হচ্ছে!!

    নাহ কাগজটাই একটু বের করে পড়ে নেওয়া ভাল।

    কাগজের ভাজ খুলতেই ধর্ষণের খবর। ওহ মাগো আজকাল আর কাগজ রাখা যাবেনা। খালি খুন জখম রাহাজানি আর ধর্ষণ। 
    ইসস মেয়েটার চেহারাটা আর চেনার জো নেই। ফুলে ঢোল হয়ে আছে। 

    কিন্তু শাড়িটা!! যেটা দিয়ে শরীরটা প্রায় ঢাকা ছিলো! শাড়িটা তো তাঁর। হ্যাঁ ঐ শাড়িটা সে শখ করে কিনেছিলো রাজস্থান থেকে। অভাগী নিয়ে গেছিলো বিয়েতে পড়বে বলে। 
    দ্রুত চোখ বোলাতে লাগলো খবরে। 
    বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ। পরদিন পাঁচমাইল দূরে ধানক্ষেতের পাশে উলঙ্গ দেহ পাওয়া যায়। সারা শরীরে পাশবিক অত্যাচারের চিহ্ন। যেনো কোন শেয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খেয়েছে। তখোনো দেহে প্রাণ ছিলো। জল দাও জল দাও বলে চিৎকার করছিলো। কেউ এগিয়ে আসছিলোনা ভয়ে। পুলিশে খবর দিতে গেলো আনেকেই। যতক্ষণে পুলিশ আসলো ততক্ষণে সব শেষ। ময়না তদন্ত সেরে লাস রাখা আছে মর্গে। এখোনো চিহ্নিত হয়নি।

    সুমনা কাঁপতে কাঁপতে অস্ফুটে চিৎকার করে উঠলো--Driver, turn back----
    .

    শর্মিষ্ঠা চৌধুরী,আগরতলা

    ছবিঋণঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট

    ২১শে জুলাই ২০১৯ 
    3/related/default