Type Here to Get Search Results !

স্মৃতি আর কর্মে হৃদয়ে আছে অম্লান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান" ... বাংলাদেশ থেকে খোরশেদ আলম বিপ্লব

ইতিহাসের পাতায় আর মুক্তিকামী মানুষের মনে লেপটে আছে একটি নাম, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির ক্রান্তিকালে অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন এপার থেকে ওপারে প্রতিটি ঘরে ঘরে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে পাবার বাসনায় মত্ত ছিলেন জয়ের জন্য । আর বেগম ফজিলাতুন্নেসা কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। অনুসরণ করেছেন প্রাণপ্রিয় স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে। এই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য অবদান রেখেছেন। এজন্য অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে।
হাজারো ত্যাগ প্রাণপণ চেষ্টায় জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। মা মাটি মানুষ ছিল তার প্রেরণার উৎস। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশের মহান নেতা রাষ্টপতি সমস্ত জনগনের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সবসময় ভাবতেন। নিজের ত্যাগে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে ছিল প্রাণপণ চেষ্টা যা ইতিহাসের পাতায় অম্লান।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের শেষ দিনগুলো তার বড় মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কাটাতে চেয়েছিলেন। মহান এই নেতা সারাজীবন দেশের সাধারণ জনসাধারণের কল্যাণ চিন্তা করেছেন, আর তাদের মাঝে নিজেকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। তাই জীবনের শেষ দিনগুলোতে গ্রামের নিঝুম প্রকৃতির কাছেই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।
বড় সন্তান হিসেবে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ইচ্ছের কথাও তাই মেয়ের সঙ্গেই আলাপ করতেন।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘বাবার কাছাকাছি বেশি সময় কাটাতাম। তার জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আলোচনা করার সুযোগও পেতাম।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত শেখ মুজিব আমার পিতা গ্রন্থের ‘স্মৃতির দখিনা দুয়ার’ আত্মকথনে তিনি জাতির জনকের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাঁর একটি কথা আজ খুব বেশি করে মনে পড়ে। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘শেষ জীবনে আমি গ্রামে থাকব। তুই আমাকে দেখবি। আমি তোর কাছেই থাকব।’
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম আঘাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। এর মাত্র ১৬ দিন আগে ৩০ জুলাই শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানা এবং দুই শিশু সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে জার্মানিতে কর্মরত পরমাণুবিজ্ঞানী স্বামী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কাছে চলে যান। শেখ হাসিনা সেদিন যেতে চাননি।
তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিল সমাবর্তনের প্রস্তুতি। ১৫ আগস্ট এ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাজ সাজ রব। জার্মানি যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সে সময়ের উপাচার্য পদার্থবিদ ড. আবদুল মতিন চৌধুরীর সাথে দেখা করতে যান। আবদুল মতিন চৌধুরী সেদিন শেখ হাসিনাকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত থেকে যেতে বলেন। ঐতিহাসিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের অংশীদার হতে। শেখ হাসিনাও থেকে যাওয়ারই মনস্থ করেন। কিন্তু ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার টেলিফোন পেয়ে ৩০ জুলাই তারিখেই চলে যান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সেদিন যদি স্যারের কথা অমান্য না করে ঢাকায় থেকে যেতাম, আমার জন্য সেটাই ভালো হতো। মা, বাবা, ভাইদের সাথে যদি আমিও চলে যেতে পারতাম, তবে প্রতিদিনের এই অসহনীয় যন্ত্রণা থেকে তো বেঁচে যেতাম।’
১৯৭৫ সালের ৩০ জুলাই দুই মেয়ের বিদায়কালে বঙ্গবন্ধুও খুব ভেঙে পড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি দিনের প্রতিটি কাজের সাক্ষী। তিনি বলেন, ‘দুই মেয়েকে বিদায় দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন। এমনভাবে তাঁকে আর কখনো কাঁদতে দেখিনি।’
সেদিন যদি শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা জার্মানি চলে না যেতেন তাহলে হয়তো জীবনের শেষ দিনগুলো বঙ্গবন্ধু বড় মেয়ের সান্নিধ্য পেতেন। কিন্তু বাঙালি জাতির জীবনে বঙ্গবন্ধু পরিবারের শেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে বিলীন হয়ে যেত।
ড. ফরাসউদ্দিন এই চলে যাওয়াকে ‘দৈব সৌভাগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেদিন বাংলাদেশ থেকে চলে না গেলে তারাও হয়তো এই নির্মমতার শিকার হতেন। আর আমরাও আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম না।’
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। একটি স্বাধীন, শিক্ষিত ও স্বনির্ভর জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে তিনি যেসব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন, যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন; তার সবই স্তব্ধ করে দিয়েছিল ঘাতকের নির্মম বুলেট।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু সব মিলিয়ে প্রায় ১১ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে জনগণের জন্যই তার জীবনের বেশির ভাগ সময় দিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ সন্তানের জনক এই মহান নেতা সন্তানদের মধ্যেও প্রোথিত করেছিলেন উদার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনা। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন পূরণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।
কিন্তু শেখ হাসিনা পিতার অন্তিম ইচ্ছের কথা কখনও ভোলেন না। তাই তো যতদূরে যেখানেই যান, টুঙ্গীপাড়ার ছায়াঢাকা শীতল গ্রামখানি তাকে হাতছানি দেয়। তিনিও জীবনের শেষ দিনগুলো পিতার স্নেহছায়ায় কাটাতে চান। ‘স্মৃতির দখিন দুয়ারে’ তিনি বলেন, ‘গ্রামের নিঝুম পরিবেশে বাবার মাজারের এই পিছুটান আমি পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন, আমাকে বারবার গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
আমার জীবনের শেষ দিনগুলোও আমি টুঙ্গিপাড়ায় স্থায়ীভাবে কাটাতে চাই। খুব ইচ্ছে আছে নদীর ধারে একটি ঘর তৈরি করার।
আজ এই মহান নেতার‌ ই নন পুরো জাতির পরাজয়ের দিন যে পরাজয়ের কোন দিনই পুরন হবার নয় । যুগে যুগে মানুষের মনে এই আত্মাত্যাগী মানুষটি চোখের জলে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল ধরে ভালোবাসায়, মানবতায়, কৃতজ্ঞতায় ও বিনম্র শ্রদ্ধায়।
হে মহান বাংলা ভাষা ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ওপারে ভালো থাকুন মহান আল্লাহ তাআলা আপনাকে বেহেশত নসিব করুন এই প্রত্যাশা চিরকালের।

আত্ম উপলব্ধির জায়গা থেকে
খোরশেদ আলম বিপ্লব
লেখক ও মানবাধিকার কর্মী।
১৪ আগস্ট ২০১৯ খৃ:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.