Type Here to Get Search Results !

শর্তসাপেক্ষে মিন্নিকে জামিন দিলেন আদালত

প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর: বাংলাদেশের বরগুনা জেলার রিফাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিনের পাশাপাশি একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই শর্তানুযায়ী তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না- এমন রুলের শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্না, তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মশিউর রহমান, মাক্কিয়া ফাতেমা, জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। এর আগে ২০ আগস্ট হাইকোর্ট মিন্নিকে কেন জামিন দেয়া হবে না এই মর্মে রুল জারি করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কেস ডকেটসহ (সিডি) আদালতে তলব করেন। পাশাপাশি আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পূর্বে মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে মর্মে বরগুনার এসপির সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা চান আদালত। বুধবার আদালতের নির্দেশে বক্তব্যের লিখিত ব্যাখ্যা দেন এসপি। পরে আদালত জামিন আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন। বুধবারের শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডের আগে ৮ বার এবং পরে ৫ বার নয়ন বন্ডের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মিন্নি। এটা কি তাকে নির্দোষ প্রমাণ করে? সে এই ঘটনার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী। তার কারণেই দুটো প্রাণ ঝরে গেছে। জবাবে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, নয়ন বন্ড মারা যাওয়ার আগে পুলিশের সঙ্গে ৭৭ বার টেলিফোনে কথা বলেছে। এ প্রতিবেদন পত্রিকায় এসেছে। সেইসব কললিস্ট কোথায়? আর যে নয়ন বন্ডের কথা বলা হচ্ছে সেই বন্ড তৈরি হয়েছে পুলিশ ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। পুলিশ এখন বলছে বন্ড মিন্নির সৃষ্টি। এ পর্যায়ে আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, বিচারের পূর্ব পর্যন্ত আদালত মিন্নিকে জামিন দিতে পারেন। জামিনের সঙ্গে তদন্তের কোনো সম্পর্ক নেই। আসামি যদি তদন্তকে প্রভাবিত না করে এবং আদালত যদি মনে করে জামিন দেয়াটা যুক্তিযুক্ত তাহলে সেই ক্ষমতা কোর্টের রয়েছে। এর আগে তলব আদেশে হাইকোর্টে সিডিসহ হাজির হন তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। হাইকোর্টের তলব আদেশ থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারিনি। আদালত বলেন, আমাদের তলব আদেশের সঙ্গে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল না করার সম্পর্ক কী? মামলার সিডি পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, সিডিতে যা রয়েছে তার সঙ্গে এসপির সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের কোনো মিল পাচ্ছি না। যত বড় পদে আসীন তাকে তত সতর্ক থাকতে হয়। জেড আই খান পান্না বলেন, মিন্নি ১৯ বছর বয়সী একটা মেয়ে। তার স্বামী এ ঘটনায় মারা গেছেন। বিধবা, তার পালানোর কোনো সুযোগ নেই। তার পক্ষে জামিন চান তিনি। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, মিন্নি ঘটনার পরিকল্পনাকারী। এখনও মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়নি। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাকে যেন জামিন দেয়া না হয়। গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়। তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।’ মিন্নি পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়।

২৯শে আগস্ট ২০১৯

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.