‘১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব মানুষের মুখে মুখে ছিল। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু সবার মুখে শুনেছি প্রচণ্ড দেশ প্রেমিক এবং বলিষ্ঠ একজন অভিভাবক ছিলেন।
দেশের মাটি ও মানুষের মুক্তির জন্য প্রচণ্ড ব্যাকুল ছিলেন নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেশ ও ভাষাকে মুক্ত করবেন এই ছিল তার ব্রত। আমাদের চারপাশের মানুষগুলো তখন সে মুক্তির জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সব ধরনের সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছিলেন যা স্পষ্ট ছাপ আমার চোখে লেগে আছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে গিয়ে আরশি কথার কাছে এভাবেই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন ত্রিপুরা রাজ্যের এমএলএ রামপদ জমাতিয়া।
গত ২৯ জুলাই (সোমবার) আগরতলায় ক্ষমতাসীন বিজেপির এমএলএ রামপদ জমাতিয়া এ সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছেন আরশিকথা'র বাংলাদেশ বিভাগের অন্যতম উপদেষ্টা খোরশেদ আলম বিপ্লব।সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী তথা আরশিকথা পরিবারের অন্যতম সদস্যা সুলতানা পারভিন রুমা।
সাক্ষাতকারটি আরশি কথার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
এমএলএ: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে ওপার বাংলার মানুষের জন্য আমার শুভকামনা রইলো এবং দুই দেশের বন্ধন আর ও সুদৃঢ় হোক এই কামনা করছি।
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ তন্ময় রায় চৌধুরী
৪ঠা আগস্ট ২০১৯
#আরশিকথা: জনাব এমএলএ শুরুতেই আপনাকে আরশি কথার তথা ঢাকা বাংলাদেশ বিভাগের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। আপনি কেমন আছেন?
#এমএলএ: জি আপনাকেও ধন্যবাদ এবং স্বাগত জানাই আগরতলা ত্রিপুরা তথা ভারতবাসীর পক্ষ থেকে।আমি সবকিছু মিলিয়ে ভালো আছি।
#আরশিকথা: এপার-ওপার দুই বাংলার মানুষের মধ্যে যে চমৎকার সেতুবন্ধন রয়েছে এবং এই মুহূর্তে তা আপনার আচরণই নয় চোখে মুখে ও তার স্পষ্ট ছাপ দেখতে পাচ্ছি। আত্মীয়তায় ব্যস্ততার মাঝেও তারুণ্যের জয় দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করেছে। এই ভাতৃত্বের বন্ধন আর ভালোবাসা বা দুই বাংলার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
#এমএলএ: দেখুন ১৯৬২-৬৪ সালের তৎকালীন যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মানিক লাল গাঙ্গুলী সে সময় পূর্বপাকিস্তান হিন্দু মুসলিম পরিবারগুলোর মধ্যে এক্সচেঞ্জ করার সুযোগ পেয়েছিল। আমার পৈত্রিক বাড়ি ছিল নগেশ্বর। এখন পূর্ব বগাবাসী।
তখন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রচুর শরণার্থী ছিল এ অঞ্চলে কিন্তু এখানকার ভারতবাসীরা পালিয়ে আসা মানুষদের ধর্ম বর্ণের ঊর্ধ্বে এসে তাদের শরণার্থী হিসেবে কখনো ভাবেনি, মনে করতেন অতিথি এসেছেন এবং তা ভেবে ঠাঁই দিয়েছিল তাদের কাছে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ছিলাম সেই থেকেই ভালোবাসার সেতুবন্ধন রচনা হলো।
#আরশিকথা: স্যার, যদি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কিছু বাস্তব ঘটনা শেয়ার করতেন সত্যি আনন্দ ভালো লাগা আর মনে জানবার যে ক্ষুধা সেই থেকেই বার বার প্রশ্ন করছি।
#এমএলএ: ১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সবার মুখে মুখে ছিল। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি কিন্তু সবার মুখে মুখে শুনেছি প্রচণ্ড দেশ প্রেমিক এবং বলিষ্ঠ একজন অভিভাবক ছিলেন।
দেশের মাটি ও মানুষের মুক্তির জন্য প্রচণ্ড ব্যাকুল ছিলেন নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেশ ও ভাষাকে মুক্ত করবেন এই ছিল তার ব্রত। আমাদের চারপাশের মানুষগুলো তখন সে মুক্তির জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সব ধরনের সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছিলেন যা স্পষ্ট ছাপ আমার চোখে লেগে আছে।
#আরশিকথা: যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বা তৎকালীন সময়ে আপনার কিছু স্মৃতি বা এসময় ঘটে যাওয়া আনন্দের কিছু নিয়ে যদি বলতেন।
#এমএলএ: যুদ্ধ প্রায় শেষ ১৯৭১ সাল তখন পূর্ব বাংলা মানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীন হলো। ওই বারই হোস্টেলে থাকা অবস্থায় আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ট্রেনে করে স্বাধীন বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে আমাদের মধ্যে একজন দুষ্টু প্রকৃতির বন্ধু ব্যাগে করে ফ্যান চুরি করে নিয়ে এসেছিল সেই ফ্যান চুরির কথা হোস্টেলের সুপারটেন্ট রামু চক্রবর্তীর কান পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
এক টানা ৫ বছর পড়াশোনা করে হোস্টেলে থেকে ৮৪ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে সে বছর মাত্র ৪ জন ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছিল তাও আবার তৃতীয় বিভাগে এই চারজনের মধ্যে আমিও ছিলান অন্যতম।
#আরশিকথা: সেই সময়ের কোনো মানুষের কথা বা আপনার কোনো বন্ধুর কথা কি মনে আছে?
#এমএলএ: ১৯৭৪ সালের ১৪ আগস্ট তৎকালীন ভারতবর্ষের যুদ্ধের কথা তারপর ১৫ আগস্ট। স্বাধীনতার গল্প সত্যি আজীবন বয়ে বেড়াবো। বাংলাদেশের মানুষ তথা পূর্ব বাংলার (তৎকালীন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া কুমিল্লা তিতাস গুমতি অঞ্চলের মানুষের আর ভাতৃত্বের বন্ধন এর কথা। বিশেষ করে মনে পড়ে কুমিল্লার চান্দিনার তার বাল্যবন্ধু আব্দুল মতিন খসরু এবং একজন মুসলিম পরিবারের সম্রান্ত মানুষ আব্দুর রহিম বক্স ও তাদের নিয়ে অনেক যা সত্যি ভুলবার নয়। বৈরাগীর বাজার, উজিরপুর, নলছড়, আগরতলা, কৃষ্ণনগর সাবলিমিশনের স্মৃতি এমনকি সেখান থেকে কাছিম ধরার ছলে গোমতী নদী দিয়ে কুমিল্লা গিয়েছিল বহুবার, সে কথাও স্মৃতির আয়নায় ভেসে বেড়াচ্ছে।
#আরশিকথা: আপনি এ এলাকার (ত্রিপুরা) একজন বিজেপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন এবং একজন বিধায়ক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া ও আপনি আর কোন কোন সংগঠন বা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত আছেন।
#এমএলএ: বর্তমানে আমি একজন MLA, ছাড়াও VP, BJP, Tripura Pradesh, Member, Core Committee. Chairman, Killa BAC and Member, Core Committee. Chairman on House Committee. Tripura Lagislative Assembly, Brand Ambassador Swachha Bharat Mission, NE States. Member, Court & Executive Council. Dibrugarh University, Assam. Hon'ble Members on S/T, PAC, Estimates, Ethics & Previlage Committee. TLA
#আরশিকথা: স্যার বাংলাদেশ ভারতের যে সম্পর্ক বিদ্যমান আপনি একজন সরকারি দলের বিধায়ক হিসেবে দুই দেশের বন্ধন পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যা আমাদের জন্য বিশেষ বার্তা, যদি এমন কিছু বলতেন।
#এমএলএ: নরেন্দ্র মোদির সাথে দু'দেশের বন্ধন সুদৃঢ় করা যোগাযোগ মাধ্যম ভিসা প্রসেস নিরাপত্তা চলাচল সহজ করার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন, যা চলমান প্রক্রিয়ায় আছে। এটি ভবিষ্যতে অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে।
এছাড়া দু'দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
#আরশিকথা: অনেক ধন্যবাদ স্যার আপনার মুল্যবান সময় দেয়ার জন্য। অসম্ভব ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন সবার মাঝে মানবতার জন্য, এটাই আমাদের কাম্য ও প্রত্যাশা।এমএলএ: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে ওপার বাংলার মানুষের জন্য আমার শুভকামনা রইলো এবং দুই দেশের বন্ধন আর ও সুদৃঢ় হোক এই কামনা করছি।
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ তন্ময় রায় চৌধুরী
৪ঠা আগস্ট ২০১৯