প্রভাষ চৌধুরী, ঢাকা ব্যুরো এডিটর:
পেছনে, ডানে বামে সেনাবাহিনী ও র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। সামনে হান্ডমাইকে বাজারের দোকানী ও ক্রেতাদের সচেতন ও সতর্কমুলক বার্তা দিয়ে চলেছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র সহকারী সচিব সুমন চন্দ্র দাশ। বিশেষ করে রমজান মাসের কেনাকাটা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্দেশে তার এ প্রচারণা।
হ্যান্ডমাইকে তিনি বলছেন, ‘ক্রেতা এবং বিক্রেতা ভাই-বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, পবিত্র এই রমজান মাসে আমাদের যতটুকু দরকার ততটুকুই যেন কেনাকাটা করি। ব্যবসায়ী ভাইদের বলবো, আপনারা এক মাসের পণ্য কারো কাছে বিক্রি করবেন না। ক্রেতাদের বলবো, আপনার পকেটে টাকা আছে, আপনি পুরো এক মাসের বাজার করবেন, যার পকেটে টাকা নেই। সে কিছুই করতে পারবে না। আপনার বেশি কেনার কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। এটা হতে দেওয়া হবে না। অধিক কেনাকাটা থেকে বিরত থাকুন। অধিক মুনাফা থেকে বিরত থাকুন। যারা সরকারি এই নির্দেশনা মানবেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ (কোভিড-১৯) রোধে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিমবাজার ও কুদরত উল্লাহ সড়কে মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে যৌথভাবে এ প্রচারণা চালায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যা ব)।
প্রচারণার নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমন চন্দ্র দাশ।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাজিয়া শিরিনের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় করোনা মোকাবিলায় এই বিরামহীন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তিনি।
করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রায় প্রতিদিনই মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছেন তিনি। জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। ছুটে চলছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
সুমন চন্দ্র দাশ সময় নিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ক্যাডার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিনে দিনে বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও। সবার মধ্যেই করোনার ভয় রয়েছে। বিশেষ করে যারা মাঠে কাজ করছেন, তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। তবুও দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মানুষকে ঘরে রাখার চেষ্টা করছি। সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা যদি নিজেদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন না করি, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সংক্রমণ তো আরো বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘দেখেন আমাদেরও পরিবার আছে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে আছি। তবুও অনেককে কথা শোনাতে পারছি না। প্রয়োজন ছাড়াই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আইন অনুযায়ী জরিমানা ও কারাদণ্ডও দিচ্ছি। করোনা মোকাবিলায় আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সুমন চন্দ্র দাশ আরো বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে আমরা আশঙ্কা করছি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দ্রব্যের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এই সময়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা বাজারের প্রত্যেক ক্রেতা এবং বিক্রেতাগণকে অনুরোধ করছি তারা যেন আপনাদের পকেটে টাকা থাকলেই পুরো মাসের বাজার না করেন মানবিক কারণে।
এদিন প্রচারণায় সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে র্যা ব-৯ ও সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আহসান আহমেদের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা অংশ নেন। প্রচারণায় আরও অংশ নেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান ও কাউন্সিলর আয়াছ আহমেদ।
প্রচারণাকালে শহরের কুদরত উল্লাহ সড়কে আইন অমান্য করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় নুর সেনেটারিকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
২৩শে এপ্রিল ২০২০
২৩শে এপ্রিল ২০২০