Type Here to Get Search Results !

নকল ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ মামলায় ছাত্রলীগ নেত্রী গ্রেফতার

প্রভাষ চৌধুরী,ঢাকা ব্যুরো এডিটর,আরশিকথা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নকল ‘এন-95’ মাস্ক সরবরাহের অভিযোগ করা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ছাত্রলীগের নেত্রী শারমিন জাহান। তিনি অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার। শুক্রবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। রাতে তাকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হবে। শনিবার( ২৫ জুলাই) সকালে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবে ডিবি পুলিশ। এর আগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডক্টর মোজাফফর আহমদ জানিয়েছেন, নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করে প্রতারণা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা এসব মাস্ক ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। জানা যায়, করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত তৃতীয় গ্রুপের চিকিৎসকদের নকল এন-95 মাস্ক সরবরাহ করে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল। গত শনিবার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলে মাস্কগুলো বদলে নতুন মাস্ক দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলোও নকল ছিলো। এরপরই মামলার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) দিনগত রাতে বিএসএমএমইউয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন। মামলার আসামি শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য ছিলেন। এর আগের কমিটিতে একই উপকমিটির সহসম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত তিনি। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলার শ্যামগঞ্জের গোহালকান্দায়। তিনি মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। মামলায় বিএসএমএমইউর প্রক্টর মো. মোজাফফর আহমেদ বলেছেন, গত ২৭ জুন শারমিন জাহানকে ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। কার্যাদেশের বিপরীতে ৩০ জুন প্রথম দফায় ১ হাজার ৩০০টি; ২ জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০টি ও ১ হাজারটি এবং ১৩ জুলাই চতুর্থ দফায় ৭০০টি মাস্ক সরবরাহ করে। প্রথম ও দ্বিতীয় লটের মাস্কে কোনো সমস্যা ছিল না। তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় লট বিতরণ ও ব্যবহারে ত্রুটি পাওয়া যায় এবং মাস্কের গুণগত মান স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি। কোনো মাস্কের বন্ধনী ফিতা ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো লেখায় ত্রুটিপূর্ণ ইংরেজি লেখা পাওয়া গেছে, কোনো কোনো মাস্কের নিরাপত্তা কোড ও লট নম্বর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে গিয়ে নকল বলে জানা গেছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে যে মাস্কের গুণগত মান নিম্নমানের ছিল। মামলায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শারমিন জাহানকে ১৮ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। শারমিন ২০ জুলাই দেওয়া জবাবে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন, যা দোষ স্বীকারের শামিল। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শারমিনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ করেছে। জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে শারমিন জাহান বলেন, তিনি নকল মাস্ক সরবরাহ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী পরিচালক পণ্যগুলো যাচাই করে গ্রহণ করেছেন। এত দিন পর এসে তাঁরা বলছেন পণ্যে ত্রুটি ছিল। এটা ঠিক নয়। শারমিনের দাবি, মাস্ক তিনি প্রস্তুত করেন না। অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এনে সরবরাহ করেন। সে ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি যদি থেকেও থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা বদলে দেওয়ার কথা বলতে পারত। কিন্তু তা না করেই তারা মামলা করে দিল। তিনি এখানে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। কারণ দর্শানোর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুঃখ প্রকাশের বিষয়ে শারমিন বলেন, মাস্ক সরবরাহের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেননি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার জন্য।

২৪শে জুলাই ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.