আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    আম্মিজান" ......বর্ধমান থেকে রাণা চ্যাটার্জি এর ছোট গল্প

    আরশি কথা
    "আম্মিজান তোমরা একদম চিন্তা করো না আমি ভালো আছি"- ভাইজাগ থেকে এবাড়ির ছোট ছেলের ফোন এলেও মা আফরোজা উদ্বিগ্ন। বশির সত্যি ভালো আছে তো,কতটা ভালো আছে, কেন ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না তবে, এসব প্রশ্নগুলো ছেলের গলা পাওয়ার পরেও ঘুরপাক খাচ্ছে মায়ের মনের মধ্যে। বড় ভাই সাহিল,দিদি তামান্না রীতিমতো ধমক দেয় "মা তুমি চিন্তা কমাও,সুগার প্রেসার অসুস্থতা আরো বাড়াবে নাকি! ভাই বড় হয়েছে বাইরে ফ্যাক্টরিতে দায়িত্বের কাজ করে,সময় অসময়ে খবর ও টাকা পাঠায় আর কি চাই বলতে পারো? নতুন বছরের শুরুতেই ছেলে এসে একবার বলেছিল,'মা কারখানার অবস্থা মোটেই সুবিধার নয়,উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বাজারে চাহিদা নেই,সস্তায় চীনা দ্রব্য মার্কেট কব্জা করে ফেলছে।মায়ের শুকিয়ে যাওয়া মুখ দেখেই বুঝেছিলো কথাটা বলা ঠিক হয়নি।"আম্মি কাজ হারালেও মাটি কামড়ে পড়ে থাকবো দেখো তুমি চিন্তা করোনা "বলে ছেলে চলে যাবার পর থেকেই চিন্তার কালো মেঘ আফরোজাকে অসুস্থ করে। সোহেল ভাই কে বোঝায়,"বড় হয়েছিস সমস্যা গুলো ম্যানেজ করতে শেখ ভাই,আম্মি-আব্বুকে টেনশন দিস না"-এসবের মাঝেই কোথা থেকে কি যে হয়ে গেল! মারণ বীজানুর দাপটে বিশ্ব দুনিয়া ভারতসহ সব দেশের শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য , অর্থনীতিতে চরম আঘাত।ঝাঁপ নেমেছে কত শত কারখানার,বাধ্য হয়ে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ভিন রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। টিভিতে আফরোজা দেখেছে হাজার হাজার শ্রমিক নিরুপায় হয়ে রেললাইন সড়ক ধরে হেঁটেছে আর উদ্বিগ্ন মন যেন ওই তো বশির তার কলিজা বলে চিৎকার করে উঠেছে। সবাইকে চমকে দিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় ফোন এলো বশিরের ।ওদের একটা বাইশ জনের গ্রুপ সড়ক পথে হেঁটে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানাতেই বাড়ির সবার আতঙ্কের শেষ নেই।গতকালই ট্রেন লাইনে কত জনের মৃত্যু খবর শিহরন তুলেছে গোটা দেশের।এখন শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা।শরীর ভাল নেই,পা ফেটে অস্থির মোবাইলে চার্জ ছিল না জানিয়েও সুখবর দিলো ও কটক শহরের কাছে হাজির। দল বল কে কোথায় সব বিচ্ছিন্ন এক গ্রামের স্কুলে ওরা চারজন ঠাঁই নিয়েছে।দুদিন পর আবার ফোন,তোমরা কেউ চিন্তা করবে না,গ্রামের লোকজন খুব ভালো,খাওয়ার ব্যবস্থা ওরাই করেছে আমরা আবার বেরুবো একটু রেস্ট নিয়ে।ভিডিও কলে বশির কে দেখে সকলের আনন্দে চোখে জল এসে গেল। তারপর সপ্তাহ পার,যতবার ফোন করতে গেছে ততবার পরিসীমা ক্ষেত্রের বাইরে শুনে সাহিল তামান্না আফরোজারা অস্থির হয়েছে।সন্ধ্যায় সবাইকে অবাক করে ঘরের ছেলে হাজির খড়গপুর থেকে টেম্পো করে বীরভূমের ময়ূরাক্ষী নদী তীরবর্তী তার ছোট্ট গ্রামে। আম্মি গ্রামের লোক গুলো খুব ভাল ছিল,কত যত্ন করতো আমাদের দেখভাল আর আমরা গ্রামের জমিতে কাজ করে গায়ে-গতরে খেটেছি।ছেলের অমানবিক পরিশ্রম এত পথ হাঁটা ঝাঁজরা শরীর মেনে নিতে পারছিলো না মা। একদিন আফরোজা চমকে উঠল বশীর স্নান করার জন্য জামা খুলতেই একটা কাটা দাগ সেলাই হওয়া চিন্হ দেখে কি হয়েছে বল আমায়, মায়ের জেদাজেদি।"তেমন কিছু নয় গো খুব পেটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হতে একটা ছোট অপারেশন হয়"- খুব স্বাভাবিক গলায় জানালো বশির। জাস্ট একদিন গেছে রাতে ভীষণ পেট ব্যথা,যা খাচ্ছে বমি করে ফেলছে বশির। স্থানীয় ডাক্তার গতিক ভালো বুঝলেন না,কিছু পরীক্ষা ও এক্সরে দিয়ে রেফার করলেন বাইরে। সবার মুখ থমথমে হয়ে গেছে শুনে,অপারেশনের নামে কোনো কোনো দুষ্কৃতী যোগসাজসে বশিরের একটা কিডনি বের করে নেওয়া হয়,এমন মানব শরীরের দামি অঙ্গ চুরি ভাবতেও পারছে না বশির ও তার পরিজন।বশিরের ভীষণ মনে পড়ছে একজন লোক খুব উৎসাহী হয়ে তার সেবা করছিল,হসপিটালেও ছিল সবটাই তার চালাকি।ডাক্তার বললেন আর কিন্তু বাইরে যাওয়া বন্ধ,পরিশ্রম ও খাওয়া সব কিছু সাবধানে।কেঁদে উঠলো ছেলেকে জড়িয়ে আফরোজা,দাদা সোহেল ও তামান্না।


    রাণা চ্যাটার্জি,
    বর্ধমান

    ১৯শে জুলাই ২০২০
    3/related/default