Type Here to Get Search Results !

নতুন উচ্চতায় ভারত-বাংলাদেশ সৌহার্দ্য ॥ চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের চালান যাবে ত্রিপুরায়

আবু আলী, ঢাকা ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের বীজ বপন করেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময়ে উভয় দেশের মধ্যে, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, নিরাপত্তাসহ সব ধরণের সম্পর্কোন্নয়ন ঘটেছে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে ইতিমধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে সরাসরি ঢাকায় এসেছে শুকনা মরিচের পারসেল ট্রেন। এছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সরাসরি পণ্য পরিবহণ শুরু হয়েছে। ১৪ জুলাই মঙ্গলবার পণ্যবাহী চারটি কনটেইনার দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু হয়েছে। কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর থেকে মঙ্গলবার এই চার কনটেইনার পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বাংলাদেশি একটি জাহাজ। পরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে চালান দুটির শেষ গন্তব্য ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে। ভারতীয় হাইকমিশন ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের চিঠির সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য জাফর আলম বলেন, আগামী ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে এসে জাহাজটি পৌঁছাবে। বাংলাদেশ কারগো ভেসেল মালিক সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, চারটি কন্টেইনার নিয়ে কলকতা থেকে জাহাজটি রওনা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম জাহাজটি ফুল লোড করার। তাহলে বোঝা যেতো কোথায় কী সমস্যা। তাহলে সে অনুসারে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ভারতীয় হাইকমিশনের চিঠিতে জানানো হয়, চার কনটেইনারের দুটিতে রয়েছে রড এবং অপর দুটিতে রয়েছে ডাল। চালান দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর জাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেলারে ভারতের আগরতলার উদ্দেশে রওনা হবে। চিঠিতে বলা হয়, আগরতলা থেকে খালাসের পর রডের চালান নেওয়া হবে পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়ায়। চালানটি ভারতের এস এম করপোরেশনের। অপরদিকে আগরতলায় ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট বা আইসিপিতে খালাস করে ডালের চালান ভারতীয় ট্রাকে করে আসামের করিমগঞ্জে জেইন ট্রেডার্সের কাছে নেওয়া হবে। এটি হবে চট্টগ্রাম বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য তাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পরিবহনের প্রথম পরীক্ষামূলক কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ জানান, চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত আছে। বন্দরে এখন জট নেই। ফলে পণ্য ওঠানো-নামানোয় বেশি সময় লাগবে না। পরীক্ষামূলক চালানে পণ্য পরিবহন বাবদ ভাড়া ও বাংলাদেশ অংশে প্রস্তাবিত বিভিন্ন মাশুল পাবে বন্দর, কাস্টমস এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। গত ৫ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শুধু প্রথম ট্রায়াল রানের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রযোজ্য প্রশাসনিক ফি মওকুফ করা হয়েছে। তবে ট্রায়াল রানে অন্যান্য ফি প্রযোজ্য হবে। ফি’র একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। এতে বলা হয়, ভারতীয় পণ্য ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাত ধরনের মাশুল আদায় করবে। এই সাতটি হলো প্রতি চালানের প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, প্রতি টনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট ফি ৩০ টাকা, নিরাপত্তা মাশুল ১০০ টাকা, এসকর্ট মাশুল ৫০ টাকা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক মাশুল ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কনটেইনার স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা এবং বিধি অনুযায়ী ইলেকট্রিক সিলের মাশুল প্রযোজ্য হবে। এই নির্ধারিত সাতটি মাশুল বাবদ বাংলাদেশ কনটেইনারপ্রতি ৪৮-৫৫ ডলার পাবে। এই মাশুলের বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল যুক্ত হবে বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আর সড়কপথে পণ্য পরিবহন ভাড়া পাবে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলম জানিয়েছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মাশুল আদায় করবে কাস্টমস। ২০১৮ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে চুক্তি হয়। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এ সংক্রান্ত পরিচালন পদ্ধতির মান বা এসওপি সই হয়। নানা জটিলতা শেষে দেড় বছরের বেশি সময় পর ভারতীয় পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের আওতায় ভারতীয় পণ্য পরিবহনকারী বাংলাদেশের গাড়ি ভারতের অংশে যাওয়ার অনুমোদন দিতে ভারতের পক্ষ থেকেও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের এক অফিস স্মারকে ট্রায়াল রানে পণ্য পরিবহনকারী বাংলাদেশি গাড়ি ভারতের আগরতলায় পৌঁছানোর অনুমোদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে জানায়। এ জন্য গাড়ি ও চালকের ছয়টি সনদ থাকার শর্ত দেওয়া হয়।

১৪ই জুলাই ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.