আজ ১৯শে আগস্ট ত্রিপুরার সর্বশেষ মহারাজা,আধুনিক ত্রিপুরার স্বপ্ন দ্রষ্টা,প্রগতিশীল ,লোকপ্রিয় ব্যক্তিত্ব মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের ১১২তম জন্মবার্ষিকী।
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য বাহাদুর লোকান্তরিত হলে যুবরাজ বীর বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সিংহাসনে উপবেশন করার কথা।কিন্তু যুবরাজ নাবালক ছিলেন বলে তখনই রাজা হতে পারেননি।।তখন তাঁর বয়স মাত্র ষোল বছর।এ কারণে একটি শাসন পরিষদ শাসন কার্য পরিচালনা করে।উনিশশ সাতাশ সনে বাংলার গভর্ণর তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন।
অসাম্পদায়িক চেতনাশ্রয়ী মহারাজ বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর হিন্দুমন্দির,বৌদ্ধবিহার নির্মানের পাশাপাশি গীর্জা ও মসজিদ নির্মানেও সহযোগিতা করেছেন।এ প্রসঙ্গে গেদুমিঞার মসজিদের কথা উল্লেখনীয়। বিজ্ঞানমনস্ক মহারাজার উল্লেখযোগ্য কীর্তি সমুহের মধ্যে আছে উমামহেশ্বর মন্দির,জগন্নাথ বাড়ি,বেনুবন বৌদ্ধ বিহার,নীরমহল পভৃতি।তিনি শিল্পকলা,প্রযুক্তি বিদ্যা,বিজ্ঞানগবেষণা,মহাবিদ্যালয়,বিশ্ববিদ্যালয়াদি নিয়ে একটি সুসংবদ্ধ কমপ্লেক্স গড়ে তুলতে টেয়েছিলেন-যার নামকরন হয় বিদ্যাপত্তন।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কৈশোর কালেই তাঁর "ভগ্ন হৃদয়" কাব্যপাঠে মুগ্ধ মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য সবার আগে রাজকীয় মর্যাদায় কবি স্বীকৃতি দেন।বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর বিশ্বকবির আশিতম জন্মজয়ন্তীর পুণ্য লগ্নে দিলেন "ভারত ভাস্কর"উপাধি।বিশেষ ভাবে আহূত রাজ দরবারে কবিগুরুকে এই সম্মান দেওয়া হয়।রাজ প্রতিনিধি মানপত্র,রাজার উপহার শান্তিনিকেতনে কবিসার্বভৌম রবীন্দ্রনাথের হাতে তুলে দেন।পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে মানপত্র পাঠ করে শোনালে অসুস্হ কবিগুরু আবেগদীপ্ত কন্ঠে ত্রিপুরার চারজন রাজার সাথে সুখে-দুখে ষাট বছরের নিবিঢ়সম্পর্কের কথা উচ্চারণ করে কায় মনোবাক্য মহারাজ বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরকে আশীর্বাদ করেন।কবির জীবদ্দশায় এটাই ছিল কবির শেষ জন্মজয়ন্তী।
মহারাজ বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের আমলেই নির্মিত হয় আগরতলা বিমান বন্দর,যা আজ মহারাজা বীরবিক্রমের নামাঙ্কিত।ভারতের স্বাধীনতালাভ ,দেশ ভাগের বলি হয়ে ত্রিপুরার বুকে আছড়ে পরলো উদ্বাস্তু স্রোত।তিনি সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে আশ্রয় দিলেন।তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা লক্ষ্য করা গেছে ত্রিপুরার ভারতভূক্তির সিদ্ধান্তে।উনিশশ সাতচল্লিশ সনের সতের মে অসুস্হ অবস্হায় তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
তথ্যঋণঃ ড. আশিস কুমার বৈদ্য
ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ' হিস্টোরি অব ত্রিপুরা '
১৯শে আগস্ট ২০২০