গুলির শব্দ, জ্বলছে আগুন ঘরে, বাইরে, রাজপথে। ঢাকা শহরসহ সর্বত্র।। আন্দোলন আর মিছিল, উত্তপ্ত ঢাকা শহর। এর লেলিহান ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সারা বাংলায়। ছাত্র সমাজ কারো চোখ রাঙ্গানীকে তোয়াক্কা করে না। তারা শ্লোগান তুলছে জয়-বাংলা।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে নির্দেশ এলো এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এরপরই জন্ম নিল বিশ্বের মানচিত্রে নতুন ভুখন্ড। রুপ নিল নতুন এক মানচিত্রের, যার নাম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর বাংলাদেশ। যে দেশে আদিবাসী, উপজাতি, চাকমা, উড়াও, বাঙ্গালী সবার বসবাস সমান অধিকারে।
বঙ্গবন্ধু নিজের দেশে নিজের মানুষদের কাছে ফিরে এলেন পরাজিতদের বন্দীদশা থেকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে। নিজে স্বপ্ন দেখলেন, স্বপ্ন দেখালেন মানুষদের। কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোক মরিয়া হয়ে উঠলো নিজেদের আখের গোছাতে তখন। দেশের ভিতর শান্তি নষ্ট করতে খুন, লুটতরাজের মহা স্বর্গ গড়ে তুলেছিল তখন কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোক। বঙ্গবন্ধু হুংকার দিয়েছিলেন তখন সকল অনিয়মের বিরুদ্ধ।
তখনই যেনো তার ভাগ্যের পরিনতি রচনা হয়ে গেল এই স্বাধীন বাংলার মাটিতে। একদিন ভোর হবার আগেই বাংলার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে বিস্ফোরিত হলো আগ্নেয়াশ্র, তাও আবার বঙ্গবন্ধুরই বুক তাক করে। সাথে সাথে তাঁর দেহ লুটিয়ে পড়ল তাঁরই বাড়ির সিঁড়িতে। সংবাদ এল বঙ্গবন্ধু আর নেই। সপরিবারে নিহত হয়েছে জাতির জনক। জাতির জনকের লাশ নিয়ে কবর দেয়া হলো তাঁর গ্রামের বাড়ি টুঙ্গীপাড়ায়। বাংলার মানুষ এমন সংবাদকে অবিশ্বাস করলেও স্থম্বিত হলো যেনো সবাই।
এরপর দেশ চলে গেলো স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির হাতে। আমরা পেলাম পাকিস্তানীদের প্রেতাত্মাদের। শুরু হলো ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র। কোথাও রইলো না বঙ্গবন্ধুর নাম গন্ধ। সব মুছে ফেলার মিশন শুরু করলো ওরা। দেশকে রক্ষা বা দেশের মানুষদের ভাগ্য উন্নয়ন যেনো তাদের পরিকল্পনায় নেই।
পরিকল্পিতভাবে তারা শুরু করেছে দেশের সাধারণ জনগণের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে। কিন্তু কথায় তো রয়েছেই চোর-ডাকাত যত বড় হোক তারা তাদের কাজ সম্পন্ন করে ফিরে যাবার সময় কোনো না কোনো ক্লু রেখে যায়। তেমনি ভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিশ্চিহ্ন করতে যেই পরিকল্পনা করেছিল তার সবটা সম্পন্ন করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা অনেকটাই ভাগ্যর জোড়ে প্রাণে বেঁচে যান দেশের বাইরে অবস্থান করার জন্য। এখানেই সত্য প্রমাণ হলো রাখে আল্লা মারে কে?
একসময় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দুবোন। বলা যায়, ভাগ্যের কারণেই তাঁর বড় কন্যা শেখ হাসিনা এখন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এজন্য দেশের অধিকাংশ জনসাধারণ তাঁর ক্ষমতায় আসার কারণে খুশী। স্বভাবত কারণেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলে অনেকের অনেক বেশী প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর। কিন্তু মানুষ আজ কোথাও কেন আশাহত, মর্মাহত ?
দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পেয়ে যেমনটি আনন্দে নেচেছিল বাংগালী জাতি আবার তেমনি তাঁর জনপ্রিয়তা কমিয়ে আনার কারণে বিশাল এক গোষ্ঠি হতাশায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল। যার প্রক্ষিতে ১৫ আগষ্টের মত কালো অধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলায়। যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না বাঙ্গালি জাতির ইতিহাসে।
পচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর পুরো জাতিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। জাতির সেই কলংকময় অধ্যায় ঘটে যাবার ২১ বছর পর দেশে আবার যখন ক্ষমতায় এলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তখন অনেকেই আকাশের পানে দুহাত তুলে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয় যে, পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসার পরও দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য যা করছেন তাতে আন্তরিকতার বিন্দুমাত্র কমতি নেই হয়তো তারপরও বাংলার মানুষ কোথাও কেন আজ অসহায়ত্বের দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে সেটাই ভাববার বিষয়।
বাংলার মানুষ এখন রাস্তাঘাট আর অট্টালিকায় সন্তুষ্ট নয়। তারা চায় নিরাপত্তা, চায় দুবেলা পেট ভরে খেতে। চায় নিজের সত্য বলার স্বাধীনতা। সত্য বলার সাহস মানুষের মধ্যে বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার চারিপাশে যে চাটুকারদের ভীড় জমেছে তা দুচারটে রাঘব বোয়ালের অপকর্ম দেখলেই অনুমেয় দেশের বিপর্যয়ের কিছু চিত্র।
বাংলাদেশের আজ আয়ের অন্যতম উৎস প্রবাসী রেমিটেন্স। প্রবাসীদের ঘাম ও কষ্টার্জিত অর্থে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। কিন্তু দেশের মাটিতে তারা কতোটুকু মর্যাদাশীল? প্রবাসীরা কী পাচ্ছে তাদের প্রাপ্য অধিকার? বিদেশের মাটিতেই কী মিলছে তাদের সুযোগ সুবিধা? সুবিধা বঞ্চিত হাজারো প্রবাসীর বুক ফাটা কান্না কী শুনতে পায় আমাদের রাষ্ট্র পরিচালকরা? বিদেশের মাটিতে গৃহকর্মীদের নির্যাতনের চিত্র কী কাঁদায় না রাষ্ট্রের অভিভাবককে?
আমি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা হিসেবে এটুকু অন্তত: অনুরোধ করতে চাই, প্রবাসীদের মূল্যায়ন এই দেশে হোক। মুজিব কন্যার হাতেই হাঁসি ফুটুক প্রতিটি প্রবাসীর মুখে। দূর হোক প্রবাসীদের গ্লানি।
দেশের মানুষ আজ পরিষ্কার যে, আপনার চারিপাশে কালো কোট পরে যে কি রকম ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এই ডাকাত দল! বঙ্গবন্ধু হত্যা কান্ডের এতকাল পরে এসে বঙ্গবন্ধুকে এবং তার দলকে যেভাবে মানুষ ধিক জানাচ্ছে সেটাই লজ্জাজনক। এ থেকে আমরা উত্তরণের আশা কি করতে পারি? এই একটা প্রশ্নর উত্তর আশা করছি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
তবে ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে শেষ করছি।
পি আর প্ল্যাসিড
জাপান
১৫ই আগস্ট ২০২০ --------------------
১৫ই আগস্ট ২০২০ --------------------