আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    লাস ভেগাস"...... আটলান্টা থেকে রবীন্দ্র চক্রবর্তী'র অনুভব

    আরশি কথা


     লাস ভেগাস......


    লাস ভেগাস ঝকঝকে শহর, 

    কত বাহার, কত বহর!

    এম জি এম, লাক্সার, কসমোপলিটান - 

    প্রাসাদের পর প্রাসাদ, আলিদার শান।

    এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায়,

    ক্যাসিনোর চমকে শোক চাপা পড়ে যায়।

    কত লোক, কত কোলাহল,

    অফুরন্ত এলকোহল - 

    নাচ গান আলো 

    মোহজাল বড় জমকালো।

    শহরের মসৃণ ত্বক 

    দৃষ্টি করে অপলক,

    রাত করে দিন - 

    নেশায় বিলীন,

    বলে যেন ছুঁয়ে দ্যাখ নারে,

    জিয়ে না জীবনটারে 

    এসেছিস দুদিনের তরে, 

    কাল যাবি চলে 

    কি এসে যায় কে কি করে 

    কে কি বলে?

    এ শহর বিলোয় সুখ 

    নিয়ে না যত চাস 

    ভরে তোর বুক।

    কি চাই বল? কি তোর আশ?

    এটা লাস ভেগাস।

    অর্থ, নারী?

    রাজকুমারী?

    আছে গাদা গাদা শপ 

    সব নামজাদা।

    লুই ভুতান, প্রাডা - 

    কেন বাঁচিস আধা? 

    ভুলে যা সব 

    ভুলে যা বাস্তব!

    জীবনটা কি সত্য 

    না মায়ার রাজত্ব?


    ডলারের ঝনঝন 

    সুন্দরীর অনাবৃত স্তন,

    সুখ শুধু সুখ 

     এ যে এপার 

    পৃথিবীর স্বর্গদ্বার!


    আর ওপারেতে?

    ওপারেতে গেছিলাম খেতে।

    পার্ক করে গাড়ি,

    রেস্টোরান্ট আছে সারি সারি।

    সন্ধ্যে হয় হয়,

    গাড়িতে উঠতে যাব 

    হঠাৎ কে কয় - 

    "স্যার প্লিজ স্যার, 

    ওনলি টু হান্ড্রেড 

    রেড রোজ বেড।"

    গলায় অনুনয়,

    এনিথিং উইলিং স্যার - 

    গাড়িতে উঠি, বন্ধ করি দ্বার।

    জানলা দিয়ে তাকালাম আমি 

    মেয়েটা কোরিয়ান,

    নয় ভিয়েতনামি।


    মনে পড়ে গেল কলকাতার রাস্তায় 

    ভিখিরীর দল।

    জামা নেই গায়,

    শিশুকোলে, ওরা অসহায়।

    "বাবু, দশ পয়সা দ্যান।"

    সারাক্ষণ শুধু ঘ্যানঘ্যান।


    বলতো কি কপাল?

    ওরা শহরের দুর্গন্ধ জঞ্জাল - 

    শুধু অপমান!

    তবু ভোলা কি যায়?

    ওদের তো জামা নেই গায়!

    কি জানি কি খেতে পায়?

    আর এ মেয়েটার চোখ,

    না হয় সে বেশ্যাই হোক!

    তবু বাঁচতে সে চায় - 

    হঠাৎ কবিতাখানা মনে পড়ে যায়।

    "অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু -

    চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।"

    কিন্তু কবি সে স্বর্গ কোথায়?

    কোথা যাব? কোন ঠিকানায়?


    ফিরে আসি এপারেতে, 

    রাস্তায় যেতে যেতে 

    দেখি যেন অদৃশ্য পাঁচিল,

    এপারের স্বর্গলোক মায়া স্বপ্নিল।

    ওপারেতে নীরবতা কষ্ট পায় প্রাণ,

    তার হাহাকার স্পর্শ করে নাতো কান।

     এসে গেছি হোটেলের কাছে,

    স্বর্গলোক একেবারে অবিকল আছে।

    সার-বাঁধা প্রাসাদ 

    কেন মনে হয়, ভিতে তার 

    গাঁথা অবসাদ?

    উঁচু উচুঁ স্তম্ভ 

    সেকি শুধু অর্থের 

    অর্থহীন দম্ভ!


    মনে মনে ভাবি, এ কি সুখ?

     না এ সুখের ভান?

    এ প্রাসাদ প্রাণহীন, 

    শুধু পাষান নির্মাণ!


    ভুলতে পারি না সেই চোখ - 

    হোক না সে বেশ্যাই সে হোক!

    এপারে ওপারে কোনো পাঁচিল তো নেই - 

    তবে ভগবান,

    মানুষে মানুষে কেন এতো ব্যবধান?


    -- রবীন্দ্র চক্রবর্তী, আটলান্টা

    ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২০

    3/related/default