Type Here to Get Search Results !

মুনিয়ার আত্মহত্যা : বসুন্ধরার এমডির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাঃ বাংলাদেশ

আবু আলী, ঢাকা,আরশিকথা ॥

বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে পুলিশের করা আবেদন মঞ্জুর করেন। ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গুলশান থানার নিবন্ধন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেছিলেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা আবুল হাসান। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। সেই সঙ্গে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন— সায়েম সোবহান আনভীর যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন। রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে ঐ তরুণীর বোন নুসরাত জাহান। পুলিশ জানায়, মোসরাত জাহান মুনিয়া নামের ওই তরুণীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। গত মার্চ মাস থেকে সে গুলশান ২ নম্বর রোডের ১২০ নম্বর বাসার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। সোমবার সন্ধ্যায় খবর পেয়ে পুলিশ ঐ বাসায় গিয়ে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে শিল্প গ্রুপ বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহতের বোন। একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলছে নিহতের পরিবার। বাদী মামলার এজাহারে বলেন, মোসারাত জাহান (২১) মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের (৪২) সঙ্গে মোসারাতের পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালে মোসারাতকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে আসামি রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে তারা বসবাস করতে শুরু করেন। ২০২০ সালে আসামির পরিবার এক নারীর মাধ্যমে এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে। এরপর আসামির মা মোসারাতকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান এবং তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। আসামি কৌশলে তার (বাদী নুসরাতের) বোনকে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। এজাহারে আরও বলা হয়, সবশেষ গত ১ মার্চ মোসারাতকে প্ররোচিত করেন আসামি। তিনি বাসা ভাড়া নিতে বাদী নুসরাত ও তার স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে তিনি মোসারাতকে ঢাকায় আনেন। তিনি গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে আসামি ও তার (বাদীর) বোনের স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখা হয়। আসামি বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো। বাদী নুসরাত এজাহারে বলেন, বোনের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তাকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন। কারণ, দেশে থাকলে আসামির মা-বাবা আসামিকে কিছু না করলেও তার বোনকে মেরে ফেলবেন। গত ১ মার্চ থেকে আসামি মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন। বাদী এজাহারে বলেন, ২৩ এপ্রিল মোসারাত তাকে ফোন করেন। মোসারাত তাকে বলেছেন, আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি (মোসারাত) ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আসামি) দুবাই যাচ্ছেন, মোসারাত যেন কুমিল্লায় চলে যান। আসামির মা জানতে পারলে তাকে (মোসারাত) মেরে ফেলবেন। এজাহারে নুসরাত বলেন, দুদিন পর ২৫ এপ্রিল মোসারাত তাকে ফোন করেন। ওই সময় তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আসামিকে উদ্ধৃত করে মোসারাত বলেন, আসামি তাকে বলেছেন, তিনি (মোসারাত) তার শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মোসারাতকে তিনি ছাড়বেন না। মোসারাত চিৎকার করে বলেন, আসামি তাকে ধোঁকা দিয়েছেন। যেকোনো সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা (বাদী নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন। এজাহারে আরও বলা হয়, নুসরাত তার আত্মীয়স্বজন নিয়ে বেলা দুইটার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মোসারাতের ফোনে ফোন করেন, কিন্তু তিনি আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। তারা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তার বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশ এসে ওড়না কেটে মোসারাতের মৃতদেহ নামায়। আলামত হিসেবে আসামির সঙ্গে ছবি, আসামির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও তার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই কলেজ শিক্ষার্থী তার বোনকে ফোন দিয়ে বলেছিল তিনি ‘ঝামেলা’য় আছেন। তখন তার বোন ঢাকায় আসেন এবং সেই ফ্ল্যাটে যান। ভেতর থেকে দরজা না খোলায়, ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে যাওয়ার পর সিলিং ফ্যানের সঙ্গে তার মরদেহ ঝুলতে দেখা যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।


আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ

২৭শে এপ্রিল ২০২১
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.