একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ও শুদ্ধ সংগীত চর্চার অন্যতম পুরোধা মিতা হক আর নেই। তিনি রবিাবর সকাল ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। তিনি প্রয়াত অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। খালেদ ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মারা যান। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী। মিতা হকের জন্ম ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে। পারিবারিক সূত্র জানায়, মিতা হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চার দিন আগে করোনা নেগেটিভ হলে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। হঠাৎ আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ৫ বছর ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিয়ে ভালোও ছিলেন। কিন্তু এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। রবিাবর বেলা ১১টায় শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ ছায়ানটে নেয়া হয়। তাকে দাফন করা হয় কেরানীগঞ্জের বড় মনোহারিয়ায়, বাবা-মায়ের কবরের পাশে। মিতা হক প্রথমে তার চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সন্জীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি তবলাবাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে গান শেখা শুরু করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশনা করেন। তিনি বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী। ১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় মিতা হকের প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’। সংগীতায়োজনে ছিলেন সুজেয় শ্যাম। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টি রবীন্দ্র সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন মিতা হক। তার এককভাবে মুক্তি পাওয়া মোট ২৪টি অ্যালবাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে। তিনি সুরতীর্থ নামে একটি সঙ্গীত প্রশিক্ষণ দল গঠন করেন, যেখানে তিনি পরিচালক ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি ছায়ানটের রবীন্দ্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহ-সভাপতি। মিতা হক ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক লাভ করেন। এরপর কবি রবীরাদ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মিতা হককে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার দেয়া হয়। একই বছর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ‘রবি-চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলায় রবীন্দ্র সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মিতা হককে সম্মাননা দেয়া হয়। সঙ্গীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার মিতা হককে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিতা হকের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। রাষ্ট্রপতি বার্তায় বলেন, বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা ও রবীন্দ্রসংগীত সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিতা হকের প্রচেষ্টা মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ
১১ই এপ্রিল ২০২১