বাংলাদেশের ইতিহাসে মেট্রোরেলের প্রথম চলাচল দেখানো হয়। ছয়টি বগির সেট নিয়ে ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পাড়ি দেয়। এ ট্রেন সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত। জাপানের কাওয়াসাকি কোম্পানি ট্রেনগুলোর নির্মাতা। তাদেরই একজন চালক ট্রেনটি চালিয়ে নিয়ে আসেন। মঙ্গলবার দুপুর ১১টা ৫৩ মিনিটে উত্তরায় বৈদ্যুতিক ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে চালিয়ে কোচ আনলোডিং জোনে নিয়ে আসা হয়।এর আগে দেশের ইতিহাসে মেট্রোরেলের প্রথম চলাচল প্রদর্শন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি অংশ নেন। আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। ওবায়দুল কাদের জানান, রিসিভিং ইনস্পেকশানের পরে ডিপোতে ফাংশনাল টেস্ট করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আগস্ট মাসে পারফর্মেন্ট টেস্ট হবে। এরপরে ইন্ট্রিগেটেড টেস্ট শেষে ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হবে। মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি বাস্তবতা। ট্রেনটি ওয়ার্কশপ থেকে পাঁচ কিলোমিটার গতিতে আনলোডিং জোনে আনা হলে উপস্থিত সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। এরপর সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি কোচে ভেতরে যান। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে ট্রেনটি আবারও ওয়ার্কশপে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। গত ২১ এপ্রিল মেট্রো ট্রেনের প্রথম সেটটি জাপান থেকে ঢাকায় এসে পৌছায়, যা ফার্স্ট ট্র্যাক করা সরকারি প্রকল্পটির জন্য একটি বড় ধরনের মাইলফলক। দ্বিতীয় সেটটি রোববার মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেছিলেন, টেস্ট রানের সময় ট্রেনটি ডিপোর ভেতরের সব রেললাইনের ওপর দিয়ে চালানো হবে এবং তারপর ভায়াডাক্টেরের ( রেল সেতু) ওপর দিয়েও চালানো হবে। পরীক্ষামূলক যাত্রার সময় মানুষ উঁচু দালানের ছাদ থেকে এই কার্যক্রমটি দেখতে পাবে, বলেন তিনি। ডিপোর একটি স্থানে ট্রেনটি থামানো হলে সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ট্রেনটির ভেতরে ঘুরে দেখেন। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আরেক সেট ট্রেন মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। মেট্রোরেলের প্রথম সেটটি উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছায় গত ২৩ এপ্রিল। দ্বিতীয় সেট গত ৯ মে মোংলা সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছেছে। সেটি এখন ঢাকায় পৌঁছানোর অপেক্ষায়। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১-এর ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল চলবে রাজধানীর বুকে। অনুষ্ঠানে জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, করোনা এবং পাঁচ বছর আগে হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকাবাসীর যানজটের সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে।’ উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর হয়ে আগারগাঁও, ফার্মগেট দিয়ে শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কার্জন হল, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পুরানা পল্টন হয়ে মতিঝিলে যাবে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। সব মিলিয়ে লাইনের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার। ব্যস্ত সময়ে প্রতিটি ট্রেন ১ হাজার ৭০০ যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে ছুটবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ
১১ই মে ২০২১