Type Here to Get Search Results !

পুলিশি ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে: পরীমণি ॥ আমি স্বস্তি নিয়ে বাঁচতে চাই ॥ শিল্পী সমিতির নিন্দাঃ বাংলাদেশ

আবু আলী ঢাকা, আরশিকথা ॥

‘পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। আমি ডিবিতে নিজেই এসেছি। আমাকে তারা সাহস জুগিয়েছেন। আমি আবারও কাজে ফিরবো। আমি আসলে স্বস্তি নিয়ে বাঁচতে চাই,’ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিবি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমণি। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে যা হয়েছে, আমি আশাবাদী, আমি এর ন্যায়বিচার পাবো। পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। আসামিদের গ্রেফতার করেছে। আমি সেদিন বলেছিলাম যে, আমাকে একটু আইজিপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দিন। উনি আমার কথা শুনলে নিশ্চয়ই আমি ন্যায়বিচার পাবো। এজন্য আমি শিল্পী সমিতি, পরিচালক-প্রযোজক সমিতির নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তারা আমাকে সহযোগিতা করেননি। কিন্তু আইজিপি বিষয়টি জানতে পেরে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’ এ সময় ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা পরীমনির কাছে ঘটনা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছি, তার যে অভিযোগ, তা যথাযথভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। পরীমনিকে আমরা আশ্বস্ত করেছি। তাকে নির্ভয় দিয়েছি।’ প্রসঙ্গত, সাভার থানায় নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ ছয় জনের নামে মামলা দায়ের করেন নায়িকা পরীমণি। সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে পরীমণি নিজে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে পরীমণি বলেন, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িযোগে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হই। পথে অমি বেড়িবাঁধস্থ ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে বলে জানায়। অমির কথামতো সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনও এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। পরে আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট হতে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।
এজাহারে তিনি আরও বলেন, এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সে উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারে। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে নীলাফোলা জখম করে।

পরীমণি বলেন, আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিতে গেলে আমার ফোনটি টান মেরে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় দুই নম্বর আসামিসহ অজ্ঞাতনামা চার জন এক নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহযোগিতা করে। আমি অজ্ঞাতনামা আসামিদের দেখলে শনাক্ত করতে পারবো। এজাহারে তিনি আরও বলেন, দুই নম্বর আসামি অমি পরিকল্পিতভাবে আমাকে বর্তমান বাসা থেকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। সে, অজ্ঞাতনামা চার জন আসামি ও নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি আমার সঙ্গীদের সহায়তায় ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা পাই। রাত আনুমানিক তিনটার সময় আমি আমার গাড়িযোগে প্রায় অচেতন অবস্থায় অপর সঙ্গীদের সহায়তায় বাসায় ফিরে আসি। এরপর সোমবার (১৪ জুন) বিকালে উত্তরা এক নম্বর সেক্টরের ১২ নাম্বার সড়কের ১৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমিকে আটক করা হয়। এর আগে, রবিবার (১৩ জুন) রাতে এক ফেসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচারের দাবি জানান পরীমণি। অভিযোগ করেন, তাকে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছিল চারদিন আগে, ঢাকা বোট ক্লাবে। এমন বিস্ফোরক অভিযোগের ঠিক দুই ঘণ্টার মাথায় নিজ বাসায় বসে সাংবাদিকদের কাছে সেই অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেন পরী। তিনি অভিযোগ করেন, তার ওপর নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছেন নাসির ইউ মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ঢাকার বোট ক্লাবে ঘটে। অভিযুক্ত নাসির উত্তরা ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে ঢাকা বোট ক্লাবের এন্টারটেইনমেন্ট অ্যান্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি পদে আছেন। অন্যদিকে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান স্বাক্ষরিত সংবাদমাধ্যমে পাটানো এক বিজ্ঞপ্তিতে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দোষীদের শান্তি দাবি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার পরেপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই মামলা রুজু হয়েছে এবং কিছু আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। উক্ত মামলায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি পরীমনির সার্বিক সহযোগিতা করতে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ।’ জায়েদ খান বলেন, ‘পরীমনি আমার কাছে এসেছিল। সমিতিতে রাতের খাবারও খেয়েছে। তারপর আমি তাকে নিজের গাড়িতে করে বাসায় দিয়ে আসি। ও নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছিল। শিল্পী সমিতি শিল্পীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করে। এটি একটি অলাভজনক-অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। বিচার করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তার জন্য আইন-আদালত আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরীমনি আমাকে বলেছিল আইজিপি মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে। আমি ওকে আশ্বস্ত করেছিলাম এবং সময় চেয়েছিলাম। কারণ আইজিপি মহোদয়ের কাছে যেতে হলে একটা প্রটোকল মেনে যেতে হয়। চাইলে ওনাকে পাওয়া যায় না। উনি রাজশাহীতে ছিলেন বলে আমি পরীমনিকে সময় দিতে বলেছিলাম। কিন্তু ও আমাদের সময় দেয়নি। ওর সাংবাদিক সম্মেলনের খবরও আমরা জানতাম না। জানলে অবশ্যই পাশে থাকতাম। তবে আমি আবারো বলছি, শিল্পীর পাশে শিল্পী সমিতি ছিল, আছে এবং থাকবে।’ পরীর সংবাদ সম্মেলনের পর টনক নড়ে প্রশাসনের। মামলা গ্রহণ করা হয় সাভার থানায়। দ্রুত সময়ে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত নাসির ইউ মাহমুদ এবং অমিসহ আরও কয়েকজনকে। এ ঘটনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পরীমনি। বলেন, ‘ভরসা পাচ্ছি, আশা করি ন্যায় বিচার পাব। অন্যদিকে এ ঘটনায় নাসির ইউ মাহমুদকে বহিস্কার করে ঢাকা বোট ক্লাব।


আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ

১৪ই জুন ২০২১
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.