বাংলাদেশ-ভারতের ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্ভাবনাঃ বাংলাদেশ
আরশি কথাআগস্ট ৩০, ২০২১
0
আবু আলী
ঢাকা, আরশিকথা।।
বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চায় ভারত। বাংলাদেশ-ভারতের ১৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য সম্ভাবনা দেখছে তারা।
তরোববার (২৯ আগস্ট) ভারতীয় দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে এক সেমিনারে একথা বলেন বক্তারা।
এসময় ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশ ভারতের শীর্ষ বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশে ভারতের ৩৫৫ টি কোম্পানির ৩৫৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। কিন্তু এতে ভারত সন্তুষ্ট নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়াতে চায় ভারত। অবকাঠামো ও যোগাযোগে উন্নতি হচ্ছে। কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও আগামীতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়বে। কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশীপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে। এই চুক্তি হলে সেটি ব্যবসা-বিনিয়োগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
সেমিনারে তিনি বলেন, মোংলা ও মিরসরাইয়ে ভারতের দুটো অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশেষকরে অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ উৎপাদন, হালকা প্রকৌশল পণ্য উৎপাদন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে। ভারত বাংলাদেশকে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশীপ এগ্রিমেন্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ এ প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। বর্তমানে দুই দেশে চুক্তি করার জন্য একটি যৌথ স্টাডি করছে। ভারত ইতিমধ্যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডার সাথে এ ধরনের চুক্তি করেছে। সিইপিএ এক ধরনের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের (সাড়ে ১৩ লাখ কোটি টাকা) বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য এজন্য ইজ অব ডুয়িং বিজনেস এবং কানিক্টিভিটি উন্নত করতে হবে। হাইকমিশনার বলেন, ভবিষ্যতে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের ভিত দাঁড়াবে বাণিজ্যের উপর নির্ভর করেই। দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক বাণিজ্যর অপার সম্ভাবনা হচ্ছে সাউথ এশিয়ায়। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বড় অংশীদার হচ্ছে ভারত। সাউথ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সর্বোচচ বিনিয়োগ হচ্ছে বাংলাদেশে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ আমাদের সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান, সড়ক, রেল ও নদী পথের যোগাযোগ সম্ভব। এটি একটি অনন্য সুবিধা। পৃথিবীর খুব কম রাষ্ট্রের পক্ষেই এটি সম্ভব। এমনকি ভারতের সঙ্গে সীমান্ত থাকা অন্যান্য দেশেরও এটি নেই। এ চার মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারলে দুই দেশই উকৃত হবে বলে জানান তিনি।
সেমিনারে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (কমার্শিয়াল) প্রমেশ বাসাল। তিনি বলেন, ভারতে বাংলাদেশের রপ্টøানি বাড়ছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেশি। তিনি বিশ^ব্যাংকের এক জরিপের বরাত দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে পহৃর্ব দক্ষিণ এশিয়ায় যে পরিবহণ সংযোগ গড়ে তোলা হচ্ছে সেটি কার্যকর হলে এবং দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ১৮২ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি বাড়বে ১২৬ শতাংশ। পরিবহণ সংযোগ বাড়ানো সম্ভব হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২৯৭ শতাংশ আর বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি ১৭২ শতাংশ বাড়বে।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বিষয়ে এক প্রবন্ধে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (বাণিজ্য) প্রমেশ বাসাল বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য কয়েক দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আরও বাড়বে। যোগাযোগ সুবিধা বাড়লে বাণিজ্য যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বাড়বে। এজন্য ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাসমূহ ধীরে ধীরে দুর হবে। বর্তমানে ভারতে রপ্তানির বেলায় বাংলাদেশি পণ্যর অতিরিক্ত কোনো চার্জ নেই। এটি ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা পাচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি বিসয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। এর গন্তব্য হচ্ছে মূলত ইউরোপের দেশগুলো। কিন্তু পণ্য বৈচিত্রকরণ হলে ভারতেও রপ্তানি বাড়বে। বিশেষ করে চামড়া, খাদ্য ও কৃষি পণ্য যেগুলো নিয়ে কাজ করছে বাংলা
সেমিনারে রেল সংযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেন ভারতীয় হাইকমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা অনিতা বারিক। তিনি অক্সিজেনের প্রেরণের উদাহরণ দিয়ে বলেন, দুই দেশ সামগ্রিকভাবে কাজ করলে যে দ্রুততার সাথে রেল পরিবহণ সম্ভব তা অক্সিজেনের প্রেরণের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত থেকে অক্সিজেন নিয়ে ১৩টি ট্রেন এসেছে এবং খরচ এক লাখ রুপির মত। এজন্য অবশ্য অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি।
এ বিষয়ে হাইকমিশনার বিক্রম বলেন, রেলের পর্যাপ্ত লাইন নেই। দুই পাশেই একটি করে লাইন। কন্টেইনার ডিপোও নেই। এসব বাড়ানো গেলে পণ্য পরিবহণ খরচ কমবে। এজন্য ভারত বাংলাদেশে অর্থায়ন করতে আগ্রহী।