Type Here to Get Search Results !

দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু,শেষ হবে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়েঃ আরশিকথা বাংলাদেশ

উজ্জ্বল কুমার দাস, বাগেরহাট, আরশিকথাঃ


বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলার চরে আজ শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।এবছর শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অংশ নিতে পারবে সেখানের রাসপূজা ও পুণ্যস্নানে।

এ রাস উৎসব ঘিরে বাগেরহাট জেলা পুলিশ প্রশাসন ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে সেখানে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।গত বৃহস্পতিবার থেকে বন বিভাগের বিশেষ কয়েকটি টিম সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল শুরু করেছে।শনিবার থেকে সোমবার তিন দিন সুন্দরবনে পুণ্যার্থী ছাড়া সব ধরনের প্রবেশে পাস-পারমিট বন্ধ করেছে বন বিভাগ।

এ বছর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। পুণ্যার্থীরা নির্ধারিত রুট দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে আবার একই রুট দিয়ে ফিরে আসবে। সব পুণ্যার্থীকে অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে।

জানা গেছে, বাগেরহাট জেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের আওতাধীন দুবলার চরে প্রায় ২৩০ বছর ধরে শ্রীকৃষ্ণের রাস উৎসাব পালন করা হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, রাস উৎসবে রাতভর শ্রীকৃষ্ণের পুজা-অর্চনা শেষে পরের দিন ভোরে সূর্য উদয়ের পূর্বমুহূর্তে সাগরের লোনা জলে পুণ্যস্নান করলে সব ধরনের পাপমোচন হবে এবং মনোবাসনা পূর্ণ হবে।দুবলার চরে রাস উৎসব একসময় সব ধর্মের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু নিরাপত্তাসহ নানা দিক বিবেচনা করে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবার।রাস উৎসাবে মেলা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কীর্তন গান বন্ধ থাকবে। সেখানে শুধু রাসপূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিয়ে কোনো অবস্থাতেই সেখানে ওয়ান-টাইম প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না।সুন্দরবন বিভাগ জানায়,রবিবার সন্ধ্যায় পূজা-অচর্না শেষে সোমবার ভোরে সাগরের লোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনের রাস উৎসাব। ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে পুণ্যার্থীরা ফিরে আসবে।কোনো পুণ্যার্থী আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে না।

বন বিভাগের তথ্য মতে,পুণ্যর্থীদের তিন দিনের জন্য সরকার নির্ধারিত জনপ্রতি ৭৫ টাকা নিবন্ধনযুক্ত প্রতিটি ট্রলারের (তিন দিন) জন্য ৩০০ টাকা,নিবন্ধনবিহীন প্রতিটি ট্রলারের (তিন দিন) জন্য এক হাজার টাকা এবং প্রতিটি ট্রলারের অবস্থান ফি (প্রতিদিন) বাবদ সরকারকে ৩০০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে।

যে পাঁচটি রুট দিয়ে পুণ্যার্থীরা রাস উৎসবের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে, সেগুলো হলো : ঢাংমারী/চাঁদপাই স্টেশন-ত্রিকোনা আইল্যান্ড হয়ে দুবলার চর; বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর; বুড়িগোয়ালি, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী, এরপর দুবলার চর; কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা, এরপর শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর; নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর।

এ বিষয়ে দুবলার চরের রাস উৎসব আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে সেখানে রাসপূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি আরো জানান, “শনিবার সকালের ভাটার সময় পূণ্যার্থীরা লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা নিয়ে দুবলার চরে রওনা হবেন। লোকালয় থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে দুবলার চরে বিকালের মধ্যে তারা পৌঁছে যাবেন। ১০ হাজার এবার রাস উৎসবে পূণ্যার্থী যোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান বলেন, দুবলার চরে রাস উৎসবকে ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পূণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে ফিরে আসা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের সব সিদ্ধান্ত মানতে হবে।বাগেরহাট জেলার ডেপুটি কমিশনার মোঃ খালিদ হোসেন বলেন, দুবলার চরে রাস উৎসবে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অংশ নিতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে পূণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে। শুধু রাসপূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে।তিনি আরো বলেন, মেলা বা কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা কীর্তন গান করা যাবে না। রাসের এই আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী,কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিয়ে কোনো অবস্থাতেই সেখানে প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না।


আরশিকথা বাংলাদেশ সংবাদ

২৫ নভেম্বর ২০২৩

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.