নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
তরুণী গৃহবধূ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হল মৃতার কাকা শ্বশুর। কাকা শ্বশুরের সঙ্গে মৃতার অবৈধ সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে। খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল গত রবিবার রাতে সাব্রুম মহকুমার হরিদাস চৌধুরী পাড়ায়। সুন্দরম ত্রিপুরাকে সে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে ধৃত কাকা শ্বশুর সুনীল ত্রিপুরা। প্রসঙ্গত, গত রবিবার রাতে সাব্রুম মহকুমার রুপাইছরি ব্লক অন্তর্গত বাগমারা হরিদাস চৌধুরীপাড়া এলাকায় নিখোঁজ ১৮ বছরের জনজাতি গৃহবধূ সুন্দরম ত্রিপুরার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা সাব্রুম মহকুমায়। জানা যায়, আজ থেকে চার বছর আগে সুন্দরম ত্রিপুরার সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয় হরিদাস চৌধুরীপাড়া এলাকার জনজাতি যুবক তপন জয় ত্রিপুরা। বর্তমানে তাদের দুই বছরের একটি সন্তান রয়েছে। রবিবার বাড়ির সকলের মধ্যাহ্ন ভোজের পর সুন্দরম বাড়ি থেকে বের হয় পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করার জন্য। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও বাড়ি ফিরেনি সে। অবশেষে বাড়ির লোকজন সহ এলাকার কয়েকজন মিলে সুন্দরমকে খুঁজতে বের হয়। রাতে বাড়ি থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে এক জুম খেতে পাহাড় থেকে প্রায় ১০০ মিটার নিচে সুন্দরমের দেহ খুঁজে পায় তারা। জানা যায়, তখন তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল রক্তের চিহ্ন। গোটা ঘটনা সম্পর্কে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পায় সুন্দরম ত্রিপুরার বাবার বাড়ির লোকজন। সুন্দরম ত্রিপুরার বাবার বাড়ি দক্ষিণ জেলার জলাইবাড়ী এলাকার দেবদারুতে। ঘটনার খবর পেয়ে সুন্দরমের বাবার বাড়ির লোকজন দেবদারু আউট পোস্টে যোগাযোগ করলে দেবদারু আউট পোষ্টের পুলিশ মনু থানাকে গোটা ঘটনাটি জানায়। এরপর মনু থানার পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে সাব্রুম মহকুমার পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার সহ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সোমবার আনুমানিক ভোর চারটা নাগাদ মৃতদেহ সাব্রুম মহকুমা হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায়, সুন্দরম ত্রিপুরার ডান দিকের কপালে তিনটি ভারী আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। গাল এবং বুকে রয়েছে নখের আঁচড়। গোটা ঘটনা পরিলক্ষিত করে সাব্রুম মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার খবর দেন ফরেনসিক টিম এবং ডগ স্কোয়ার্ডকে। এরপর সোমবার দুপুরে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকার একটি স্পেশাল দল গঠন করে গোটা ঘটনার তদন্তে নামেন। এদিন রাতে ঘটনাস্থল থেকে তেমন কিছু পাওয়া না গেলেও ফরেনসিক টিম এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে থাকা পুলিশের দল সুন্দরমের হাতে ব্যবহৃত একটি তাবিজ এবং ঘটনাস্থল থেকে একটু আগে কয়েকটি গাছের পাতায় রক্তের দাগের সন্ধান বের করতে সক্ষম হন। এদিকে, এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা গুঞ্জন রয়েছে, সুন্দরমের কাকা শ্বশুরের সাথে ছিল সুন্দরমের অবৈধ সম্পর্ক। সে দু'মাসের গর্ভবতী বলেও জানা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সমস্ত ধরনের প্রমাণ সংগ্রহ করে এবং মৃতদেহের ময়না তদন্ত ও গর্ভে থাকা শিশুর ডিএনএ টেস্ট করাবে বলে জানা যায়। সোমবার রাত আনুমানিক নয়টা নাগাদ চলে সুন্দরমের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদের ফলে উঠে আসে নিহত সুন্দরমের কাকা শ্বশুর সুনীল ত্রিপুরার নাম। যার সাথে অবৈধ সম্পর্ক ঘিরে মাস খানেক আগে এলাকায় বসেছিল সালিশি সভা। সালিশি সভার পরে সুন্দরমের স্বামী ধারালো অস্ত্র দিয়ে অভিযুক্ত কাকা শ্বশুর তথা সুনীল ত্রিপুরার বাড়ির টিনের ঘর কেটে ফেলে। ফলে ভীত সন্ত্রস্ত সুনীল ত্রিপুরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় অন্যত্র। এরই মধ্যে সুন্দরমকে তার বাবার বাড়ির লোকজন দেবদারু নিয়ে রাখে সপ্তাহ দুই এক স্বামী সহ। এরই মধ্যে নিজ বাড়ি ফিরে আসে পালিয়ে যাওয়া সুনিলও। গত বৃহস্পতিবার নিহত সুন্দরম তার স্বামীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এরপর রবিবার দুপুরে লাকরি আনতে গিয়ে আর ঘরে ফিরে আসা হয়নি সুন্দরমের। ঘটনার পরই ব্যাপাত্তা হয়ে যায় কাকা শশুর সুনীল ত্রিপুরা। সোমবার রাত থেকে শুরু হয় পলাতক সুনীল ত্রিপুরাকে খোঁজাখুঁজি। বহু সময় খোঁজাখুঁজির পর গভীর রাতে সুনীল ত্রিপুরাকে আটক করে শিলাছড়ি থানার পুলিশ। রাতেই তাকে নিয়ে আসা হয় মনু থানায়। পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা যায় মঙ্গলবার আদালতে প্রেরণ করা হয় সুনীল ত্রিপুরাকে। মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নিত্যানন্দ সরকারের জোর জেরার ফলে সুনীল শিকার করে সুন্দরমকে সে নিজে হাতে খুন করেছে।পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে খুনির জুতা সহ আরো একাধিক প্রমাণ। সুন্দরমকে খুনের আগে ধর্ষন করা হয়েছিল কিনা তার জন্য সোয়াব কালেকশন করবে পুলিশ।এখন স্বজন হারা সুন্দরমের পরিবারের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠে যেন এই নর পিশাচকে অতিসত্বর ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে আদালত।
AKB TV News
19.11.2024