ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা রাজ্যে জনজাতিদের জন্য রোমান হরফের ব্যবহার নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা ভাষা ও সংস্কৃতির এক জটিল সমীকরণ তৈরি করেছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ককবরক ভাষা, যা ত্রিপুরার ১৯টি জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি প্রধান ভাষা। এই ভাষাভাষী মানুষেরা তাদের ভাষার জন্য রোমান হরফের দাবি তুলেছে। তাদের যুক্তি, রোমান হরফ ব্যবহার করলে এই ভাষা আরও সহজলভ্য হবে এবং এর প্রসার ঘটবে।
এই ভাষা আন্দোলনের আবহে অন্যদিকে, বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসছে। ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন এবং এই ভাষা রাজ্যের প্রশাসনিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই পরিস্থিতিতে, রোমান হরফের ব্যবহার বাংলা ভাষার প্রসারে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একাংশ মহলের অভিমত জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে স্কুলগুলিতে যেহেতু প্রথম থেকেই বাংলা চালু আছে এবং অধিকাংশ শিক্ষক বাংলা পড়ান তথা ছাত্র-ছাত্রীরা তুলনামূলক বাংলা ভাষা ব্যবহার করে আসছে তাই নতুন হরফ এক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
এই বিতর্কে ত্রিপুরার রাজন্য পরিবারের এক সদস্যের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য। তিনি জনজাতিদের রোমান হরফের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তার এই সমর্থন এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে, ভাষা ও সংস্কৃতির এই জটিল সমীকরণের একটি সুষ্ঠু সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি। ত্রিপুরার জনজাতিদের ভাষার অধিকার যেমন রক্ষা করা প্রয়োজন, তেমনই বাংলা ভাষার গুরুত্বকেও অস্বীকার করা যায় না। এই সমস্যার সমাধানে সরকার, ভাষাবিদ, সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ এবং উপজাতি ও বাংলা ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু আলোচনার প্রয়োজন।
এই আলোচনার মাধ্যমে এমন একটি সমাধান খুঁজে বের করা যেতে পারে, যা উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করবে। উদাহরণস্বরূপ, ককবরক ভাষার জন্য রোমান হরফের পাশাপাশি বাংলা হরফের ব্যবহারও চালু করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে, জনজাতিরা তাদের ভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ পাবে, আবার বাংলা ভাষায় শিক্ষার সহজতা বজায় থাকবে।
এছাড়াও, ককবরক ভাষার উন্নয়নের জন্য আরও বেশি সরকারি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এই ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে, ককবরক ভাষাভাষী মানুষেরা তাদের ভাষার প্রতি আরও বেশি গর্বিত হবেন এবং বাংলা ভাষার সঙ্গে তাদের সম্পর্কও আরও দৃঢ় হবে।
ত্রিপুরার এই ভাষা বিতর্ক ভাষা ও সংস্কৃতির এক জটিল সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানে সহনশীলতা, আলোচনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রয়োজন। সরকার এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব।
- ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস
ত্রিপুরা
আরশিকথা হাইলাইটস
২৪ মার্চ ২০২৫