সম্প্রতি ভারত সরকার দেশব্যাপী বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় মকড্রিলের আয়োজন করেছে।এর মূল উদ্দেশ্য হল সম্ভাব্য বিপর্যয়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জনসাধারণ ও উদ্ধারকারী দলের প্রস্তুতি যাচাই করা এবং ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে সেগুলোকে সংশোধন করা। নিঃসন্দেহে এটি একটি সময়োপযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এই মকড্রিলের কার্যকারিতা এবং জনসাধারণের উপর এর প্রভাব নিয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
মকড্রিলের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল এটি সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা বা অন্য কোনো আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, কোথায় আশ্রয় নেওয়া উচিত, জরুরি অবস্থার জন্য কী কী প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন – এই সমস্ত বিষয়ে একটি বাস্তব ধারণা তৈরি হয়। বিদ্যালয়, অফিস, আবাসন এবং জনবহুল এলাকায় এই ধরনের মহড়া আয়োজনের ফলে মানুষ জরুরি অবস্থার গুরুত্ব অনুভব করতে পারে এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত হতে পারে।
অন্যদিকে, মকড্রিলের কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উপর। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মকড্রিল শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে পালিত হয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয় না। তাড়াহুড়ো করে দায়সারাভাবে মকড্রিল সম্পন্ন করলে এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।
এছাড়াও, মকড্রিলের সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষত যারা এই বিষয়ে আগে থেকে অবগত নন, তারা আকস্মিক সাইরেন বা উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা দেখে আতঙ্কিত হতে পারেন, বিশেষ করে শিশুরা। তাই মকড্রিলের আগে জনসাধারণকে এর উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো জরুরি। স্থানীয় ভাষায় প্রচার, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ এবং গণমাধ্যমের ব্যবহার এই ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
মকড্রিলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এর ফলাফল বিশ্লেষণ। মহড়া শেষে দুর্বলতাগুলি চিহ্নিত করা এবং সেগুলোকে দূর করার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র মকড্রিল আয়োজন করাই যথেষ্ট নয়, এর থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ভবিষ্যতে দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটা কাজে লাগানো হচ্ছে, তার মূল্যায়ন করাও জরুরি। উদ্ধারকারী দল, স্থানীয় প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সমন্বয় আরও কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা উচিত।
পরিশেষে বলা যায়, ভারত সরকারের মকড্রিলের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তবে এর সম্পূর্ণ সুফল পেতে হলে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং জনসাধারণের সচেতনতার উপর আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। মকড্রিল যেন শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা না হয়ে, দুর্যোগ মোকাবিলার একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়, সেটাই কাম্য। জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনের আন্তরিক প্রচেষ্টা একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়তে সহায়ক হবে।
ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস
আরশিকথা হাইলাইটস
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
৭ই মে ২০২৫