Type Here to Get Search Results !

চেতনা এবং বাঙালি ।। আরশিকথা হাইলাইটস

শুধু ধর্ম ধর্ম করে মানুষ বিভক্ত হয়ে যায়,ছোট হয়ে যায়,নিঃস্ব হয়ে যায়। বাঙালি একটা জাতি, একটা ভাষিক সংখ্যাগত জাতি কে ধর্মের আঙ্গিকে দেখা কি ঠিক? বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, পরম্পরা সারা বিশ্বে একটা আলাদা মান রাখে। বাঙালি জাতির ইতিহাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে সভ্যতার সত্তায়। বাঙালিকে ভালো রাখতে হলে নিয়ে যেতে হবে মুক্তচিন্তার আকাশে, সংকীর্ণ ভাবধারায় বাঙালির অরুচি। বাঙালির অন্তর যে আকাশের চেয়েও বিশাল। যে ময়দান শৃঙ্খল স্বরূপ, যে ময়দান কারাগার স্বরূপ সেখানে বাঙালি কখনো ভালো থাকতে পারে না, কারণ বাঙালি তুলনামূলক স্বাধীনচেতা। বাঙালির চেতনায় উচ্চতা অনেক বেশি।

বাঙালি প্রেমকে, প্রকৃতিকে, সৌন্দর্যকে, সৃষ্টিকে আলাদা নজরে দেখে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না তাহলে যান বাউল সম্প্রদায়কে দেখুন চেতনার বিন্যাস সেখানে মধ্যবিত্ত মানসিকতা ছাড়িয়ে ঊর্ধমুখী, যৌবন সেখানে কিছু পেতে চায় না। যেন এক দেহে হাজার প্রাণ শুধু অনুভব করতে চায় বিশাল আকাশ ছাড়িয়ে ব্রহ্মাণ্ডের পরিধিকে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও প্রচলিত ধর্মতত্ত্ব এবং আচার-অনুষ্ঠানকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। তিনি মনে করতেন যে ধর্ম যদি অন্তরের জিনিস না হয়ে শাস্ত্রীয় এবং বাহ্যিক আচারকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তবে তা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে এবং অশান্তির কারণ হয়।

রবীন্দ্রনাথের মতে, ধর্ম হল মানুষের অন্তরের একটি গভীর অনুভূতি বা উপলব্ধি। এটি মানুষের আধ্যাত্মিক সত্তার সাথে সম্পর্কিত এবং মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসার জন্ম দেয়। ঈশ্বর মানেই ব্যাপক, ব্যাপিত ভাবনা।

রবীন্দ্রনাথ মানবতাকে ধর্মের মূল হিসেবে মনে করতেন। তাঁর মতে, মানুষের প্রতি সহানুভূতি, ভালোবাসা এবং সেবা করাই প্রকৃত ধর্ম।

তিনি বিশ্বাস করতেন যে জীবন ও আধ্যাত্মিকতা একে অপরের পরিপূরক। মানুষের জীবনকে সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করতে হলে তাকে আধ্যাত্মিক চেতনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ উপনিষদের অদ্বৈতবাদকে সমর্থন করতেন, যেখানে তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর এক এবং তিনি সর্বত্র বিদ্যমান।

রবীন্দ্রনাথের ধর্ম সম্পর্কিত এই ধারণাগুলি প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে ভিন্ন ছিল, এবং তিনি তাঁর লেখাতে এই ভিন্নতা প্রকাশ করেছেন। তিনি মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সহনশীলতা ও ভালোবাসার উপর জোর দিয়েছেন এবং প্রচলিত ধর্মতত্ত্বের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। 

দু'মুঠো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া বাঙালি বাঙালির স্বপ্ন নয় তাইতো বাঙালি আজ ছড়িয়ে গেছে বিশ্বের কোনায় কোনায়। কারণ বাঙ্গালী নিজে যেমন ভাবতে পারে ঠিক সেভাবে বিশ্বকেও ভাবায়। লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক বলে গেছিলেন বঙ্গ আজ যা ভাবে ভারত বর্ষ আগামীকাল ভাববে। তার চিন্তার প্রতিফলন আমরা যুগব্যাপী দেখে এসেছি।  ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেমেছে সে প্রথম বাঙালি। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করেন বাউলা ফকির সন্ন্যাসীদের দল। এই বিদ্রোহের প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন মাদারিপন্থী পীর মজনু শাহ। এটা ১৮০০ শতকের শেষের দিকের ঘটনা, বাংলা অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসী এবং কিছু হিন্দু ও মুসলিম তাপসদের দাঁড়া ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন ছিল। তাহলে ভেবে দেখা উচিত ব্রিটিশের মত শক্তিশালী ভিতকে যারা নাড়িয়ে দিতে পারে তারা সমগ্র বিশ্বকে তাড়িত করতে পারে। বাঙালিকে ছোট করে দেখো না, বাঙালির তেজ বড় উদ্দীপ্ত।


ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস


আরশিকথা হাইলাইটস

১০ মে ২০২৫

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.