মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলি প্রায়শই চমকপ্রদ হয়। এবারও ব্যতিক্রম ঘটল না। হোয়াইট হাউসের ঘনিষ্ঠ সহচর সার্জিয়ো গোরকে ভারতের রাষ্ট্রদূত পদে বসালেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিশেষ দূত হিসাবেও তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ্যে ট্রাম্প একে আস্থার নিদর্শন বলে তুলে ধরলেও, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহলে এর অন্তর্নিহিত অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
কারণ, এই সার্জিয়োকেই এক সময় প্রকাশ্যে ‘সাপ’ বলে অভিহিত করেছিলেন আমেরিকার সর্বাধিক প্রভাবশালী উদ্যোক্তাদের একজন ইলন মাস্ক। ট্রাম্পের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় মাস্কের মন্তব্য ছিল তীব্র। কেবল ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অন্তর্ঘাতের সুযোগ নেওয়ার মতো অবিশ্বাস্য চরিত্রের প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন মাস্ক। এ কথা যদি সত্যি হয়, তবে ভারতের মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশে তাঁকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো নিছক কূটনৈতিক প্রথা নয়—এ এক অভিসন্ধিমূলক পদক্ষেপ।
ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক আজ বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, জ্বালানি—সব ক্ষেত্রেই দুই দেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে। এমন অবস্থায় ‘সাপ’ খ্যাত একজন ঘনিষ্ঠ ট্রাম্প-সহযোগীর উপস্থিতি ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে বাধ্য। একদিকে ট্রাম্পের অতি-আস্থাভাজন, কখনো তিনি তাকে প্রকৃত বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন, অন্যদিকে মার্কিন কর্পোরেট মহলের সন্দেহভাজন—এই দ্বৈত পরিচয় সার্জিয়োর কূটনৈতিক আচরণে কতটা নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করবে, সেটিই মূল প্রশ্ন।
ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশল সব সময় ব্যক্তিগত আনুগত্যের উপর দাঁড়ানো। কিন্তু রাষ্ট্রনীতিতে কেবল ব্যক্তিগত অনুগতদের বসানো মানেই কি জনগণের স্বার্থ রক্ষা? নাকি এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের প্রভাব বিস্তারের পথকে মসৃণ করা? ভারতকে এই দ্বন্দ্ব খুব সতর্কতার সঙ্গে সামলাতে হবে।
আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষাই এখন মুখ্য। ‘সাপ’ যদি সত্যিই ছোবল মারে, তবে সেটি থামানোর দায়ভার ভারতের কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তার উপরেই বর্তাবে। ইতিহাস সাক্ষী—যে কোনও রাষ্ট্রদূত আসেন নিজের দেশের স্বার্থে। কিন্তু তাঁর পদক্ষেপে ভারতের সার্বভৌম স্বার্থ যাতে আঘাত না পায়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে দিল্লিকেই।
সংক্ষেপে বললে, মাস্কের সতর্কবাণী উপেক্ষা করা যাবে না। ট্রাম্পের পাঠানো এই ‘সাপ’-এর দিকে ভারতের নজর রাখতে হবে সর্বক্ষণ।
ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস
আরশিকথা হাইলাইটস
২৪ আগস্ট ২০২৫