কিছু দিন পর পর শান্ত পরিবেশের রাজত্বে মনেরর বন্দীত্বে যখনই বাঁধা পড়ি তখনই মনে হয় কোনো এক অজানা অদেখা প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য্যের মধুর আবেশে নিজের চোখ আর মনের খিদে মিটিয়ে নেই।
সে যাই হউক অনুসন্ধিৎসু মন খুঁজতে থাকে নতুন একটা ভ্রমণ স্থান।হঠাৎই মনে পড়ে গেলো কেনকুনের কথা যা কিনা উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোর মধ্যে স্থিত।
শুনেছি সমুদ্র ও সমুদ্র সৈকতের মোহময় রূপে এ জায়গাটা নাকি এক নম্বরে ।তখন থেকেই মনে হচ্ছিল কেনকুন আমাকে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
ভাগ্যবশতঃ ঘোরাফেরার ব্যাপারে আমার পরিবারে আমার ইচ্ছেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ।তাই মনের বাসনাটুকু জানাতেই গত ২০২৪ এর বড় দিনের ছুটিতে আমার বর ও ছেলের সাথে বেড়িয়ে পড়ি কেনকুনের উদ্দেশ্যে ।প্রথমে প্লেনে করে আমরা ছেলের ওখান থেকে অর্থাৎ আমেরিকার কলম্বাস থেকে শিকাগোতে যাই ।ওখানে দেড় ঘণ্টা লে ওভারের পর আবার বিমান করে গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যাই ।মোট বিমান যাত্রাটির সময় ছিল সাত ঘন্টা দু মিনিটের।
প্রায় বিকেল হয়ে গিয়েছিল ।ওখান থেকে আমার ছেলে একটা গাড়ি রেন্ট করে নিজেই ড্রাইভ করে আমাদের বুক করা এয়ারএনবির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।শুরুতেই শহরে ঢোকার রাস্তার দু ধারে ফুটেআছে অজস্র বাহারি ফুল আর তারই সাথে আছে ঘন সবুজ পাতায় আবৃত সব একই আকারের বড় বড় অচেনা গাছ আর ওখানকার বিশেষত্ব নারিকেল গাছ।শুরুতেই ভীষণ ভালো লাগছিল। রাস্তার দু পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম আমাদের আশ্রয় স্হলে। খুব ক্লান্ত লাগছিল নিজেকে সারাদিনের জার্নিতে তাই তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
পরদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে দেখি মনলোভা অপরূপ দৃশ্যায়নের মাদুর বিছিয়ে,মেক্সিকোর বিশেষ আকর্ষণ “কেনকুন “ দাঁড়িয়ে আছে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে। প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যের মাঝে মিলেমিশে আমার কবি সত্তা মনের মাঝে ক……ত কথা বলছিল।যাইহোক এখন ফিরে আসি বর্ণনায় ঘন নীল জল বেষ্টিত আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে,দূর হতে বহু দূরে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ গুলি দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্রের চকচকে আলো গায়ে মেখে ।যখন ওদের উপর সোঁ সোঁ শব্দে বয়ে যায় গতিময় পবন তখন মনে হয় ওরা যেন মাথা নুইয়ে বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের জানাচ্ছে সাদর সম্ভাষণ ।
বিকেলের শেষ লগ্নের বিদায় বেলায় মহাসাগরের তটে বৃহদাকারের সাদা ধবধবে প্যালিকান গুলি একমনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মাছ ধরার আশায়।আবার মহাসাগরের অপর প্রান্তে অর্থাৎ যতটুকু দৃষ্টি যায় সূর্যাস্তের সোনালি আলোক রেখা আর গাঢ় নীলজলরাশি মিলেমিশে সৃষ্টির আবেশে ওরা প্রকৃতির বুকে অপূর্ব ছবি এঁকে যায় অনাবিল সৌন্দর্য্যের আধারে।নিয়ম মেনে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যা। তারপর রাতের আঁধারে তারা ভরা আকাশতলে সেকালের জলদস্যুদের জাহাজের অনুকরণে রঙীন আলোকসজ্জায় পাইরেটস্ গুলি দূর হতে বহুদূরে পাড়ি দেয় ভ্রমণকারীদের নিয়ে । জাহাজের ভেতরে অতীতে ওদের মায়ান সভ্যতার কৃষ্টি,সংস্কৃতি ও সাহিত্য নিয়ে নাচ গান থিয়েটারে ভরপুর সমুদ্র যাত্রায় ওদের ইতিহাস যেন অনর্গল কথা বলে যায়।সমুদ্র গর্জনের সাথে যখন পাইরেটস্ গুলির আওয়াজ শোনা যায় তখন সমুদ্র তট হতে আমার মনে হতো আমি যেন ওদের বহু আগের যুগে দাঁড়িয়ে আছি ।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
বিদেশের অনেক সি বীচে বেড়াতে গেছি তবে কেনকুনের সৌন্দর্য্য আলাদা যা বর্ণনা করলেও মনে হয় কম বলা হলো ।কেনকুনের সাথে মেরিদা শহর ও সিলেস্টোনে গাল্ফ অফ মেক্সিকো বীচে ও গিয়েছি । তারই সাথে চিচেন ইৎজা নামে মেক্সিকোর এই জায়গাটিতে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য বিশালাকারের পিরামিড ও দেখেছি।কেনকুন থেকে এ জায়গাগুলির দূরত্ব ড্রাইভে তিন চার ঘণ্টা করে লাগে।ইচ্ছে আছে আগামী ভ্রমণ কাহিনীতে ঐ তিনটি জায়গা নিয়ে লিখবো।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
আমার এ প্রকৃতির প্রতি নিগূঢ় ভালোবাসায় আমার মন প্রাণ খুলে বলতে ইচ্ছে হয় “অকৃত্রিম অপূর্ব দৃশ্যাবলীর আভরণে,এ পৃথিবী মোহময় মধুময় আমার ক্ষয়িষ্ণু ভুবনে”।
স্বাগতা ভট্টাচার্য
কানাডা
আরশিকথা ভ্রমণ
১০ই আগস্ট ২০২৫