Type Here to Get Search Results !

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ১৯ জনের ফাঁসি

প্রভাষ চৌধুরী, ব্যুরো এডিটর, ঢাকা: বাংলাদেশের বহুলালোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং অন্য ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বুধবার(১০ অক্টোবর) সকালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এ রায় দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। অত্যন্ত গোপনীয়তা এবং কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বুধবার (১০ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১১টার কিছু পর বহুল আলোচিত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় বিচারক আদালতের এজলাসে উঠেন। ১১টা ৪০ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন। শুরুতে এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় পড়েন বিচারক। রায়ে লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জেএমবি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা জন্য আর্থিক সহায়তা এবং গ্রেনেড সরবরাহ করার জন্য মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। এছাড়া রায়ে বলা হয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা, আলামত ধ্বংসে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ পরিকল্পনার অপরাধে তাদের যাবজ্জীবন দেয়া হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এটি পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা, তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়। রায়ে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেই জন্য্ আইন- শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সর্তক থাকার নির্দেশ দেন। রায়ে আরো বলা হয়, আসামিরা রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। এদিকে, রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, রায়ে ৪৯ আসামির সবার সাজা হওয়ায় এর মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মাননীয় আদালত বলেছেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল এবং শেষ বুলেটটা শেখ রাসেলের ওপর দেয়া হয়েছিল ঠিক একই অভিপ্রায়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, তারেক রহমান, মুফতি হান্নান, আব্দুস সালাম পিন্টুসহ এরা একত্রিত হয়ে একটি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল।’ তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলেও জানান তারা। ‘এখানে তারেক রহমানসহ বিএনপির যে নেতাকর্মীরা এই মামলার আসামি হাওয়া ভবন এবং আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি। কেউ এই মামলায় এই বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়নি। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। মুফতি হান্নানকে ৪শ’ দিন রিমান্ডে রেখে যে জবানবন্দী নেয়া হয়েছে। সেই জবানবন্দীও তিনি প্রত্যাহার করেছেন। তিনি বলেছেন তারেক রহমানের সঙ্গে এবং বিএনপির নেতাদের সঙ্গে তার কোনো দিন দেখায় হয়নি।’ এই রায় বিচার বিভাগের ইতিহাসে বড় সার্থকতা বলে উল্লেখ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। এ রায়ে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। এতে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

১০ই অক্টোবর ২০১৮ইং

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.