Type Here to Get Search Results !

করোনায় ম্লান বৈশাখ উৎসব" ...... ঢাকা থেকে মাহাবুবা লাকি

পহেলা বৈশাখ অবশ্যই বাঙালির প্রাণের উৎসব এবং প্রধান সাম্প্রদায়িক মিলনমেলা।অনেকেই এর মহত্ত্ব কম বোঝে।একটি দেশের কৃষ্টি ক্যালচারে এর ব্যাপ্তি যে কতখানি অনেকেই ধারণা করতে পারে না।জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব বাঙালির সব বাঙালির প্রাণের উৎসব এটি। পহেলা বৈশাখ বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস এবং বঙ্গাব্দের প্রথম দিন যেটিকে আমরা বাংলা নববর্ষ হিসেবে ধরে নিয়েছি।সেই থেকেই বিভিন্ন দেশ এপ্রিলের মাঝামাঝি বা বৈশাখ মাসের ১লা তারিখে এটি উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে। পৃথিবীর সকল দেশের বসবাসরত বাঙালিদের কাছে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ এই দিনটিকে নববর্ষের বিশেষ দিন ধরে উৎসব পালন করে। যেকারণে এটি বাঙালিদের একটি সার্বজনীন লোক উৎসব হিসেবে চিরায়ত বাংলায় উৎসব হিসেবে প্রভাব বিস্তার করেছে। সেই আগেরকার দিনগুলোতে মূলত কৃষিনির্ভর বিভিন্ন ফসল ও ফলনশীল ও ঋতুর উপর গনণা করে তারা উৎস ব পালন করত। কারণ তখন তো প্রাযুক্তিক কোন প্রয়োগ ছিলনা।কৃষকরা ঋতু ও ফসল উৎপাদনের মাস হিসেবে গনণা করে ফসল ফলাত। আগে তো এমনটি ছিল না। এখন যেমন নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সার্বজনীন উৎসব হিসেবে এই দিনটি ধরে নেওয়া হয়েছে। যে কারনে এই দিনটি বাঙালিদের জীবনে শুধু বর্ষবরণই নয়, এটি পুরো দক্ষিন এবং দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় একটি বিশেষ উৎসবে পরিনত হয়েছে।এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃ গোষ্ঠীরা ও একই দিনে এই সময়টি তাদের নিজেস্ব সংস্কৃতির বলায়ে উপভোগ করে। সমায়ের পরিক্রমায় পাল থেকে সেন, সেন থেকে নানা চড়াই- উৎরাই পেরিয়ে মুসলিম মুগল সম্রাটদের হাতে যখন ভারতবর্ষ চলে আসে।তখন তারা হিজরি সাল ধরে প্রথম ক্যালেন্ডার প্রচালন শুরু করেন। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পৃথিবীর খুব কম দেশেই একটি নিজেস্ব পঞ্জিকা আছে। সেদিক থেকে আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের নিজেদের একটি নিজেস্ব পঞ্জিকা আছে। যা আমাদের সাল, মাস, দিন, ঋতুর ক্ষেত্রে সর্বপ্রকার স্বকীয়তা বজায়ের সহায়ক। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলা। এটি প্রধানত কৃষি ও গ্রাম প্রধান দেশ।আবহমান কাল ধরে হিন্দু মুসলিম মিলেমিশে বসবাস করে আসছে।১৪২৬ সালের শেষদিন আজ।এই দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি দিন হিসেবে ও পালন করা হয়। বৈশাখের এই দিনগুলিকে সামনে রেখে শহর ও গ্রামে নানা আয়োজনে মেলা বসে।নাগরদোলা, পুতুলনাচ,যাত্রাপালার মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর এই দিনটি পালন করার মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়।আনন্দঘন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি নেচে গেয়ে সংস্কৃতির ঐতিহ্য দিয়ে দিনটিকে রাঙিয়ে তোলে। সরকারকে যেমন বছরে একবার খাজনা দিয়ে জনগন দায়মুক্ত হন।তেমনি যাবতীয় বকেয়া পরিশোধ করে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে ক্রেতাদের ও মুক্তির দিন এটি।এদিন লক্ষ্য করা যায়, দোকানে দোকানে ব্যাবসায়ীরা নতুন হাল খাতা খুলে বসেন।আনন্দ উৎসবমুখর পরিবেশে মিষ্টি মান্ডা ও মজাদার খাবারের মধ্য দিয়ে অতীতের সব দায় দেনা মিটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। রক্ত চোষা পাকিস্তান ছিল বাংলা বিদ্বেষী। তাদের ধারনা বাংলা হিন্দুদের ভাষা।তাই পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্র সংগীতচর্চা তারা বন্ধ করে দেয়।এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯ ৬৭ সালে ছায়ানটের শিল্পীরা পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে সমবেত হয়ে ------- এসো হে বৈশাখ --এসো এসো ------ রবীন্দ্র সংগীতটি পরিবেশন করেন। মূলত সেই থেকেই রমনার বটমূলে নববর্ষ উদযাপনের প্রথা শুরু হয়।যা পরবর্তীকালে আবহমান কাল ধরে এই বাংলা উৎসব হিসেবে ধারণ করেছে এবং ধীরে ধীরে তা গরমে পান্তা-ইলিশ ও রকমারি ভর্তায় দিনটি শুরু হয়। ১৪২৬ সালের বিদায়, শুরু ১৪২৭ সালের। বছরের যত পুরাতন জরা জীর্ণ গ্লানি সব কিছু ভেসে যাক,মুছে যাক যত আঁধারের ছায়া।১৪২৬ সালের শেষদিনের বিদায়ী সূর্যের কাছে আজ আহবান জানালো বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বাঙালি জাতি। আহ্লাদিত শরীরে গরমকে প্রশ্রয় দেওয়া,রোদে পুড়ে ঘর্মাক্ত দেহে ঘুরেবেড়ানো, পরনে বৈশাখী ড্রেস, মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ এসব দিয়েই বর্ষবরণ করা হতো।তবে অন্যান্য বার থেকে এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। করোনার মারাত্বক আক্রমণ বিশ্বকে স্থম্ভিত করে দিয়েছে।সংগত কারনে এবার চৈত্র সংক্রান্তি বা নববর্ষ পালিত হবে না।এসব নিয়ে সবাই একদিকে যেমন মরণের ভয়ে আছে অন্যদিকে বাঙালীদের মন ক্ষুন্ন ও । তবু ও ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবাই মনে প্রাণে মেনে নিয়েছেন এই ক্রান্তিকাল। আধুনিকতার লাইফস্টাইলে এখন যোগ হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যাতিক্রম কর্মসূচি। পছন্দের মানুষকে মোবাইলে এস এম এস ও ম্যাসেঞ্জারে এগুলো না হলে যেন জমবেই না ১লা বৈশাখ। সেটা ঘরে বসে সবাই হরদমে চালাতে পারবেন।
এসো ১৪২৭ স্বাগতম তোমায়।তোমার দারে শানিত হই নবপ্রাণে, নব কল্লোলিত উদয়ের আলোকিত বানী নিয়ে। আমরা আশাকরব প্রত্যাকের জীবন থেকে করোনা নামক অভিশাপ দূর হবে আমরা আবার জ্বলে উঠব আরো আলোকিত হবো।

মাহাবুবা লাকি,ঢাকা

১লা বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
১৪ই এপ্রিল ২০২০ইং

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.