Type Here to Get Search Results !

জনসচেতনতামূলক কর্মসূচীর দাবিতে কেন্দ্রীয় খেলাঘরের মানববন্ধন


আবু আলী, ঢাকা, আরশিকথা ।।

বাংলাদেশে বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোতে নিরাপদ শিশু খাদ্য বিতরণ ও পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে সরকারী পর্যায়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী নেয়ার দাবি জানিয়েছে জাতীয় শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেশের বৃহত্তম এই শিশু কিশোর সংগঠনের পক্ষে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচী থেকে এ দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে খেলাঘরের পক্ষ থেকে ই-মেইলে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। একই দাবিতে দেশের প্রায় সকল জেলা শাখার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিশে^র ন্যায় বাংলাদেশও প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল যখন বাড়ছেই ঠিক তখন দেশের ৩১টি জেলা বন্যা কবলিত। প্রায় মাসব্যাপি বন্যার পানিতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠেছে। বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও শিশুদের জন্য আলাদা করে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে বন্যার্ত শিশুরা কষ্টে দিনাতিপাত করছে। প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খাদ্যের অভাবে শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তাই বন্যার সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে (গুঁড়া দুধ/ সেরেলাক/খেজুর/ বিস্কুট/ ফল/ কিশমিশ) প্রভৃতি খাদ্য ত্রাণ হিসেবে শিশুদের দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আশাকরি সরকারী ত্রাণের সঙ্গে এসব শিশুখাদ্য বিতরণে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পানিতে ডুবে দেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলেও এর প্রতিকারে সরকারী-বেসরকারী কোন সুনির্দিষ্ট কার্যকর কর্মসূচী নেই। ‘ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, দ্যা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বা সিআইপিআরবি এবং আইসিডিডিআরবি'র’ এক যৌথ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে জনসংখ্যার অনুপাতে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বলে বলা হয়েছে।
এদিকে জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। আর উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামকে এদিক দিয়ে ‘সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ)। এ জেলায় গত পাঁচ বছরে শুধু বন্যার পানিতে ডুবে ৭৯ জনের মৃত্যু হয়েছে; যার মধ্যে ৫৭ জনই শিশু। চলতি বন্যায় পানিতে ডুবে এরই মধ্যে ১৪ শিশুসহ ১৯ জনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে।
এর বাইরেও এবারের বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নিলফামারী, লালমনিরহাট, বগুড়া, জামালপুর, শেরপুর, মুন্সিগঞ্জ, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অনাকাক্সিক্ষত এই মৃত্যুর ঘটনা সত্যিই খুব বেদনাদায়ক। সেইসঙ্গে ভবিষ্যত প্রজন্ম এভাবে অকালে ঝড়ে গেলে আলোকিত ও মেধাবী সমাজ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সারাদেশের খেলাঘরের কর্মী সংগঠকরা সাধারণ মানুষদের যুক্ত করে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি সামনের দিনগুলোতেও আরও বৃহৎ সচেতনতামূলক কর্মসূচী হাতে নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অভিভাবকরা সব সময় অত খেয়াল করেন না, বন্যার এই দুর্যোগে অনেকেই এ দিকে মনোযোগ দেন না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করার জন্য উদ্যোগ থাকা দরকার। কুড়িগ্রাম ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের বন্যায় এ জেলায় ২১ জনের মৃত্যু হয়; এর মধ্যে ১৬ জনই শিশু। ২০১৮ সালে পানিতে ডুবে কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া না গেলেও ২০১৭ সালে ৩০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের ২০ জনই শিশু। এর আগে ২০১৬ সালে ছয় শিশুসহ ৮ জন এবং ২০১৫ সালে এক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
সংগঠনের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুল মতিন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রণয় সাহা, শফিকুর রহমান শহীদ, সিজার মল্লিক, সাহাবুল ইসলাম বাবু, রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব মন্টু, সাংবাদিক অশোকেশ রায়, সাংবাদিক রাজন ভট্টাচার্য, আশরাফিয়া আলি আহমেদ নান্তু, আসমা আব্বাসী উর্মী, নসরু কামাল খান, অনিকেত আচার্য, প্রবীর সাহা, প্রমুখ।

২৯শে জুলাই ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.