দাওয়ায় এক মুখ কাঁচা পাকা দাড়িতে অভাবী উদাস মুখে বসে রথীন মাস্টার মশাই।এক কালে চাটাই পেতে রমরমিয়ে চলা ওনার টিউশন বেশ জনপ্রিয় ছিল।শুধু এ গ্রাম নয় আসে পাশের সব গ্রাম থেকে পিল পিল করে ছাত্র ছাত্রীরা পড়তে আসতো।বারান্দায় জায়গা না পেয়ে উঠোনেই বসে পড়তো তবু পড়তে আসা চাই।সুর তুলে সেই ভোর থেকে মাস্টার মশাই এত সুন্দর বুঝিয়ে পড়াতেন যে পথ চলতি মানুষেরা দুদন্ড দাঁড়িয়ে শুনতেন। এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়া দায় যে রথীন মাস্টারের কাছে পড়তে আসে নি !
তোর ছেলে নাকি? প্রতিবেশী লক্ষীকে প্রশ্ন করলো রথীন মাস্টার মশাই।।লক্ষী ইশারায় হ্যাঁ বলতেই খুশি হয়ে উনি বললেন,"বাহ অনেক বড় হয়ে গেছে তো?
প্রণাম করে আমায় আশীর্বাদ চেয়ে বলছে কি লাগবে বলুন স্যর।"
হ্যাঁ জ্যেঠু,আপনি পিতৃতুল্য ।আপনার আদর্শে ,শিক্ষায় আমার ছেলে আজ প্রতিষ্ঠিত।তাই তো আশীর্বাদ নিতে হাজির হয়েছি মা বেটা সকালে। অবস্থার সঙ্গীন দশায় ,ভগ্ন শরীরে উদ্ভ্রান্ত রথীন মাস্টার এক প্রকার ভবঘুরের জীবন কাটায়।আশীর্বাদ কথাটি শুনে চক চক করা লোভাতুর চোখে মাস্টার মশাই উদগ্রীব হয়ে বললেন "আমার দুবেলা ভাতের ব্যবস্থা করতে পারো?এটাই হবে আমার প্রতি দারুন গুরুদক্ষিণা।"
কানে হেড ফোন গুঁজে ইংলিশ গান শুনতে শুনতে উদাসীনতায় ভরপুর স্মার্ট ছাত্র পালাতে পারলে বাঁচে।পা ঘষতে ঘষতে বললো "দেখেছো, কি লোভ মা, বলেছিলাম আসবো না,তুমি জোর করলে তাই পা স্পর্শ করে প্রনাম করতে হলো।"
"অমন নন উনি।তুই থাম তো,উনি রথীন মাস্টার,আমাদের নমস্য। আজ কপালের ফেরে এই ক্ষয়িষ্ণু দশা।সম্মান করতে শেখ বলে রাস্তায় মৃদু ধমক দিলেন ছেলেকে মা।
"হ্যাঁ গো মা জানা আছে,তোমরা গাঁইয়াই রয়ে গেলে এখনো-শালা একটা জন্ম ভিখারি"!এমন জানলে আসতাম না বলতেই সপাটে এক থাপ্পড় খেলো মায়ের কড়া হাতের
"ইস,থাম তুই।এই শিক্ষা পেয়েছিস শহরে পড়তে গিয়ে !"উত্তেজিত হয়ে লক্ষী লাল চোখে ছেলের দিকে তাকাতেই সে গট গট করে এগিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
"কিচ্ছু চাইনা বাবা ।নিজের মাকে অন্তত দেখো ।আমি তো পরীক্ষা করছিলাম তোমায় । এ গ্রামে আদর্শ ছাত্ররাই আমার বড়ো ভরসা ওদের দয়াতেই দুবেলা দু মুঠো জুটে যায় ওতেই আমি খুশি বলে ফোঁকলা দাঁতে রথীন মাস্টার আবার উদাস হল।
রাণা চ্যাটার্জী,বর্ধমান
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
৫ই সেপ্টেম্বর ২০২০