প্রত্যেকটি বিশেষ দিনের কিছু মাহাত্য রয়েছে।জীবনভার বইতে গিয়ে অজান্তেই আমরা অনেক কিছুর গুরুত্ব দিতে ভুলে যাই।নির্দিষ্ট দিনগুলিতে যথার্থ গুরুত্বপ্রদান করে আমরা তার প্রায়শ্চিত্ত করি বোধহয়।ব্যক্তিগত মতামত।তবে জীবনকালে বিশেষ দিন থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি।শুদ্ধিকরণ কিংবা প্রায়শ্চিত্ত যাই বলিনা কেন আমাদের অভ্যেস গড়তে তার থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করি।
আজ শিক্ষক দিবস।শিক্ষক কিংবা গুরু শুধুমাত্র স্কুলে বা কলেজে কিংবা পাঠশালায় থাকেন না।তাঁরা থাকেন জীবনের প্রতিটি খাঁজে,প্রতিটি সফলতায় আর ব্যর্থতায়।প্রত্যেক ঘুরে দাঁড়ানোর জীবনে তাঁরাই হন অন্যতম পথপ্রদর্শক।কখনো মানুষরূপে কখনও বা অভিজ্ঞতা,সময়,পরিস্থিতি অথবা পরিবেশ রূপে।নানা রূপে শিক্ষাদানে শিক্ষক কিংবা গুরু থাকেন বলেই বার বার পরাজয়েও জীবন ঘুরে দাঁড়ায়।শত সমস্যায় কিংবা ঝড়বাদলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে শেখায়।সবথেকে বড় কথা মানুষকে মান ও হুঁশ সম্পন্ন হয়ে বাঁচতে শেখায়।নিষ্ঠা,সততা,ধৈর্য সহকারে নিজ কর্ম এবং দায়িত্ব পালনে তৃপ্ত হতে শেখায়।মানবিক মূল্যবোধই জীবনের উচ্চবোধ তার শিক্ষা গুরু ছাড়া অসম্ভব।গুরুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করার জ্ঞান তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া যায়।শিক্ষক এবং গুরুর প্রতি আজীবন শ্রদ্ধাবনত থেকে তাঁর আশীর্বাদধন্য হতে পারলে জীবনে আর কোন শক্তির প্রয়োজন পড়েনা বলেই মনে করি।
বর্তমান সময় গুরুশিষ্যের সম্পর্ক বন্ধুত্বের।নিশ্চয় হওয়া উচিত।তাতে যেকোনো অভাবে তাঁর উপদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে শ্রদ্ধাভক্তি যেন হাল্কা না হয়ে যায় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কারে গুরুকে উচ্চ মর্যাদার আসনে বসিয়ে রাখার রীতি রয়েছে।তাই শিরোধার্য হোক।
আরেকটা বিষয় না বললেই নয়।আমরা এমন কোন শিক্ষা হয়তো অর্জন করিনি যেখানে নিজের অর্জিত যেকোনো জ্ঞানকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অপরকে ছোট দেখাতে হয় কিংবা দক্ষ ও সফল হয়েও সমাজের প্রতি নিজ দায়িত্ব ভুলে অপরের কর্মের প্রতি অধিক নজরে নিজের জ্ঞানকে অস্তমিত রাখি...সময় নষ্ট করি।প্রযুক্তি এই কাজটির জন্য বিশেষ একটি যন্ত্র আবিষ্কারও করেছে।দুঃখ হয় আজ আমরা সেই যন্ত্রের ভূমিকায় দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করি।পুরাণ থেকে জানা যায় তখনকার সময়ে গুরুগৃহে গিয়ে শিক্ষালাভের একটা বিশেষ গুরুত্ব ছিলো।কারণ শিক্ষা এবং তার ব্যবহার করার অভ্যেসও অর্জন হতো।বিনয়ী হবার অভ্যেস গড়তো। প্রকৃত জ্ঞানীরা বিনয়ী হন।জোর করে কিছু হয়ে থাকলে একদিন নীল রঙ খসে আসল রূপ বেরোবেই।
আজকের দিনে আমাদের গুরুর খুব প্রয়োজন।শিক্ষা,দক্ষতা এবং সফলতা প্রচুর কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের বিচারে আমরা আজ অনেকটাই ব্যর্থ।
আজকের দিনে তাই শিক্ষক এবং গুরুর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষায় আমাদের শিক্ষিত করার দায়িত্বে জীবনে অবতীর্ণ হন...সদা অবস্থান করেন।
নত মস্তকে প্রণাম আপনাদের।।
প্রধান সম্পাদকের কলমে
৫ই সেপ্টেম্বর ২০২০