"শান্ত স্নিগ্ধ সকাল হলো। ঘুম ভেঙে দেখলাম আজ আমার থাকার ঘর টা অন্য রকম। দেয়ালে চারপাশে আকাশী রঙের আবরণ আর সিলিং টা সাদা রঙের। একটা সিঙ্গেল সাদা বেড আর মাথার পাশে একটা
ছোট্ট টেবিল তাতে কিছু রাখা ফলমূল।
আমার খাটের কিছু দূরে একটা কাঠ ক্লোসেট জানালা
মেলে দিলে দূর বিস্তৃত বাগান দেখা যায়।
জানলার সাথে লাগোয়া একটি আইভরি হোয়াইট কালারের স্টাডি টেবিল আর আমার প্রিয় লাল রঙের মলাট বাঁধানো ডায়েরি, কিছু কবিতা, উপন্যাসের বই কিছু খুচরো কাগজ আর আমার ব্যবহৃত ঝর্ণা কলম।
বাগানের ফুলের ম-ম গন্ধ পাচ্ছি।
বাহ বেশ চমৎকার করে সাজিয়ে দিলো তো কেবিন খানা ঠিক যেমন টি চেয়েছিলাম অথবা করেছিলাম আবদার।
ডক্টর রাই জিজ্ঞেস করেছিল কি আমার শেষ ইচ্ছে?
বলেছিলাম এমন একটা রুম করে দিতে যেটা হাসাবে আবার কাঁদাবে আমায়
ওহ!
আমার পরিচয় টা দেওয়া হয় নি আমার নাম "
"কাব্যানিশি"
টাইটেল না হয় নাইবা বললাম বাবা মা কাব্য বলে ডাকতো! এখন গত হয়ে গেছেন। একমাত্র মেয়ে তাদের আমি বয়স ত্রিশ ছুঁলো গেল মার্চে। পেশায় জার্নালিস্ট।
লেখালেখি টা আঁকড়ে ধরে আছি আজো। পেশায় ক্রাইম রিপোর্টার হলেও এডভেঞ্চার প্রিয়। কাজ করি
" নব কিরণ " পত্রিকার "সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার"
হিসেবে কিন্তু বিধি বাম বিধাতার সমস্ত রোশ পড়ে আছে আমার উপর খুব কৌতুহল জাগল তাই না কেন আমি আজ এখানে গত কিছুদিন আগে হঠাৎ প্রচন্ড মাথা ব্যাথা অফিস থেকে ফিরছি। আগে থেকে ছিল গাঁ করি নি তেমন কিন্তু হঠাৎ করেই সেইজার হয়
খুব ঘুম পাই, স্মৃতিশক্তি ও নড়বড়ে মনোযোগ দিতে পারি না তেমন চোখ ঠিক থাকা সত্ত্বেও কোনও কারণ ছাড়াই দৃষ্টি ঝাপসা দেখি কথা জড়িয়ে যায় মেজাজ টাও খিটখিটে চলাফেরা করি এলোমেলো গা-বমি ভাব বা বার বার বমি আসে হঠাৎ করে জ্বর আসে। কেমোথেরাপি থেকে শুরু করে হরেক পদের পরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত পেল ব্রেন ইনজুরি ক্যান্সার হয়েছে আমার ব্রেন ক্যান্সার যাকে বলে স্টেজ লাস্ট মাথার যন্ত্রণাটাও বেশ। চুল সব পড়ে পরিষ্কার এখন। ডক্টর টা বেশ ভালো নাম কি যেন ডায়েরি তে লেখা আছে ওহ হা
ডক্টর "অমলেশ রাই " উনি জিজ্ঞেস করছিলেন আমার প্রিয় কোন ইচ্ছে তাকে বলার জন্য আমার জন্য স্পেশাল তেমন না আমার মতো যারা তাদের সবার সাথে তিনি এই ভাবে আনন্দ করেন এটা তার নাকি ব্রত বেলা গড়িয়ে গেছে হাত অবসন্ন চোখ মেলে আছি অস্পষ্ট দৃষ্টি মেলে এই এক্ষুনি বন্ধ হয়ে যাবে সব অন্ধকার হয়ে আসবে একেবারে আমার আর লেখা হবে না করা হবে না এডভেঞ্চার ইচ্ছের রংধনু আর জাগবে না হাত ঝুলে আছে আমার মাথা টা অবনত হয়তো আজ আমার শেষ সকাল দেখা তাই ডায়েরির......
আর লেখা হয় নি মেয়েটির পড়ছিলাম ওর ডায়েরি টা নিশির ডায়েরি আমাদের "কাব্যানিশি " আর লেখা টা পড়া হবে না ডায়েরির পাতা অসমাপ্ত করে জীবনসন্ধির পাঠ চুকিয়ে চলে গেছে ও আমায় ডাকত অমলেশ বাবু বলে ডাকটা খুব মিস করব
কেএএএএ ও আচ্ছা তুমি হ্যাঁ আসছি রাউন্ডের টাইম হয়ে গেছে।
আজ আসি আবার নতুন কারো ডায়েরি তে লেখা নিয়ে আসবো না হয়।
ভালো থাকবেন।
ভালো থেকো "ক্যাবানিশি রাঠোর"
----------------------------- ------------------------------ ---
নন্দিতা ভট্টাচার্য্য রাজকন্যা
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
২০শে এপ্রিল ২০২০