Type Here to Get Search Results !

অন্তর্দহন *##* -- ত্রিপুরা থেকে টিঙ্কু রঞ্জন দাস এর ছোট গল্প

অ্যাই, অ্যাই, ছাড়ো, ছাড়ো বলছি। এখনই কেউ আসবে। আমাদের দু'জনকে এই অবস্থায় দেখতে পেলে মান সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না। থতমত খেয়ে অচিন্ত্য বিছানা ছেড়ে উঠে। পাশেই টেবিলে রাখা বোতল থেকে ঢকঢক করে কিছুটা জল মুখে ঢালে। শরীরটা কাঁপছে। ঘাম এমনভাবে ঝরছে যেন এক্ষুনি কাঁপুনি দিয়ে জ্বরটা ছাড়লো। অভিলাশা তো অনেকদিন হলো এ বাড়িতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। সেও এক সামান্য ঘটনা থেকেই। অচিন্ত্য সে ঘটনাটা এখনো ভুলতে পারছে না। সে জানে, মনে মনে সে অভিলাশা কে ভালোবেসে ফেলেছিল এবং দু-একবার সে প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। অভিলাশা যে সেটা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করত অচিন্ত্য ঠিক বুঝতে পারতো। যেদিন সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল, আজ অভিলাশা আসা মাত্রই তার মনের কথাটা খুলে বলবে সেদিনই ঘটনাটা ঘটে।
এখনো ঠিক মনে আছে। দিনটা ছিল বুধবার। দুপুরের ভাতটা খেয়ে শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিতে একটু ঘুম ঘুম ভাব অচিন্ত্য কে ঘিরে ধরে। অভিলাশার আসার সময় এখনো অনেকটা দেরি। রোজ যেমন সাড়ে তিনটা চারটার দিকে একবার আসে আজও হয়তো সে সময়ই আসবে। তাদের দুটি বাড়ির মাঝখানের দূরত্ব তো মাত্র কয়েকটি বাড়ি।সবাই যখন দুপুরের পরে ভাতঘুমে ব্যস্ত থাকে তখনই সে এ বাড়িতে ছুটে আসে। তবে রোজ যে অভিলাশাই আসে এটাও ঠিক নয়। মাঝেমধ্যে অচিন্ত্যও অভিলাশাদের বাড়িতে ছুটে যায়। আর সেটা নেহাতই কোন কারণে অভিলাশা কে একদিন না দেখতে পেলেই। সেই ছোটবেলা থেকেই ওরা একসাথে বড় হয়েছে। আর তাছাড়া বাড়ির বড়দের আনাগোনার পাশাপাশি এদের মেলামেশাকেও কেউ অস্বাভাবিক ভাবে নেয় নি। রোজ বিকেল টা ওরা দুজনে গল্প করে কাটিয়ে দিতো। আজ যেন সময়টা আর কাটতে চাইছে না। অচিন্ত্য বারবার ঘড়ির দিকে তাকায় আর সময় গুনে-একটা ত্রিশ, একটা পঁয়ত্রিশ, একটা পঁয়তাল্লিশ, একটা পঞ্চাশ- এমন ভাবে দুইটা ত্রিশ অবধি আরো কয়েকবার ঘড়ি দেখতে দেখতেই কখন যেন একটু তন্দ্রাভাব চলে আসে।
অ্যাই, ঘুমিয়ে গেছো? অভিলাশার মৃদু স্বরেই অচিন্ত্য সদ্য আগত ভাতঘুম কে দূরে ঠেলে দিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে। অভিলাশা কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই অচিন্ত্য এক টানে তাকে তার বুকে টেনে নেয়। মুহুর্মুহু তার চিবুক, গলা, কপালে আদর করতে থাকে। এর জন্য অভিলাশা প্রস্তুত ছিল না। কোনরকমে অচিন্ত্যর হাতটা ছাড়িয়ে সে উঠে দাঁড়ায়। কোনো কথা না বলে পরনের কাপড় টাকে ঠিক করে নিয়ে সে অচিন্ত্যর ঘর থেকে সেই যে বেরিয়ে আসে গত কিছুদিন ধরে সে আর ওই মুখো হয়নি। সেই থেকে অচিন্ত্যও এই ঘরে অনেকটা বন্দী জীবন যাপন করছে। ক্ষনিকের উত্তেজনায় সে যে কাজটা করেছে তার জন্য সে নিজেকে আজও ক্ষমা করতে পারছে না।


টিঙ্কু রঞ্জন দাস
ত্রিপুরা
২৬শে আগস্ট ২০২০

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.