বর্ষা পড়ে আছে। নিথর অবসন্ন দেহ। ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।
পূবাকাশে ক্ষীণ লাল আভা। গাছ গুলি নিশ্চুপ। দু- একটা পাখি চেনা সুরে ডাকছে। চলার শক্তি নেই বর্ষার। ক্ষোভ আর তীব্র ঘৃণা, তাকে ধ্বংস করছে থেকে থেকে। কখন সেই নর পিচাশরা তাকে ফেলে গেছে, সে বলতে পারছে না।পাঁচ থেকে ছয় জন ছিলো ওরা। ওদের শরীরে কি জোড়! জানোয়ার এক একটা! স্বামীর মুখটা মনে পড়তেই চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো। এই শান্ত পবিত্র লোকটা কি সব শুনে মেনে নিতে পারবে তাকে! পারবে আগের মতো তাকে গভীর ভালোবাসায় বুকে জড়িয়ে নিতে? বর্ষা ধীরে ধীরে উঠতে চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যার্থ হয়। হঠাৎ খেয়াল হয় সে সম্পূর্ণ নগ্ন। চমকে উঠে - আমি যাব কি করে!
উঠতে চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। চারদিকে দেখে। কাছেই পড়ে আছে সায়াটা, একটু দূরে গাছে ঝুলে আছে শাড়িটা।
বর্ষা ভীষণ ক্লান্ত । শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝরছে, নখের আঁচড় আর দাঁতের কামড়ের। অসহ্য যন্ত্রণা আর রাগে মনে হচ্ছে কি যেন একটা ধ্বংস করতে। কিন্তু কি করবে সে? ঐসব দস্যুদের ! কাউকেই যে চিনতে পারেনি সে।
তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। বর্ষা মেয়েকে স্যারের বাড়ি থেকে আনতে যাচ্ছে। আটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ একটা আটো আসতেই বর্ষা উঠে বসলো। অটোতে ড্রাইভার ছাড়া আরো দুইজন ছেলে। আটোটা হঠাৎ মোড় নিতেই বর্ষা চেঁচিয়ে উঠলো - আরে এই দিকে কোথায় যাচ্ছেন?
- ঐ দিকে যাওয়া যাবে না, জ্যাম আছে । আপনি ভাববেন না, আমি ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবো।
আরো কিছু দূর গিয়ে মনে হল - এ কোন রাস্তা! বাইরে মুখ বের করে দেখে ,পেছনে আর একটা আটো। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা! বর্ষার কেমন ভয় করে. বলে - আমাকে এখানে নামিয়ে দিন , আমি নামবো। ততক্ষণে পাশের দুইজন ওকে জোড় করে মুখে রুমাল চাপা দেয়, আর কিছু বলতে পারে না সে।
এটা কোন জায়গা? এখন কত রাত? আমার মোবাইল কোথায়? কি করে বাড়ি যাবো আমি? মেয়েটা কি এখন ও আমার জন্য অপেক্ষা করছে? ওর বাবা কোথায়? এসব ভাবতে ভাবতে বর্ষা ক্লান্ত। হঠাৎ একটা মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে! বর্ষা তাকায় সেই দিকে। কোনো রকমে উঠে সায়া, শাড়ি পরে মোবাইল টা কুড়িয়ে নেয় - এটা কার মোবাইল? নিশ্চয়ই শয়তানডির হবে।
বর্ষা স্বামীর নম্বর ধরে -- হ্যালো কে? হ্যালো কে? বর্ষা তুমি কোথায়? সন্ধ্যা থেকে তোমাকে খুঁজছি! তুমি কাঁদছ কেন? কোথায় তুমি?
বর্ষা হাউমাউ চিৎকার করে উঠে। কিচ্ছু বলতে পারছে না। বহু কষ্টে সে সংক্ষেপে কিছু বলে। সব শুনে তার স্বামী একেবারে চুপ। বর্ষা বারবার বলছে - কি হলো? তুমি কথা বলছো না কেন? কি হলো?
স্বামী দৃঢ় কন্ঠে বলল - তুমি অপেক্ষা করো আমি আসছি।
- গণেশ দেবরায়, ত্রিপুরা
১লা আগস্ট ২০২১
বাহ চমৎকার
উত্তরমুছুন