সোমবার সকাল।
হাতে আমার জলের গ্লাস, সাতটা বাজে হয়তো,একজন হাঁক দিলো।ফুল, বেলপাতা, মালা, আমপাতা... রাখবেন।
বাইরে গিয়ে দেখি বৃদ্ধ কাকীমা টি ফুল বেলপাতা নিয়ে আসেন বাড়ীতে গলি দিয়ে হাঁক দিয়ে যান।
কাকীমা ভালো বেলপাতা হবে জিজ্ঞেস করলাম।আজ ফুল বেলপাতা সবই আমার লাগবে,কাল বাজারে যাওয়া হয় নি।আজ সোমবার শিব পূজা করি নীল ফুল থাকলে অন্য সব কিছুর সাথে দিয়ে যাও দুটো ।
ফুল বেলপাতা কিনতে গিয়ে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো কাকীমা কেমন আছো গো?
কাকীমার চোখে জল, ছেলে তার ইঞ্জিনিয়ার দূরে চাকরি করে, এই বৃদ্ধ মহিলাটির রক্ত জল করা শ্রমের ফসল।এখন সেই ছেলে বউ নিয়ে দূরে থাকে মায়ের খাবর ও নেয় না টাকাও পাঠায় না।
আজ চোখের জল ফেলে বললো...
মানুষ বলে তোমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার,
অথচ আমার যে পেটে খিদের জ্বালা।
ভাত জুটেনা ঠিক ভাবে।বয়স হয়েছে আমার সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতে পারি না। গাছ থেকে বেলপাতা আমপাতা পাড়তে ও কষ্ট হয় এখন।মাথায় কাঠফাটা রোদ আর খিদের জ্বালা। বুক ফেটে যায় মনের কষ্টে।
বড় মানুষ করেছি ছেলেকে আজ আর মাকেই সে মানুষ ভাবে না।
ফুল বেলপাতার মূল্যের চেয়ে বেশি কিছুটা দিয়ে বললাম-
আশীর্বাদ করো কাকীমা আমায়, আমারও একটি ছেলে আছে সে বড় মানুষ না হয়ে, মানুষ শুধু যেন হয়।
ছোখের জল ফেলে আশীর্বাদ করলো কাকীমা তোমার ছেলে মানুষের মত মানুষ হোক মা।
চোখ মুছতে মুছতে আর-ও বললো -
আমার ছেলে ভালো থাকোক, আমার বয়স হয়েছে আমি আর কয়দিন।
পেটের ক্ষিদে নিয়ে, বুকে পাথর রেখে, চোখের জল ফেলে, অনেক কষ্টের মাঝে ও মা সন্তান ভালো থাকোক সেই আশাই করে।
বৃদ্ধ কাকীমার কথায় আমিও চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। শুধু ভাবলাম মাতৃস্নেহ হয়তো এমনি হয়।
- মনচলি চক্রবর্তী
১৩ই নভেম্বর ২০২১