আরশি কথা

আরশি কথা

No results found
    Breaking News

    "লজ্জা পাইনা গর্বিত হই" ঃ রীতা আক্তার, ঢাকা

    আরশি কথা

    "লজ্জা পাইনা গর্বিত হই"
     

    আইজ ২১ তারিখ। 

    এই তারিখটা আইলে বুকের ভেতরখান মোচড় দিয়া উঠে। 

    কেন আহে প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারীর ২১ তারিখ?

    কেন আহে? 

    এই তারিখ টা আইলেই আমার ১৯৫২ সালের কথা মনে পইড়া যায়। 

    উফ!  কি বিভৎস!  কি বিভৎস সেই দিন।


    আপনারা ভাবতাছেন কেন আমি এই দিন টারে মনে করবার চাইনা?


    কেন জানেন?

    এই দিনেই তো আমার ছোট ভাইডা গুলি খাইয়া মরছিলো। 

    আমার আইজও মনে পড়ে সেই দিনের কথা.... 

    বিয়ান ( সকাল) বেলায় চাইট্টা ভাত মুখে দিয়া 

    পোস্টার লেখতেছিলো। 

    আমি জিগাইলাম -

    কি রে কি লেখস? 

    ভাইডা কোনো কথা কইলো না, শুধু হাসলো। 

    ওর চোখের চাউনি তে কেমন একখান তেজ আমি দেখতে পাইছি সেই দিন।


    আপন মনে পোস্টারে লেখতেছিলো 

    " রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই "

    " আমার ভাষা 

       তোমার ভাষা 

    বাংলা ভাষা, বাংলা ভাষা" 

    আমি জিগাইলাম -

    ভাই! 

    এই পোস্টার দিয়া কি অইবো? 

    ভাই কইলো -

    বুবুরে, ঐ পশ্চিম পাকিস্হানীরা নাকি আমাগো ভাষা ছিনায় নিবো, 

    আমাগো নাকি বাংলায় কথা কইতে দিবো না। 

    তাই কি হয়?  

    আমি রক্ষা করমু আমার বাংলা ভাষারে। 

    জীবন থাকতে বাংলা রে কেউ কাইড়া নিতে পারবো না। 

    কেউ পারবো না......।

    এই কইয়া তুফানের মতো ঘর থেইক্যা বাইর হইয়া গেলো। 

    যাওনের সময় কইয়া গেলো -

    আমি আমার বাংলা ভাষারে রক্ষা করতে যাই রে বুবু, 

    রক্ষা করতে যাই......।


    বিয়ান গড়াইয়া দুপুর যায়। 

    পথের দিকে তাকায় ছিলাম কহোন আইবো আমার কইল্জ্যার টুকরা ভাই। 

    রেডিও তে শুনতেছিলাম পুলিশে নাকি ১৪৪ ধারা জারি করছে।

    কোনো মিটিং, মিছিল অইবো না। 

    ভাই যে আমার পোস্টার লইয়া ছুইট্টা গেলো.... 


    মনের মইধ্যে কু ডাকে 

    ভয়ে কইলজ্যার মধ্যে পানি শুকায় যায়। 

    পথের পানে চাইয়া থাকতে থাকতে দেখি, 

    কেউ একজন আমার ভাইরে কোলে কইরা আনতেছে। 


    কি দেখলাম! 

    আমার ছোট্ট ভাইয়ার বুক ঝাররা কইয়া গুলি ছুড়ছে। 

    আমার যে শহিদ হইছে বাংলা ভাষার জন্য।

    আকাশ বাতাস ভারি হইয়া আইছিলো সেই দিন। 

    চিৎকার কইরা কানতে পারিনাই। 

    কষ্ট পাইছি তয় তারচেয়েও বেশি গর্ব হয় আমার। 

    আমি শহিদের বোন। 


    আমি বাপু অতো পড়ালেহা করিনাই। 

    তাই শিক্ষিত মাইষ্যেগো লাহান শুদ্ধ কইয়া কথা কইতে পারিনা। 


    রাস্তা ঘাটে, হাটে বাজারে বের হইলে এই 

    গেরাইম্যা ভাষায়ই কথা কই। 

    আমার কথা শুনলে শিক্ষিত মাইনষ্যে মুখ টিপ্পা হাসে।

    আমি এতে কষ্ট পাইনা। 

    মনে মনে কই -

    তুমরা এই ভাষার মূল্য কি বুঝবা?

    যেই ভাইয়ের বুকের তাজা রক্তে আমার বাংলার পথ রঙিন হইছে। 

    যেই ভাইগো কারনে পাইছি বাংলা ভাষা। 

    এই গেরাইম্যা বাংলাই আমার অহংকার।

    এই বাংলাই আমার গর্ব। 

    এই বাংলাতেই আমি প্রাণ ফিরা পাই।


    লজ্জা তো তোমাগো হওয়ার কথা, 

    যারা বাংলারে " বাংলিশ" কইরা কথা কও। 

    তোমরা কি জানো তহোন আমি ঐ বাংলিশ শুইন্যা হাসি।

    আর ধিক দেই তোমাগো, যারা বাংলাডাও ভালা কইরা কইতে পারো না। 

    আমি তাই গর্ব কইরা কইতে পারি -

    " বাংলা আমার ভাষা,লাখো বাঙালীর প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত ভাষা।

    বাংলা ভাষা.....


    - রীতা আক্তার, ঢাকা 


    ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২


    3/related/default