একুশ মানেই ভাষার রমন; ভাষা শহীদদের স্মরণে কায়মনো শ্রদ্ধাঞ্জাপন,
একুশ মানেই প্রাণের প্রথম স্পন্দন; মা... মা... ডাকে মা'য়ের চিত্ত হরণ।
বলতে নেই সেই আবেগের কথা; শুনতেও নেই মন খারাপের আবোল তাবোল হযবরল সে ধোঁয়াশা,
কালের নিয়মে শিখতেই হবে ইংরেজি; আর সেই ফাঁদেই দুর্বল নিঃশ্বাস নিয়ে আমার বাংলাভাষা।
আমার ভাষা আমার ভাষা বাংলা মায়ের স্নেহমাখা মিষ্টি মধুর ভালোবাসা,
যে ভাষায় গর্বে ভরা উদম যৌবন; সেই ভাষাই আমার মান-অভিমান আমার মাতৃভাষা।
দিকদিগন্তে উড়ছে কেতন ব্যানার ফেস্টুন যেথায় যখন-- চেয়ে দেখি ফুটছে সেথায় ইংরেজিরই বোল,
মা'য়ের ভাষা বাংলা ভাষা -- ছোঁয় না যেন আর আগের মতো বাংলা মায়ের যতন কোল।
যে ভাষাতে রবি'র গানে বিশ্ব আলো; সেই ভাষাতেই বিশ্ববাসী -- মানিক রতন নিচ্ছে যেন রাশিরাশি,
সেই ভাষাতেই অধুনা বাংলার কোলে চলে না কেন আগের মতো তোমার আমার আপন মসি।
প্রশ্ন অনেক তাড়া করে দগ্ধ সুরে অরুণ বরুণ বাজায় মনে -- দুঃখভরা করুণ বাঁশি,
যে তারে বাঁধা তানপুরা; যে সুরে মধুপ গুঞ্জন -- কোন মোহে মেঘ ঢাকে তার পূর্ণিমার অনুপম শশী।
জরিপ করা মনে প্রশ্নগুলো তাই হাঁটতে থাকে আবেশিত সেই আবেগ জড়ানো পথে,
সসীম ভাব-তরঙ্গে জেগে ওঠে বিষাদ-সিন্ধু; সেই ঢেউয়েরই -- কোলাজের সাথে সাথে।
জীবিকা চাই ; সুখ চাই; চাই প্রাসাদ সম বাড়ি; চাই বিশ্বের দরবারে সুউঁচ্চ যেন হয় ঠাঁই,
সুরভিত ছন্দের সেই প্রশান্তির আলো তেমনটি করে বাংলাভাষায় যেন আর নাই।
জ্বালাতে হবে জীবন-প্রদীপ;ধরতে হবে হাল--যুগের সাথে এই প্রজন্ম দিচ্ছে তাই ইংরেজিকেই সম্মান,
শিশুতোষ আকাশে অভিমানী বাংলাভাষা তাইতো দিনদিন -- হারাচ্ছে তার সৌরভ মণ্ডিত মান।
তাই একটু একটু করেই অস্তিত্ব হারিয়ে চলেছে বাংলাভাষা অন্ধকারের সেই ছাউনিতে,
যেন অচিরেই দোল খাবে সে চিলেকোঠায় আশ্রিত নিস্প্রভ আলোর দোলনাতে।
- মৃণালকান্তি পণ্ডিত, ত্রিপুরা
২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২