জাতের বড়াই
(ইন্দ্র মেঘবালের স্মৃতিতে)
******
প্রচন্ড তেষ্টায় সইতে না পেরে
কাউকে কিছু না বলে
জলের ঘড়াটায় হাত দিয়ে ফেলেছিলাম
কিন্তু তুমি সেটা বুঝলে না স্যার
আমি কিছু বলার আগেই
তোমার চড়, থাপ্পড়, কিল, ঘুসি
পড়তে থাকে আমার যত্রতত্র
আমার চোখ, কান থেকে রক্ত ঝরতে থাকে অবিরত
আমার বুক ফাটা আর্তনাদ
তোমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারেনি স্যার
হ্যাঁ, আমি ছোট জাত, হরিজন, অস্পৃশ্য
কিন্তু এই ৯ বছর বয়সে
এই জাতপাত, ধর্ম বর্ণের আমি কতোটা বুঝি
সেই বোধটা তো তোমার মধ্যে জাগ্রত হয়নি স্যার
তুমি উচ্চ বর্ণের, তাই বলে আমরা কি মানুষ নই
আমাদের কি তেষ্টা পেতে নেই
তোমাদের ক্ষুধা লাগে
হরিজন বলে আমাদের কী পেট নেই
তোমরাই শুধু পড়াশোনা করবে
স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও কি
আমরা স্কুলে যেতে পারবো না
আমাদের বুঝি শিক্ষার দরকার নেই স্যার?
আমরা শিক্ষিত হয়ে গেলে বুঝি
তোমরা আর ছড়ি ঘোরাতে পারবে না
এই ভয় তোমাদেরকে কুঁকড়ে খায়
আমরা যদি প্রতিবাদ করতে জেনে যাই
তোমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে
এই আতঙ্কে তোমরা আতঙ্কিত হও
জানি স্যার জানি,
তোমার কিল থাপ্পর চড় ঘুসি
আর মুখে অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনে বুঝতে পেরেছি
আমাদেরকে তোমরা দাসত্বের শৃঙ্খলেই রাখতে চাও
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গেছি
আর তোমরা এখনো ব্রাহ্মণশূদ্রের প্রাচীর গড়ে রেখেছো
অথচ একবারও কি ভেবেছো
শূদ্ররা যদি তোমাদের সেবা না করে
তোমাদের অবস্থা কী হবে
হরিজনরা যদি ময়লাগুলো ঝাড়ু না দিয়ে ফেলে রাখে
তবে সমাজের কি হবে
যাদের মাথায় তোমরা কাঁঠাল ভাঙছো স্যার
তারা যদি একবার বিদ্রোহ করে
তোমাদের জাতের বড়াই কোথায় উড়ে যাবে
স্যার আমাকে তুমি মেরেছো
এমনকি আমার প্রাণটাও তুমি ছিনিয়ে নিয়েছো
আজ হয়তো আমার জন্মটা মৃত্যুর জন্যই হয়েছিল
কিন্তু জেনে রাখো স্যার
এমন দিন একদিন আসবে, হ্যাঁ আসবেই
যেদিন আমার মৃত্যুই হবে তোমাদের ধ্বংসের কারণ
আমার মৃত্যুই হয়তো জাগিয়ে দেবে আমার স্বজাতিকে
যা আমি এতদিন বুঝিনি
আজ ঠিক বুঝে গেছি
জাত পাত ধর্ম বর্ণের ভেদই হবে এই সমাজের ধ্বংসের কারণ
আর তুমি আমি হবো সেই ধ্বংসের প্রতীক।
- টিঙ্কু রঞ্জন দাস,ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
২০শে আগস্ট,২০২২