দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করেন। গ্রামকে সার্বিকভাবে শক্তিশালী না করলে দেশ বা রাজ্যকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবেনা। তাই গ্রামীণ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্য এবং গ্রামীণ জনগণের জীবিকার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বুধবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন আয়োজিত পঞ্চায়েতীরাজ ও স্বসহায়ক দলের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্র দূরীকরণ পরিকল্পনা শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মহিলাদের আর্থ সামাজিক মানোন্নয়নে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। রাজ্যের মহিলাদের স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে রাজ্যে ৩৭ হাজার ৭৩৫টি স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। তাতে গ্রামীণ এলাকার ৩ লক্ষ ৪১ হাজার লোক যুক্ত রয়েছেন। স্বসহায়ক দলগুলিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ১,৬৬৮টি গ্রাম সংগঠন (ভিলেজ অর্গানাইজেশন) এবং ৪১টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বসহায়ক দলের উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ভিলমার্ট ত্রিপুরা নামে একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মও চালু করেছে। গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক মানোন্নয়নে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আরও ১১ হাজার স্বসহায়ক দল গঠন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই স্বসহায়ক দলগুলিতে গ্রামীণ এলাকার ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষকে যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ত্রিপুরা রুরাল লিভলিহুড মিশন কাজ করছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থিক ও সামাজিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে স্বসহায়ক দলগুলিকে দীনদয়াল উপাধ্যায় জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের মাধ্যমে নানাভাবে আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে। স্বসহায়ক দলগুলিকে এখন পর্যন্ত কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডে প্রায় ৩০২ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৪৭৩ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়েছে। স্বসহায়ক দলগুলি যাতে সহজেই ঋণ পেতে পারে সেজন্য ঋণ প্রদান প্রক্রিয়াকে সরলীকরণও করা হয়েছে।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, গ্রামীণ এলাকার মা বোনেদের আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে রাজ্যে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করে যাচ্ছে। আর মহিলা পরিচালিত স্বসহায়কদলগুলির হল আত্মনির্ভরতার আন্দোলনের প্রতীক।
বিগত সরকারের সময় রাজ্যে মাত্র ৪ হাজারের মতো স্বসহায়ক দল ছিল। বর্তমান সরকারে সাড়ে ৪ বছরের সময়কালের মধ্যে রাজ্যে প্রায় ৩৮ হাজারের মতো স্বসহায়ক দল গঠিত হয়েছে। উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামের উন্নয়ন করতে হলে গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা প্রয়োজন। রাজ্য সরকার সেই দিশায় কাজ করছে। রাজ্য সরকার শুধু স্বসহায়ক দল গঠন করছেনা সেই স্বসহায়ক দলগুলিকে আর্থিকভাবে স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যেও কাজ করছে। স্বসহায়ক দলগুলির উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাও রাজ্য সরকার করে দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা সরকার দেব, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব এল এইচ ডার্নং এবং বিশেষ সচিব ডা. সন্দীপ আর রাঠোর। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আয়োজিত মেগা ঋণ প্রদান শিবিরের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বসহায়ক দলগুলিকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ২৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকার ঋণের মঞ্জুরিপত্র প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনার মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবক-যুবতীদের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থাতে কাজ করার জন্য জব লেটার প্রদান করা হয়। তাদের হাতে মঞ্জুরিপত্রগুলি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা সহ অন্যান্য অতিথিরা।
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ
৩১শে আগস্ট, ২০২২