Type Here to Get Search Results !

বিধানসভার আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে : মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ত্রিপুরা

নিজস্ব প্রতিনিধি,আগরতলা,আরশিকথাঃ


ত্রিপুরা বিধানসভার আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশের প্রায় সব অংশের মতো সবার সক্রিয় অংশগ্রহণে এই নির্বাচনকে আক্ষরিক অর্থেই উৎসবের মেজাজে করার জন্য নির্বাচন কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দু'দিনের রাজ্য সফরের শেষলগ্নে বৃহস্পতিবার সকালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার একথা বলেন। নির্ভয়ে ভোটারদের সবাইকে ভোটদানের মাধ্যমে তাদের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, সবাই যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ রাজ্য সফরে এসে সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট সম্পন্ন করার লক্ষ্যে গতকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের অভিমত সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেছেন। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে যাতে নির্বাচন পরিচালনা করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অবাধ ও হিংসামুক্ত নির্বাচন সম্পন্ন করার কমিশনের যে প্রয়াস তা যাতে শুধু কথাতেই সীমাবদ্ধ না থাকে তা সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যোগ্য কোনও ভোটার যাতে ভোটার তালিকা থেকে বাদ না যান সেজন্য ভোটার তালিকা তৈরির প্রতিটি পদক্ষেপে রাজনৈতিক দলগুলির অভিমত জানতে চাওয়া হয়েছিল। ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর এর কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ১৭ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য যাতে আগাম আবেদন জানানো যায় তার ব্যবস্থাও এবার রাখা হয়েছে। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে ১৭ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যবর্তী সময়কার ৭৯১৫ জন এবার এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য অগ্রিম আবেদন জানিয়েছেন।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, মহিলা দিব্যাঙ্গজনদের এবং বিবাহিত মহিলাদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ৬০টি এমন ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থাকছে যেগুলি শুধু মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হবে। এছাড়া দিব্যাঙ্গজনদের দ্বারা পরিচালিত ১০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্ৰ থাকবে। মহিলা ও দিব্যাঙ্গজনদের ক্ষমতায়নের স্বীকৃতি এবং তাদের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কমিশনের এই উদ্যোগে উৎসাহিত হয়ে মহিলা ও দিব্যাঙ্গজনরা খুব বেশি সংখ্যায় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, গণতন্ত্রের এই উৎসবের মহান ঐতিহ্যকে আরও উঁচুতে তুলে ধরার লক্ষ্যে কমিশন ভোটারদের সুবিধার জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নানাবিধ ব্যবস্থা রাখবে। তিনি জানান, দিব্যাঙ্গজন এবং ৮০ বছরের উর্ধে ভোটারগণ ইচ্ছে করলে তাদের বাড়িতে বসেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। এজন্য তাদের ফর্ম- ২০ পূরণ করতে হবে। যারা এই ফর্ম পূরণ করবেন তাদের বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদল পৌঁছে যাবেন এবং তাদের ভোট নেবেন। তাদের এই ভোট সম্পূর্ণ গোপন থাকবে বলে উল্লেখ করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিওগ্রাফি করা হবে এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির পোলিং এজেন্টরাও এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন। তিনি জানান, এই সুবিধার পাশাপাশি দিব্যাঙ্গজনরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সুবিধার জন্য ইচ্ছে করলে সক্ষম অ্যাপ রেজিস্ট্রেশন করেও কিছু সুযোগ সুবিধা নিতে পারবেন। যেমন তাদের জন্য ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক, হুইলচেয়ার ইত্যাদির সুবিধা দেওয়া হবে। র‍্যাম্পের সুবিধা থাকার পাশাপাশি সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে টয়লেট, পানীয়জল, বিদ্যুৎ, হুইলচেয়ার ইত্যাদির সুবিধা থাকবে বলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন। তিনি জানান, দেশের অন্য উৎসবগুলির মতো গণতন্ত্রের ওই মহান প্রক্রিয়াকে উৎসবে রূপদান করার জন্য নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ সমগ্র দেশেই সমাদৃত হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গুজরাট বিধানসভার নির্বাচনে শুধুমাত্র একজনের ভোট নেওয়ার জন্য ১৫ জন ভোটকর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বলেন, কোনও ভোটার যদি মনে করেন সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নেই তবে তিনি সি ভিজিল অ্যাপ্লিকেশনের সুবিধা প্রয়োগ করতে পারবেন। এই অ্যাপ্লিকেশনে সমস্যার কথা উল্লেখ করে তা কমিশনের কাছে পাঠালে খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেক্টর ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্যুইক রেসপন্স টিম খুব সহসা সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছে যাবেন। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানিয়েছেন। শ্রী কুমার জানান, কেওয়াইসি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সম্পর্কে সব তথ্য জানা যাবে। তিনি জানান, নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত আধাসামরিক বাহিনীকে যাতে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় সেই লক্ষ্যে বাহিনীর সব তথ্য নির্বাচনের সময় নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের সামনে তুলে ধরতে হবে। পর্যবেক্ষকগণ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি যাতে সমান দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া হয় তা সুনিশ্চিত করতে বৈঠকে আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সিআরপিএফ মোতায়েন থাকবে। সমস্ত চেকপোস্ট, স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে পুলিশ, কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। ড্রাগ, অবৈধ লেনদেন, মাদক পাচারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির প্রতি কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, ব্যাঙ্কের কোনও অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক হারে লেনদেন হচ্ছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েনের ক্ষেত্রে যেমন পর্যবেক্ষকদের সামিল করা হচ্ছে তেমনি বিভিন্ন দলের প্রার্থী, পোলিং এজেন্টদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য জেলাশাসক, পুলিশ সুপারদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন সম্পর্কিত কোনও অভিযোগ থাকলে যে কেউ মহকুমা শাসক স্তরে অভিযোগ জানাতে পারবেন। এছাড়া সি ভিজিলে দায়েরকৃত অভিযোগও খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই ওয়েবকাস্টিং করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। সব কেন্দ্রে এই সুবিধার ব্যবস্থা করা না গেলেও অন্ততপক্ষে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যাতে ওয়েবকাস্টিংয়ের সুবিধা থাকে তা সুনিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, যেখানে ওয়েসব কাস্টিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে না সেই সমস্ত ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই একজন করে মাইক্রো অবজারভার থাকবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারিদের মধ্য থেকে মাইক্রো অবজারভার বেছে নেওয়া হবে। তিনি জানান, যে সমস্ত জায়গায় ইভিএমগুলি স্টোর করা থাকবে সেখানে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ওই এলাকার ভিডিওগ্রাফি করা হবে। তিনি বলেন, অধিক রাতে কোনও সভা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযান যাতে না করা যায় তা সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এমসিএমসি কমিটির অনুমোদনের পর কোনও বিজ্ঞাপন প্রচার মাধ্যমে দেওয়া যাবে। সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার অনুপ চন্দ্র পান্ডে, নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল, সিনিয়র ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার ধর্মেন্দ্র শর্মা, সিনিয়র ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার নিতেশ ব্যাস, ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার মনোজ সাহু, ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার হৃদেশ কুমার, ডিরেক্টর জেনারেল এস বি শারণ এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কিরণ গিত্যে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ


ছবিঃ সুমিত কুমার সিংহ

১২ জানুয়ারি ২০২৩
 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.