অটোতে বসে এক সাথেই সবাই খেলেন।
বৃদ্ধ নেমে বললেন, ঠিক আছে চলো,আমার বাড়িটায় চলো।একটু চা খেয়ে যাবে। ঘরের দরজায় দাড়িয়ে কলিং বেলটা টিপতেই আয়া এসে দরজাটা খুলে দিলো। পাড়ার কিছু লোকও উনার ঘরে ছিলো।অনেক দিনের পুরনো সাধারণ ঘর।
পাড়ার সবাই গোকুল বাবুকে দেখে বলল, আপনাকে আমরা খোঁজ করে এসেছি সব জায়গায়। সেই বিকেল থেকে সব জায়গায় খুঁজে এসেছি।কোথাও পাইনি, ফোনটাও রেখে গেছেন বাড়িতে।মাসীম কে একটু দেখে আমরা থানায় যাবো ভাবছিলাম ।আর কিছু মাথায় আসছিলো না।
বৃদ্ধ গোকুল বাবু বললেন, ফোনটা নিতে ভুলে গেছি।রাস্তায় খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম ওরা আমায় হাসপাতালে নিয়ে যায়। নিজেদের টাকা খরচ করে চিকিৎসা করে।আমি সুস্থ হয়ে ওঠায় বাড়িতে পৌঁছে দিতে এসেছে। একা ছাড়ে নি।টাকা দিতেও দিল না মেডিসিনের। সবকিছু শুনে,মা মেয়ের বিবেক আর মানবিকতা পাড়ার লোকেদের অবাক করলো।
বৃদ্ধ লোকটি মা মেয়ে দুজনকে একটি বিছানার সামনে নিয়ে গিয়ে উনার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখালেন।উনার স্ত্রী অসুস্থ বিছানায় আছেন দুবছর হবে।কথাও বলতে পারেন না, চলতেও পারেন না।আয়া আর উনি নিজেই দেখাশুনা করেন। পাড়ার লোকেরা আসেন। মাঝে মাঝে এসে উনাদের খবর নেন।
নিকট আত্মীয়, বন্ধু কেউ খুব একটা আসেন না। বৃদ্ধ লোকটি, উনার স্ত্রী আর আয়াই এই বাড়িটিতে থাকেন। উনার একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকে, বড় চাকুরি করে। খুব ব্যস্ত থাকে। ফোন করে মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর নেয়, ইচ্ছে হলে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পাঠায়।
বৃদ্ধ গোকুলবাবুর পেনশনে কোনওরকম দিন কাটছে। আজ একটা বিমার কিছু টাকা পাবেন বলে বিমা অফিসে গিয়েছিলেন। এসব কিছু দেখে, শুনে মা মেয়ের মনে খুব কষ্ট হলো। বৃদ্ধ বয়সে কি পরিণতি উনাদের।
আজ বৃদ্ধ লোকটির যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে উনার অসুস্থ স্ত্রীকে কে দেখতো?
চোখে জল ধরে রাখা সম্ভব হলো না মা মেয়ে দু’জনেরই। মেয়েটি বৃদ্ধ লোকটির পাশে গিয়ে বললো দাদু আমার তো দাদু নেই। তুমি আমায় নাতনি ভেবে কাছে টেনে নিতে পারবে না?
বৃদ্ধ মেয়েটিকে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত রেখে বলেন তুমি আমার শুধু নাতনি নও, তুমি আমার পরমাত্মীয় । কথা বলতে বলতে বৃদ্ধ গোকুলবাবু কেঁদে ফেললেন।উনাকে দেখে পাড়ার লোকেরা বলে উঠলো মেসোমসাই চোখের জল মুছে ফেলুন। আর চিন্তা নেই পরমাত্মীয়দেরকে পেয়ে এখন আপনি ভালই থাকবেন।
মা মেয়ে বৃদ্ধকে সবসময় পাশে আছি বলে আশ্বস্ত করলো। কিছু সময় সেখানে কাটিয়ে গোকুলবাবুর বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন মা মেয়ে দু’জনেই।
- মনচলি চক্রবর্তী, আগরতলা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৩