ভিকি খুনের দায়ে গ্রেপ্তারকৃত প্রদ্যুৎ এবং সুস্মিতার ফের চার দিনের পুলিশ রিমান্ড, অপরদিকে রাজ্যে আনা হলো শনিবারে শুটার আকাশ করকে। শনিবারেই তাকে পেশ করা হলো কোর্টে।
ভারতরত্ন ক্লাব সম্পাদক হত্যাকান্ডে ঝাড়খন্ড থেকে ধৃত আকাশ করকে শনিবার রাজ্যে আনা হয়েছে। তাকে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রেখে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি পুলিশ মেডিকেল পরীক্ষা করতে জিবি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে মেডিকেল পরীক্ষা শেষে আকাশ করকে পুলিশ রিমান্ড চেয়ে তোলা হলো কোর্টে। এদিকে আবার,ঊষা বাজার গুলি কাণ্ডে প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী এবং সুস্মিতা সরকারকে তিন দিন পুলিশ রিমান্ড শেষে আবারও কোর্টে তোলা হয় শুক্রবার। পুলিশ প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরীকে ৬ দিনের এবং সুস্মিতা সরকারকে ৮ দিনের পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে। আদালত থেকে দুজনকেই ফের চার দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত,ভারত রত্ন সংঘের সম্পাদক দূর্গা প্রসন্ন দেব হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে রাজধানী ও এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ, প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী, সুস্মিতা সরকার সহ তার মা উমা সরকার এবং বোন প্রতিমা সরকারকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারিনি তদন্তকারী পুলিশ এমনটাই সূত্রের খবর।অপরদিকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বীরচক্র ঘোষ, আগরতলা থেকে মূল অভিযুক্ত রাজু বর্মনের এক নিকট আত্মীয় সানি সাহা রায় এবং ঝাড়খন্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আকাশ করকে। তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই পুলিশের দাবি আকাশ করই গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল দুর্গা প্রসন্ন অর্থাৎ ভিকিকে দেবকে। সিসি টিভির ফুটেজে নাকি আকাশ করের অস্পষ্ট ছবি ধরা পড়েছে। আর এতেই পুলিশ নিশ্চিত হয়ে গেছে সে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ভিকিকে। এদিকে আবার তিন দিন আগে তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা অভিযুক্ত প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী, সুস্মিতা সরকার, এবং বীর চক্র ঘোষকে আরো দশ দিনের রিমান্ডের দাবি জানিয়ে ছিলো আদালতে। কিন্তু মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক সব কিছু বিচার বিবেচনা করে প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী ও সুস্মিতা সরকারের তিন দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন,এবং বীরচক্র ঘোষকে সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে থাকার নির্দেশ দেন।আদালতে শুক্রবার তিন দিন রিমান্ড শেষে পুলিশের তরফ থেকে প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী এবং সুস্মিতা সরকারকে আদালতে পেশ করা হলে, পুলিশের আবেদন মূলে তাদের দুজনকে চার দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছেন বিচারক। কিন্তু এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে হাজারো প্রশ্ন। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী অর্থাৎ ভারতরত্ন ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতির সাথে এই হত্যা মামলার কোন সম্পর্ক নেই। যেহেতু তিনি ভারতরত্ন সংঘের প্রাক্তন সভাপতি তাই ক্লাবে অভিযুক্তদের নিয়মিত আনাগোনা থাকতো বলে তিনি তাদের চিনতেন। ভিকি হত্যা মামলায় প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরীর কোন যোগাযোগ ছিল কিনা সে ব্যাপারে বহু জিজ্ঞাসাবাদের পরও কোন তথ্য বেরিয়ে আসেনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বিভিন্ন তথ্যের উপর বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দূর্গা প্রসন্ন খুনের সঙ্গে অনেকটাই জড়িত গ্র্যান্ডিয়োস চৌমুহনী থেকে বিতাড়িত রাজ্যের অপরাধ জগতের একসময়ের মাফিয়া অমিতাভ ঘোষ ওরফে অমিত। এই মুহূর্তে অমিত ঘোষ সমাজদ্রোহী রাজু বর্মনের উপদেষ্টা এমনটাও খোঁজ খবরে প্রকাশ। ঊষা বাজার অপরাধ জগতে গুঞ্জন, অমিত ঘোষের কলকাতাস্থিত বাগুইহাটি বাড়িতেই দূর্গা প্রসন্ন হত্যা কান্ডের মূল পরিকল্পনা ছকা হয়েছিল। অপরাধ জগতের দীর্ঘ দিনের পাকা খেলোয়াড় অমিত ঘোষের সাজানো প্লটেই ভিকির হত্যাকান্ডকে বাস্তবায়িত করেছে বিমান ,রাজুরা। সূত্রটির দাবি, দূর্গা প্রসন্ন হত্যার পর পর রাজু বিমানরাও আস্তানা গেড়েছে অমিত ঘোষের কলকাতাস্থিত কোন এক গোপন ঠেকেই। কিন্তু তাদের সন্ধানে পুলিশের কোন খোঁজ খবর নেই। অমিত ঘোষের ব্যাপারে অতিরিক্ত কোন খোঁজখবর নেই রাজ্য পুলিশের। সেক্ষেত্রে একটা কথাই প্রযোজ্য, ভিকি খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে মাঠে নেমে পুলিশ বিভিন্ন দিকে ড্রিবল করে বেড়াচ্ছে। যার ফলে, অপরাধ বিশেষজ্ঞ মহলে এখন আলোচনা, ভিকি হত্যা মামলায় পুলিশের তদন্ত কি ঊষাবাজার অপরাধ জগতের কম্পাস অনুযায়ী ঘুরবে? এই প্রশ্ন কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে খোদ ঊষাবাজার অঞ্চলের মানুষজনের মধ্যেই।
আরশিকথা ত্রিপুরা সংবাদ
১১ই মে ২০২৪