আজ বিশ্ব এক অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে। একদিকে, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ ও উন্নত করেছে, অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্রমবর্ধমান সামাজিক বিভাজন মানবসভ্যতাকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আজ আর কোনো কল্পকথা নয়, বরং এক নির্মম বাস্তবতা। দাবানল, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আজ বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এই সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং পরিবেশবান্ধব নীতি গ্রহণ করা জরুরি।
অর্থনৈতিক বৈষম্য আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার ফলে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দারিদ্র্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এই বৈষম্য দূর করতে ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ক্রমবর্ধমান সামাজিক বিভাজন আজ গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। উগ্র জাতীয়তাবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহনশীলতা, সংলাপ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি আমাদের সামনে যেমন অপার সম্ভাবনা খুলে দিয়েছে, তেমনই কিছু নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সাইবার নিরাপত্তা আজ নৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো সচেতন ও সক্রিয় নাগরিক হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালন করা। আমাদের উচিত, পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হওয়া, সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়া।
মনে রাখতে হবে, মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং টেকসই বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করি।
ডাঃ শ্যামোৎপল বিশ্বাস
ত্রিপুরা
ছবিঃ সৌজন্যে ইন্টারনেট
আরশিকথা হাইলাইটস
৩০ মার্চ ২০২৫